কোমর ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক উপায়।
একটু বয়স হলেই কোমর ব্যথা। বয়স্ক লোকেদের মুখে শোনা যায়। বসলে আর উঠতে পারিনা কোমরে প্রচন্ড ব্যথা। মেরুদণ্ডের নিচের হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থির বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলে এ ব্যথার সুত্রপাত হয়।
কোমর ব্যথা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। নারী পুরুষ উভয়ই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। প্রথম দিকে এই ব্যথা সহ্য ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও আস্তে আস্তে এটি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
কোমর ব্যথা কেন হয়?
চলাফেরা, বেশি ওজন তোলা, মেরুদণ্ডের অতিরিক্ত নড়াচড়া, একটানা বসে বা দাড়িয়ে থাকা, আঘাত পাওয়ার জন্য হয়ে এ ব্যথা হয়।
অন্যান্য কারণের মধ্যে বয়সজনিত মেরুদণ্ডে ক্ষয়, অস্টিওআথ্র্যাটিস বা বাত, অস্টিওপোরেসিস, মেরুদণ্ডের স্নায়ুবিক সমস্যা, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, মেদ বা ভুড়ি, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি।
কোমর ব্যথা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
অনেক টাকা যেমন ব্যয় করছি তেমনি এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও মারাত্মক। কিন্তু অল্প খরচ ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ামুক্ত প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখি না।
নিয়মিত একটু সময় নিয়ে এই পদ্ধতিগুলো মেনে চললে ব্যথা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। এই প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমের উপায় সমূহ ব্যথার ঔষুধের উপর নির্ভরতা হ্রাস করতে পারে।
এন্ডোরফিন হরমোন বৃদ্ধির উপায়:
এন্ডোরফিন নামক হরমোন আমাদের শরীরের ব্যথা উপশম করে। এন্ডোরফিনস হল একটি পেপটাইড হরমোন যেটি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর শরীরে তৈরি হয়।
মস্তিষ্কে এবং পিটুইটারি গ্রন্থিতে অ্যান্ডোরফিন উৎপাদিত হয়। এন্ডোরফিন গুলির প্রধান কাজটি হচ্ছে ব্যথার সংকেতের যোগাযোগকে বাধা দেওয়া।
এন্ডোরফিন মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেতগুলি পৌঁছার আগেই তা অবরুদ্ধ করে, এবং উদ্বেগ, স্ট্রেস এবং হতাশা প্রশমিত করতে সহায়তা করে।
নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে ব্যায়াম করলে মস্তিস্ক থেকে এই হরমোনটি নিঃসৃত হয়। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, হাসিখুশি থাকা এন্ডোরফিন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
নিয়মিত ব্যয়াম:
কোমরে ব্যথা যখন শুরু হয় হাঁটা-চলা করা কাজ করা কস্টকর হয়ে পড়ে। তবে যোগব্যায়াম, সাঁতার কাঁটা বা হাঁটা চলা করার মাধ্যমে এটা কমানো সম্ভব।
ব্যায়াম করলে রক্তে অক্সিজেন প্রবাহ বেড়ে যায়। পেশি শক্ত ও সুদৃঢ় হয়। ফলে মাংসপেশীসহ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা কমে।
গরম সেঁক বা ঠান্ডা সেঁক:
গবেষণায় দেখা গেছে যে গরম সেঁক দেওয়া বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকর উপায়। বরফ সাময়িকভাবে ব্যথা কমিয়ে দেয়।
একটি তোয়ালেতে কিছু বরফের টুকরো পেঁচিয়ে ব্যথার স্থানে ২০ মিনিট রাখুন। এছাড়া আইস ব্যাগ দিয়ে কোমরে সেঁক দিতে পারেন।
এছাড়া গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে কিংবা তাওয়া গরম করে শুকনো কাপড় দিয়ে সেঁক দিতে পারেন।
গরম সেঁক দেওয়া হলে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারণ:
মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে কোমরের ব্যথার উপশম করা যায়। মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারণের জন্য বিভিন্ন আসনে বসতে পারি।
নিম্নলিখিত আসনগুলি কোমরে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। আসন গুলি হলো- মাথা নিচু করে হাত দিয়ে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল স্পর্শ করা, কোবরা পোজ, ক্যাট-কাউ পোজ, চাইল্ডস পোজ।
বসার ভঙ্গি পরিবর্তন
চেয়ারে বসার ভঙ্গির কারণে অনেক সময় কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। প্রথমে কোমর, তারপর বুক এবং সবশেষে কাঁধ ও ঘাড় সোজা করে বসুন।
এই ভঙ্গিটিতে সহজ এবং আরামদায়কভাবে বসার চেষ্টা করুন। এইভাবে অফিসে কাজ, পড়া, হাঁটার অভ্যাস করুন।
যথেষ্ট ঘুমানো
গবেষণায় দেখা যায় যে ঘুমের ঘাটতি থাকলে কমরে ব্যথা আরও খারাপ করতে পারে। আরামদায়কভাবে বিছানায় না ঘুমালে বা পর্যাপ্ত ঘুম না পড়লে কমরে ব্যথা হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের রাতে ৭-৯ ঘন্টা ঘুম হওয়া উচিত। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ব্যথা উপশম করতে পারে এবং একজন ব্যক্তির সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।
পেশী ম্যাসেজ করা
কোমরের পেশী ম্যাসেজ করা কোমরের ব্যথা উপশম করার অন্যতম কার্যকর উপায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে পেশী ম্যাসেজ করা কোমরের ব্যথা উপশম করা ছাড়াও পিঠে ব্যথা কমায়।
কিছুক্ষন রোদে থাকুন:
প্রতিদিন ১০ মিনিটের সূর্যের সংস্পর্শে আপনার শরীরকে ভিটামিন-ডি তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।
ভিটামিন-ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে যা হাড়ের বৃদ্ধি এবং মেরামতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করুন যদি:
- ব্যথা খুব বেশি দিন ধরে চলছে, কিন্তু কমছে না।
- কোনও কারণ ছাড়াই ঘন ঘন পেশির ব্যথা দেখা দেয়।
- জ্বর সহ শরীরে ব্যথা হয়।

