শীত শেষ, এসেছে বসন্ত। হতে পারে চিকেন পক্স। এখনই সতর্ক হোন।

কয়েকটা দিন কি অস্বস্তিতে কাটাতে চান? নিশ্চয় না। অস্বস্তিকর দিন কাটানোর প্রত্যাশা কেউ করে না। শীত বিদায় নিবে নিবে করছে। এরই মধ্যে তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে জীবাণুরা।

সাধারণ জ্বর, সর্দিকাশি ছাড়াও এ সময়ে হাম ও বসন্তের প্রকোপ দেখা যায়। বসন্ত ঋতুতে এই রোগের ভাইরাস আমাদের আশপাশে বায়ুতে ঘুরে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেই গ্রাস করে, লাল ফোস্কাযুক্ত একটি অতি-চুলকানিযুক্ত ত্বকের ফুসকুড়ি। বেশ কয়েক দিন ধরে ফোস্কা পপ হয়ে ফুটো হয়ে যেতে থাকে। যার নাম বসন্ত বা চিকেন পক্স।

বসন্তকালে বসন্তরোগ। আগে বসন্তকালে বসন্ত রোগের কারণে সকলেই খুব ভয়ে ভয়ে থাকতেন। অনেক আগের এই রেওয়াজটা এখন অতটা দেখা না গেলেও এখন আবহাওয়া অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। এখন বছরের যে কোনও সময়েই চিকেন পক্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

বসন্তরোগ বা জলবসন্ত বা চিকেনপক্স অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। এটি ভাইরাস বাহিত একটি রোগ। এটি মূলত বাচ্চাদের প্রভাবিত করে তবে প্রাপ্তবয়স্করাও এটিতে  আক্রান্ত হতে পারে। সংক্রামক রোগের তালিকায় উপরের দিকে এর অবস্থান। ভাইরাস আক্ৰান্ত ব্যাক্তি থেকে দ্রুত অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। চিকেনপক্স একটি খুবই সংক্রামক রোগ যা ভেরেসেলা-জোস্টার ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট।

এই রোগে আক্রান্তের হার বসন্তকালে সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারী-মার্চ এই সময়টায় এই ভ্যারিসেলা ভাইরাস- এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। সাধারণতঃ কেউ একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে জীবনে আর আক্রান্ত হয় না- এই রকম একটা ধারণা প্রচলিত আছে। তবে বন্ধুরা এটা যে শতভাগ সত্যি তা বলা খুবই মুশকিল।

শিশুরা সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যাই না। “Varicella” ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ১৪ থেকে ২১ দিন পর ধীরে ধীরে পক্সের উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। তাই আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীরে ফুসকুড়ি ওঠার ৫-৭ দিন আগে থেকে ও ফুসকুড়ি শুকিয়ে যাওয়ার পরবর্তী ৪-৫ দিন সময় পর্যন্ত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে বা কেউ সংস্পর্শে এলে তারও জলবসন্ত বা চিকেনপক্স হতে পারে।

চিকেনপক্সের উপসর্গ বা লক্ষণগুলো কি কি ?

শরীরে লাল বা গোলাপি ফোস্কা ওঠার আগে এটি আমাদেরকে আগাম জানান দিয়ে থাকে। সমস্ত শরীরে ব্যাথা হয়। জ্বর জ্বর অনুভূত হয়। হঠাৎ করে সর্দি কাশি শুরু হয়ে যাই। কাজ-কর্ম করছি কিন্তু তারপরও কেমন যেন অসুস্থতা অনুভব হতে লাগে। এই সময় ভাইরাসটা শরীরের ভেতরে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে।

চিকেনপক্স হল ভেরেসেলা-জোস্টার ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। ইমিউন সিস্টেম সংক্রমণের সময় অ্যান্টিবডি নামক প্রোটিন তৈরি করে। এগুলি ভাইরাসের সাথে লড়াই করে এবং এরপরে এর থেকে আজীবন সুরক্ষা দেয়।

চিকেন পক্সের উপসর্গ গুলো হলো –
সমস্ত শরীরে Rash- এ ভরে যায়। Rash-গুলো জল ভর্তি ফুসকুড়ির মতো। চামড়া খুবই পাতলা থাকে। সহজেই ফেটে যায়।
চুলকানি অনুভূত হয়।
উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর), গায়ে ব্যথা এবং মাথাব্যথা প্রায়শ একদিন বা তার পরে ও ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ার আগে শুরু হয়।
অবসাদ, ক্লান্তি, মানসিক শ্রান্তি, জড়তা, নির্জীবতা জেঁকে বসে।
খিদে কমে যায়।ক্ষুধা হ্রাস, ক্লান্তি এবং অসুস্থ বোধ সাধারণ বিষয়।

