দাঁত ভালো রাখতে আপনি যে যে নিয়মগুলি মেনে চলবেন।

দাঁত আমাদের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। খাবার যত সুস্বাদুই হোক না কেন, দাঁত সুস্থ্য না থাকলে খেয়ে মজা নেই। আবার এমন খাবারও খাওয়া উচিত নয়, যা দাঁতের জন্য খারাপ। কাজেই দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাবার-দাবার একটু বেছে নেওয়াই ভালো।

আমরা অনেকে খাবারের ব্যাপারে যেমন সচেতন না তেমনি দাঁতেরও যত্ন সঠিকভাবে নিই না। ফলে দাঁতে প্লাক জমা হয়। এতে ব্যাকটেরিয়া থাকে। আমরা প্রতিদিন যে, চিনি বা শর্করা জাতীয় খাবার খাই সেটার সাহায্যে এই ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিড উৎপান করে, ফলস্বরূপ দাঁতে ক্যাভেটিস বা গহ্বর সৃষ্টি হয়।

তাই আমাদের দাঁতের যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত দুই মিনিটের জন্য দিনে দুবার ব্রাশ করতে হবে, এমন খাবার খাওয়া যাবে না যা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। আবার অতিরিক্ত ব্রাশ করা যাবে না।

নিচে দাঁত ভালো রাখার কয়েকটি উপায় দেওয়া হলো-

দুই মিনিটের জন্য দিনে দুবার ব্রাশ করুন:

আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন বলে, দিনে দু’বার দাঁত ব্রাশ করুন। এতে আপনার দাঁত ভালো থাকবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। মনে রাখুন, এই দাঁত মাজাটা যেন দুই মিনিটের কম সময়ে না হয় আবার বেশি সময় ধরেও না চলে। দাঁত ও মাড়ি ভালোভাবে পরিষ্কার করতে, ব্যাকটেরিয়া ও দাঁতের প্লাক দূর করতে এ সময়টা দরকার।

সকালে ব্রাশ করুন:

রাতে জমে থাকা খাদ্য কনা দাঁতে ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে। যা মাড়ির রোগের পাশাপাশি দুর্গন্ধের কারণও হতে পারে। রাতারাতি তৈরি হওয়া ফলকটি থেকে মুক্তি পেতে সকালে ব্রাশ করতে ভুলবেন না।

অতিরিক্ত ব্রাশ করবেন না:

আপনি যদি দিনে চারবারের বেশি ব্রাশ করেন, মোট চার মিনিটেরও বেশি সময় ধরে তাহলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। যখন দাঁতে এনামেল না থাকে, তখন দাঁত ডেন্টিনের একটি স্তর প্রকাশ করে। ডেন্টিনের ছোট ছোট ছিদ্র রয়েছে যা স্নায়ু শেষের দিকে নিয়ে যায়। এগুলি ট্রিগার করা হলে আপনি সমস্ত ধরণের ব্যথা অনুভব করতে পারেন।

আলতো করে দাঁত মাজুন:

দাঁত মাজার সময় জোরে জোরে ব্রাশ ঘষলেই দাঁত বেশি পরিষ্কার হবে—বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। বরং জোরে জোরে ব্রাশ করলে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হতে পারে। কেবল সামনে-পেছনে ব্রাশ না টেনে ব্রাশটা মাড়ির সাপেক্ষে ৪৫ ডিগ্রি কোণে রেখে দাঁত মাজুন। আর অবশ্যই দুই-তিন মাস পর পর ব্রাশ পরিবর্তন করুন। সম্ভব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নরম, মাঝারি বা একটু শক্ত ব্রাশ বেছে নিয়ে তা ব্যবহার করুন।

কার্বনেটেড পানীয় থেকে দূরে থাকুন:

কার্বনেটেড বা কোমল পানীয়তে অতিরিক্ত চিনি ও সোডা থাকে। এই সোডায় থাকে ফসফরিক অ্যাসিড যেটা এই পানীয়গুলোতে একটি টানযুক্ত ও অ্যাসিডযুক্ত স্বাদ দেয়। সোডা দাঁতের ক্ষতি করে। সোডায় থাকা অ্যাসিড দাঁতে আক্রমণ করে এনামেল নষ্ট করে দেয়।

দাঁতের প্রতি সদয় হন:

খাবার চিবানো আর কামড়ে খাওয়ার জন্যই দাঁত। বোতলের মুখ খোলা কিংবা প্যাকেট ছেঁড়ার জন্য হাতিয়ার হিসাবে দাঁত ব্যবহার করবেন না। অতিরিক্ত শক্ত খাবার, শক্ত হাড় বেশি কামড়াবেন না। এতে দাঁতের বাইরের আবরণ বা এনামেল নষ্ট হতে পারে, দাঁতে সূক্ষ্ম ফাটল দেখা দিতে পারে। বরফ বা ক্যান্ডি কামড়ে খাবেন না, এতেও দাঁতের ক্ষতি হয়।

প্রতিদিন এক কাপ চা:

চায়ে এমন কিছু উপাদান আছে, যা মুখের ভেতরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে এবং মাড়ির রোগ সারাতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, সেটা দুধ-চিনি মেশানো চা না হওয়া ভালো। ভারী খাবার দাবারের পর বা বিকেল-সন্ধ্যার অবসরে প্রতিদিন এক কাপ চা দাঁতের জন্য উপকারী হতে পারে।

অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ:

এমন একটা মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন, যা অ্যালকোহলমুক্ত। বাজারের বেশির ভাগ মাউথওয়াশেই বেশ খানিকটা অ্যালকোহল থাকে বলে এসব ব্যবহারে সাময়িকভাবে মুখের টিস্যু শুষ্ক হয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া যেনতেন মাউথওয়াশ বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলেও ধারণা করা হয়েছে কোনো কোনো গবেষণায়। তাই এ বিষয়ে সচেতন হন।

কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন:

কিছু খাবার আছে শুধু শরীরেরই ক্ষতি করে না, দাঁতের ও যতেষ্ট পরিমাণে ক্ষতি করে। বিভিন্ন ধরনের সিগারেট, জর্দা ও তামাক জাতীয় খাবার দাঁতের রঙ নষ্ট করে ফেলে, দাঁতের হলদে ভাব হয়ে যাই। অর্থাৎ দাঁত নষ্ট করার জন্য এই খাবার গুলো বেশি ভূমিকা রাখে। এছাড়া শর্করা জাতীয় খাবার ও বর্জন করা উচিত।

পুষ্টিকর খাবার খান:

এমন কিছু পুষ্টিকর খাবার আছে, যেগুলো দাঁতের মাড়ি ফুলা বা ব্যথা দূর করা সহ পরিষ্কার, সুন্দর ও ঝকঝকে সাদা করতে যতেষ্ট সহায়তা করে। ভালো ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার প্রত্যেকটা মানুষকে সুস্থ রাখতে বিরাট ভূমিকা রাখে। তাই দাঁত সুস্থ ও সাদা রাখার জন্য নিয়মিত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের বেশ দরকার আছে।

মাড়ি সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত শাক সবজি যেমন লাল শাক, পালং শাক, পুই শাক, গাজর, টমেটো, শশা ও লেবু খাওয়া প্রয়োজন। গাজর, শশা, আপেল ও পেয়ারা ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে অনেকটা টুথব্রাশের মতোই কাজ করে, যা দাঁত সুস্থ রাখার পাশাপাশি পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।

রেফারেন্স: