ডুমুর রক্তশূন্যতা দূর করে, ত্বকের যত্নে ও ডায়াবেটিসে কার্যকরী।

রাস্তার পাশে, ঝোপ ঝারে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠতে দেখা যায় ডুমুর গাছ। অনেক সময় গাছে ডুমুর হয়ে পেকে পড়ে যায়। কিন্তু আমরা এগুলোকে গুরুত্ব দেই না।

হয়তো অনেকে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানি না। আমরা ডুমুরের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে একে আর অবহেলা করতাম না।

ডুমুর ইংরেজিতে: Fig এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Ficus carica. ডুমুরকে কাঁচা অবস্থায় সবজি এবং পাকা অবস্থায় ফল বলতে পারি।

পাকা ডুমুর খেতে মিষ্টি লাগে। এজন্যই তো ডুমুর পাখিদের এতো পছন্দের একটি খাবার। ডুমুরের ত্বক বা খোসা খুবই পাতলা এবং এর ভিতরে অনেক ছোট ছোট বীজ থাকে।

ডুমুর খুবই উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন। ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল, মূল প্রভৃতি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বর্ষাকালের এই ফল বা সবজিটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দারুণ উপকারী। এ ছাড়া পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখতে, হাড় মজবুত রাখতে এবং ত্বক ও চুলের জন্য ডুমুর দারুণ কার্যকরী।

যাঁরা ওজন কমানোর পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য ডুমুর একটি আদর্শ খাবার।

ডুমুরের পুষ্টি উপাদান

ডুমুর বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। নিচে সেগুলো দেওয়া হলো-

  • ভিটামিন “এ”
  • ভিটামিন “কে”
  • পটাসিয়াম
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • জিঙ্ক
  • কপার
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • আইরন

ডুমুরের উপকারীতা

নিচে ডুমুরের স্বাস্থ্য উপকারীতা দেওয়া হলো –

হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখে:

ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আয়রন কমে গেলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

ডুমুর আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণকে স্বাভাবিক রাখে। ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।

চুলের জন্য:

চুলের জন্য ডুমুর খুবই ভালো। এটি চুলকে মজবুত এবং ময়শ্চারাইজ করার পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধিও করে।

একটি স্টাডি ট্রাস্টেড সোর্স বলেছে ডুমুরে থাকা জিঙ্ক এবং কপার চুল পড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

ত্বকের জন্য:

পুষ্টিকর, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ কাঁচা ডুমুর ফেস মাস্ক তৈরি করতে ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে ডুমুরের পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান।

সাথে ১ টেবিল চামচ দই যোগ করুন। মাস্কটি ১০ ​​থেকে ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যালার্জি থাকলে ত্বকে ডুমুর ব্যবহার করবেন না।

ডায়াবেটিসের জন্য:

এ গাছের পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

২০০৩ সালের একটি প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডুমুরের নির্যাস রক্তের ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন “ই” এর স্তরকে স্বাভাবিক করে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অবদান রাখে। খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

ওজন কমায়:

ডুমুরে প্রাকৃতিকভাবে ডায়েটরি ফাইবার বেশি, যারা ওজন কমাতে চান তাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভালো খাবার হতে পারে।

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারগুলি সবসময় আমাদের পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে ক্ষুধা এবং বার বার খাওয়ার প্রবণতা কমায়। ফলে ওজন নিয়ন্রণে থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:

ডুমুরে আছে প্রচুর ফাইবার। ফাইবার হজমে সাহায্য করে। এছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

ডুমুর মধ্যে জৈবিক উপাদান রয়েছে, যা অন্ত্রে বিদ্যমান ভাল ব্যাকটিরিয়াকে সমর্থন করে এবং হজম স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে ডুমুর সাহায্য করে।

ফাইবার সমৃদ্ধ ডুমুর খাদ্যতালিকায় রাখার ফলে ৩৪% মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম দেখা দিয়েছে।

হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:

ভিটামিন “কে” এর একটি ভালো উৎস ডুমুর। ভিটামিন “কে” হাড় শক্ত ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া ডুমুর হাড়ের ক্ষয়রোগও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমরা ডুমুর খেতে পারি।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে:

আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে ভিটামিন “এ” খুবই উপকারী। ভিটামিন “এ” আমাদের শরীরে তৈরি হয় না, এজন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন “এ” সমৃদ্ধ খাবার রাখা খুবই জরুরি।

ডুমুর ভিটামিন “এ” এর ভালো উৎস। তাই ভিটামিন “এ” এর চাহিদা পূরণ করতে আমরা ডুমুর খেতে পারি।

সতর্কতা:

শুকনো এবং কাঁচা ডুমুরে ভিটামিন “কে” বেশি থাকে। মাত্রা অতিরিক্ত ভিটামিন “কে” না খাওয়াই ভালো। তাই ডুমুর খাওয়ার সময় পরিমাণ মতো খেতে হবে। যাতে প্রতিদিন আমাদের শরীরে ভিটামিন “কে” গ্রহণ চাহিদার তুলনায় বেশি না হয়ে যায়।

এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে ডুমুর খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।