এই রোগের সব চেয়ে খারাপ দিক হল এর লালচে ফোসকার সঙ্গে মারাত্মক চুলকোনি। ত্বকে অস্বস্তির জেরে চুলকোতে গিয়ে এই লালচে ফোসকা ফেটে গেলে তা থেকে আরও বেশি মাত্রায় ফুসকুড়ির মতো উঠতে শুরু করে। তবে সতর্ক থাকলে তেমন কোনও চিকিৎসা ছাড়াই চিকেন পক্সে সেরে ওঠা সম্ভব।

যে সাবধানতা মেনে চলতে হবে:

চিকেনপক্সের কারণে দাগ হয় (ফুসকুড়ি) এবং আপনাকে অসুস্থ বোধ করাতে পারে। বাচ্চাদের চেয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে লক্ষণগুলি আরও খারাপ হয়। অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ অসুস্থতার তীব্রতা সীমাবদ্ধ করতে পারে যদি প্রথমে ফুসকুড়ি শুরু হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওষুধ শুরু হয়।

সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার স্বাভাবিক। গুরুতর জটিলতা বিরল। ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে চিকেনপক্সের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আসলে, সব ক্ষেত্রে ৯০% ছোট বাচ্চাদের মধ্যে ঘটে। স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের দিকে স্পেশাল যত্ন নিন। টিকা দেওয়া না থাকলে টিকা দিন।

এগুলি গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এবং কেমোথেরাপির মতো দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থা সহ লোকদের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

শরীরে তরলের অভাব (ডিহাইড্রেশন) এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানীয় পান করা। উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর), মাথাব্যথা এবং গায়ে ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল গ্রহণ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে। চুলকানি কমানোর জন্য ক্রিম বা লোশন চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন।

প্রোটিনের চাহিদা পূরণে পরিমাণমতো চর্বিবিহীন আমিষ জাতীয় খাবার খেতে পারেন। এই রোগে আক্তান্ত হলে লাল মাংস অর্থাৎ চর্বি যুক্ত মাংস, পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ এড়িয়ে চলাই ভালো। এই সব খাবারে থাকা ফ্যাট ভ্যারিসেলা ভাইরাসের সংক্রমণের গতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই এই সময় এই ধরণের খাবার এড়িয়ে চলাই উচিত।

চকোলেট, বাদাম জাতীয় যে কোনও খাবার এই সময় এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ, এই সব খাবারে এমাইনো অ্যাসিড রয়েছে যা চিকেন পক্সের সংক্রমণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

ঠান্ডা জলেতে স্নান করবেন না। হালকা গরম জলে স্নান করুন।

এক বালতি হালকা গরম জলে ১ কাপ ওটমিল পাউডার ভিজিয়ে রেখে তা দিয়ে স্নান করে নিন। এতে চুলকানি অনেকটাই কমবে।

বসন্তরোগ ও নিমপাতা যেনো সমার্থক এই ভারতীয় উপমহাদেশে। হাজার বছর ধরে নিমপাতা বসন্তরোগে ব্যবহার হয়ে আসছে। নিমপাতা সংক্রমণের হার কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি পক্সের দাগ দূর করতেও দারুন কার্যকর।বসন্ত রোগে রোগীকে নিমপাতার বিছানায় শোয়ালে জীবাণুনাশক হিসেবে ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। কাঁচা হলুদের সাথে নিম পাতা বেটে বসন্তের গুটিতে দিলে গুটি দ্রুত শুকিয়ে যায়।

স্নান শেষে তোয়ালে বেশী চেপে গা মুছতে যাবেন না। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক ভাবেই শরীর শুকিয়ে নিন।

চুলকানি কমাতে ওলিভ অয়েল বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করুন। উপকার পাবেন। এই রোগ যে ভাইরাসের দরুন ছড়ায় সেটা মূলত এই শীতের শেষ আর গরমের শুরুর সময় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। আর যাঁর শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতা কম তাঁর পক্সের ঝুঁকি অনেক বেশি।

সূত্রঃ

medicinenetinfo.com, webmd, Mayoclinic