ডালিমের রস স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে কার্যকরী।
ডালিম বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর ফল। ডালিমের রক্ত লাল দানা ও সুমিষ্ট স্বাদের সাথে রয়েছে অনেক গুলি উপকারী যৌগ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডালিম ছাড়া এর বাংলাতে আরও একটি নাম আছে সেটি হলো বেদানা।
ডালিমের রসে ১০০ টিরও বেশি ফাইটোকেমিক্যাল থাকে। এই ফলটি ওষুধ হিসাবে হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-টিউমার বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এছাড়া ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি”, এবং ভিটামিন “ই” ও রয়েছে ডালিমের রসে।
পাশাপাশি এটি ফলিক অ্যাসিডের একটি ভাল উৎস। সব থেকে মজার বিষয় হলো ডালিমে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রিন টিয়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। তাই প্রতিদিন আমাদের ডালিম খাওয়া বা ডালিমের রস পান করা উচিত।
ডালিমের রস খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
ইংরেজীতে ডালিমকে Pomegranate বলা হয়। এটি খুবই সুস্বাদু একটি ফল। ডালিম গাছ ও ফল বিভিন্ন ঔষুধ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
এটি মূলত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আফগানিস্তান, রাশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, চীন এবং জাপানে চাষ করা হয়।
এটি পুষ্টি গুনে ভরপুর একটি ফল। নিচে ডালিমের রসের উপকারিতা আলোচনা করা হলো –
ক্যান্সারের সাথে লড়তে সাহায্য করে:
পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স হয়ে গেলে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে PSA (প্রোস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন) অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
নিয়মিত ডালিম খেলে এই PSA মাত্রা বাড়তে পারে না। ফলে ক্যান্সার সংক্রমণের ভয় কমে যায়। এছাড়া ডালিম স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
স্তন ক্যান্সার মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে খুব কমন এক ক্যান্সার। ডালিম স্তন ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে:
ডালিমের রস আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
এক গবেষণায় ২৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দৈনিক ৮ আউন্স ডালিম জুস খাওয়ানোর ফলে তাদের মৌখিক ও ভিজ্যুয়াল স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
রক্তচাপ কমায়:
উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, হাইপারটেনশনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিন দুই সপ্তাহ ধরে ডালিমের রস খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমেছিল।
জয়েন্ট ব্যথা:
আর্থ্রাইটিস (জয়েন্ট ব্যথা) পশ্চিমা দেশগুলিতে একটি সাধারণ সমস্যা। ডালিমের রসে প্রদাহবিরোধী প্রভাব রয়েছে যা বাতের চিকিৎসা করতে সহায়তা করে।
গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয় যে, ডালিমের রস অস্থি আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে পারে।
হার্ট ভালো রাখে:
প্ৰতিদিন কোনো না কোনো ভাবে আমরা চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করি। এর ফলে আমাদের ধমনীর আবরণে চর্বি জমে। ফলে ধমনী আস্তে আস্তে পুরু ও শক্ত হতে থাকে।
ডালিমের রস মাংসপেশিতে দ্রুত অক্সিজেন পৌঁছে দেয় এবং ধমনীকে পুরু ও শক্ত হতে বাধা দেয়।
এছাড়াও ডালিমের রসে থাকা উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী গুণাগুণ আছে ডালিমে। শরীরের ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ডালিমের রস।
এছাড়া ডালিমের রসে আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন “সি” এর প্রয়োজনীয় চাহিদার তুলনায় ৪০% বেশি আছে।
ভিটামিন “সি” আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করে তোলে।
হিমোগ্লোবিন বাড়ায়:
আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, প্রতিদিন মাঝারি আকৃতির একটি ডালিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। অথবা এক গ্লাস ডালিমের রস খান।
ত্বক সুস্থ্য ও উজ্জল রাখে:
ডালিমের তেল (pomegranate oil) ময়েশ্চারাইজার হিসাবে ভালো কাজ করে। এছাড়াও ডালিমে থাকা ফলিক এসিড, ভিটামিন “সি”, সাইট্রিক এসিড ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
সতর্কতা
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।