গাঁদা ফুল ও পাতার উপকারিতা।
এনে দে নইলে
বাঁধব না বাঁধব না চুল
গাঁদা ফুল নিয়ে এই ছড়া গানটি শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। শীতের অন্যতম আকর্ষণীয় ফুল গাঁদা ফুল। হলুদ, কমলা, বাদামি কত রঙেরই না পাওয়া যায়। যেমন তার নানান রঙ তেমন তা নানান নাম। গাঁদা ফুলে আছে এক মন ভোলানো মিষ্টি গন্ধ। গন্ধটা নাকে গেলেই যেন মনটা প্রেম প্রেম আভাস পায়।
শীতকালীন ফুল হলেও বর্তমানে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালেও চাষাবাদ হয়। বাগানের শোভা বর্ধন ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বন ও গৃহসজ্জায় গাঁদার ব্যাপক ব্যবহার করা হয় গাঁধা ফুল।
অনেকের কাছে আবার ‘গেন্দা’ ফুল নামেও পরিচিত। এর ইংরেজি নাম Marigold এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Tagetes erecta. গাঁদা ফুলের বিভিন্ন প্রজাতি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্য এবং আমেরিকার মেক্সিকো, আর্জেন্টিনায় উৎপত্তি হয়েছে। আমাদের দেশে শহর-বন্দর ও গ্রামাঞ্চলে অতি প্রাচীন থেকেই এ ফুল ছড়িয়ে আছে।
গাঁদা ফুল প্রায় ৫৬ টি প্রজাতি আছে। বৈজ্ঞানিক নাম: Tagetes erecta. গাঁদা ফুলকে অনেকে গন্ধা/ গেন্ধা/ গেনদা নামেও ডাকে। গাঁদা ফুলের বিভিন্ন জাত ও রঙ থাকলেও উজ্জ্বল হলুদ ও গাড় কমলা রঙ বেশি দেখা যায়।
গাঁদা ফুল সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি উপকারিতা ও ঔষধি গুণও রয়েছে অনেক। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, গাঁদা ফুল ও পাতার উপকারিতা সম্পর্কে-
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস:
গাঁদা ফুলের উজ্জ্বল কমলা ও হলুদ পাপড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যারোটিনয়েড। এই ফুলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেল জনিত কোষের ক্ষতির থেকে রক্ষা করে।
আলসারের চিকিৎসা করে:
গবেষণায় জানা গেছে, গরম পানিতে গাঁদাফুলের পাঁপড়ি ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই পানি দিয়ে চা বানিয়ে খেলে তা মুখ ও পাকস্থলির আলসার প্রতিরোধ করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:
গাঁদা ফুলে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। দ্য জার্নাল অফ নিউট্রিশনের একটি গবেষণা অনুসারে, গাঁদার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই এবং প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই গবেষণায় গবেষক স্তন ক্যান্সারের টিউমারে গাঁদা ফুল থেকে বের করা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লুটিন এর প্রভাব পরীক্ষা করেছেন। তাদের গবেষণার ফলাফল দেখায় যে লুটিন স্তনে টিউমারের সংখ্যা কমিয়ে দেয়নি, এটি নতুন ক্যান্সার কোষের বিকাশকেও বাধা দেয়।
ক্ষত সারায়:
কোন স্থান কেটে গেলে কিংবা আঘাত পেলে গাঁদাফুল অথবা এর গাছের পাতা হাতে পিষে রস দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয় এবং বেশ দ্রুত ক্ষত সেরে যায়। পোড়া ত্বকেও গাঁদা ফুলের রস লাগালে তাৎক্ষণিক প্রশান্তি মেলে। গ্রামে এখনও এটি ক্ষতের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ করে:
গাঁদা ফুলে ভিটামিন “সি” রয়েছে যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গাঁদা ফুল কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ক্যান্সার এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
ত্বকের যত্নে:
তৈলাক্ত ত্বকের চিকিৎসায় গাঁদা ফুল কার্যকর। এছাড়া রোদে পোড়া ত্বকে গাঁদা ফুলের রস লাগালে কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বালা ভাব চলে যায় এবং ত্বক শীতল হয়ে যায়। এছাড়াও গাঁদা ফুলের অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কারণে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না সহজে।
গাঁদাফুল হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক হিসাবে কাজ করে। তাই ব্রণের উপর গাঁদা ফুলের রস লাগালে দ্রুত ব্রণ সেরে যায়। তাজা ফুল গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং তারপর দিনে অন্তত একবার ত্বকে লাগান।
ইনফেকশন রোধে:
গাঁদাফুলের পাপড়ি পরিষ্কার পানিতে ফুটিয়ে গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করে নিন। এই পানি ইনফেকশন, ব্লাডার ইনফেকশন, একজিমা প্রতিরোধ করবে।
যক্ষা রোগ সারায়:
যক্ষ্মারোগ একটা খারাপ অসুখ, সহজে সারতে চায় না। সবসময় ঘুমঘুসে জ্বর, পেটের দোষ আর পাতলা ছিটযুক্ত রক্তের বমি এ রোগের লক্ষণ। এ অবস্থায় গাঁদা ফুলগাছের পাতা ছায়ায় শুকিয়ে গুঁড়ো করতে হবে। এই গুঁড়ো ২৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ একটু দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে খেতে হবে।