পাংগাস মাছের উপকারিতা কি? পাঙ্গাস মাছ কেন খেতে নিষেধ করা হয়?

পাংগাস মাছ সপ্তাহে দু-তিন বার আপনি খেতেই পারেন। ওমেগা-৩ এর উৎস। প্রোটিন সমৃদ্ধ। গড়স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম। শূন্য কার্বোহাইড্রেট। শূন্য সোডিয়াম। ৬০% ক্যালোরি প্রোটিন থেকে আসে। সব পাবেন পাংগাস মাছে।

পাংগাস মাছ বা Basa or Pangasious fish খুবই সুস্বাদু তেল জাতীয় একটি মাছ। নদীর পাংগাস মাছ সাইজে যেমন অনেক বড় হয় তেমনি দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু। আপনার ঘের বা পুকুরের পাংগাস মাছটিও আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।

এই মাছের তেলে ওমেগা থ্রি ও সিক্স দুটোই ভালো পরিমানে পাওয়া যায়। ওমেগা সিক্সের চেয়ে ওমেগা থ্রি বেশি ভালো।তেল জাতীয় সব মাছ স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।

রুই মাছের চেয়ে পাংগাস মাছ দামে কম কিন্তু পুষ্টিতে বেশি। ইলিশ মাছ, পাংগাস মাছ এসব মাছে তেল থাকে অনেক। তাই এই মাছগুলো স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ করে হার্টের জন্য অনেক উপকারী।

মাছের তেল সাধারন তেল নয়। এই তেল খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই বেশি বেশি তেলযুক্ত মাছ খান তবে অবশ্যই সেটা যেনো মোটা হওয়ার কারন না হয় সেটা লক্ষ্য রেখেই খান।

পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধাঃ

নদী, খাল-বিল, পুকুর বা ঘেরে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা পাংগাস মাছে কোনো ক্ষতি নেই। ব্যাবসায়িক স্বার্থে দ্রুত বৃদ্ধির জন্য যখন আমরা মাছকে বাজে খাবার অর্থাৎ বিভিন্ন ওষুধ, কেমিক্যাল ইত্যাদি খাওয়াবো তখন এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

হার্টের জন্য ভালো:

যারা সবচেয়ে বেশি মাছ খান তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কম বলে মনে করা হয়। তৈলাক্ত মাছ মানে ওমেগা-৩ আর ওমেগা-৩ আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

উচ্চ মানের প্রোটিন সমৃদ্ধ:

Basa or Pangasious fish বা পাংগাস মাছ অন্যান্য সাদা মাছের মতো – উচ্চ মানের প্রোটিনের একটি ভাল উৎস। প্রোটিন আপনার শরীরের টিস্যুগুলির বৃদ্ধি এবং মেরামত এবং গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমগুলির উৎপাদন সহ আপনার দেহে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একটি ৪.৫-আউন্স (১২৬-গ্রাম) বাসার পরিবেশন ২২.৫ গ্রাম উচ্চ-মানের, সম্পূর্ণ প্রোটিন সরবরাহ করে – যার অর্থ এটিতে আপনার খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় নয়টি প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে।

কম ক্যালোরি:

আপনি যদি আপনার ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করেন তবে পাংগাস মাছ আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে, একটি ৪.৫-আউন্স (১২৬-গ্রাম) পরিবেশন মাত্র ১৬০ ক্যালোরি।

কিছু গবেষণা দেখায় যে, মাছের প্রোটিন আপনাকে অন্যান্য প্রাণী প্রোটিন উৎসের তুলনায় দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মুরগি এবং গরুর মাংসের তুলনায় মাছের প্রোটিন পূর্ণতার অনুভূতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।

কেন পাঙ্গাস মাছ বিপদজনক বা খেতে নিষেধ করা হয়?

সাধারণভাবে, যে কোনও ধরণের মাছ খাওয়া কিছু ঝুঁকির সাথে যুক্ত। কারণ মাছে পারদ এবং পলিক্লোরিনেটেড বাইফেনাইল (PCBs) এর মতো শিল্প বর্জ্য দূষক থাকতে পারে। এই যৌগগুলি আপনার শরীরে তৈরি হতে পারে এবং বিষাক্ত প্রভাব ফেলতে পারে।

যে পুকুরে পাঙ্গাসের মতো ক্যাটফিশ চাষ করা হয় সেগুলি দূষণের জন্য সংবেদনশীল। এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, মাছ চাষীদের প্রায়ই রাসায়নিক এজেন্ট এবং ওষুধ ব্যবহার করতে হয় প্যাথোজেন এবং পরজীবী নিয়ন্ত্রণ করতে – এই উপাদানগুলি মাছকে প্রভাবিত করতে পারে।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা পাঙ্গাস মাছ- নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক মান পূরণ করেনি। খাবারের বিষক্রিয়ার ঝুঁকি কমাতে খাবার খাওয়ার আগে সব সময় নিশ্চিত করুন যে, পাঙ্গাস মাছ সঠিকভাবে রান্না করা হয়েছে।

পাঙ্গাস মাছ বড় হয় সাধারণ অবস্থাতেই। কিন্তু চাষ করা হয় ফার্মে। আমরা বাজার থেকে যে পাঙ্গাস কিনি, সেগুলি সবই নির্দিষ্ট কারখানায় চাষ করা হয়। আর এখানেই বিষ হয়ে যায় পাঙ্গাস ।

ফার্মে পাঙ্গাস স্বাদ বাড়ানোর ও সংখ্যায় বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় নানা রকম রাসায়নিক সার। সঙ্গে বিষাক্ত কীটনাশক। দেখা গিয়েছে, ফার্মে পাঙ্গাস চাষে ব্যবহার করা হয় এমন কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা থেকে ক্যান্সার হয়।

তাই চিকিৎ‌সকদের পরামর্শ, সুস্থভাবে বাঁচতে অবশ্যই মাছ খান তবে চাষ করা পাঙ্গাস নয়।