কলা রক্তচাপ কমাতে ও অতিদ্রুত শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করে।
প্রকৃতির দেওয়া অধিক পুষ্টিকর ও অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল হচ্ছে কলা। যেটা সুরক্ষিত ও নিরাপদ আবরণে আবৃত থাকে।
কলা নামটি শুনলেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে হলুদ রঙের সুস্বাদু চিকন লম্বা গড়নের একটি ফল যেটা দামে সস্তা এবং সারা বছরই হাতের কাছে পাওয়া যায়।
সব ঋতুতেই এই ফলটি পাওয়া যায়। বেশির ভাগ মানুষের কলা খুবই পছন্দের খাবার। ছোট বাচ্চা থেকে বুড়ো অর্থাৎ সব বয়সের মানুষ এই ফলটি খেতে পছন্দ করেন।
সমগ্র পৃথিবীতে স্বাস্থ্যকর ফলের তালিকার শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে এর অধিক পুষ্টি, ঔষধি গুন ও সহজ প্রাপ্যতার জন্য।বিশ্বের কোনো কোনো দেশের প্রধান খাবার কলা।
বাঙ্গালীর প্রধান খাবার না হলেও অধিকাংশ পরিবারের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে এই খাবারটি থাকে।
বেশিরভাগ খেলোয়াড়দের এবং রোগীদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এই ফলটি থাকে কারণ কলা খুবই দ্রুত শক্তির যোগান দিয়ে থাকে।
কলা ক্যালরির একটি ভাল উৎস। একটি বড় মাপের কলা খেলে ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কলাতে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা।
এই শর্করা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উত্পাদনে সাহায্য করে।
কাঁচা অবস্হায় সবুজ, পাকা অবস্হায় হলুদ রঙ্গের এই ফলটিতে ফাইবার, পটাসিয়াম, ভিটামিন-বি 6, ভিটামিন-সি, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, কার্বহাইড্রেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে।
কলার পুষ্টিগুণ
কলাতে অনেক উপকারী উপাদান আছে। উল্লেখযোগ্য কিছু উপাদান নিচে দেওয়া হলো-
- পটাশিয়াম: ৯%(RID)
- ভিটামিন বি 6: ৩৩%(RID)
- ভিটামিন সি: ১১%(RID)
- ম্যাগনেসিয়াম: ৮%(RID)
- কপার: ১০%(RID)
- ম্যাঙ্গানিজ: ১৪%(RID)
- কার্বহাইড্রেট: ২৪ গ্রাম
- ফাইবার: ৩.১ গ্রাম
- প্রোটিন: ১.৩গ্রাম
- ফ্যাট: ০.৪ গ্রাম
কলার উপকারীতা
ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ কলা হার্টের জন্য, কিডনির জন্য, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, ওজন কমানোর জন্য খুবই উপকারী। নিচে উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
কিডনির জন্য ভালো:
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং কিডনির সুস্থ্যতায় পটাসিয়াম প্রয়োজনীয়। পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস হল কলা। কলা স্বাস্থ্যকর কিডনি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ উপকারী।
মহিলাদের ১৩ বছরের একটি গবেষণায় নির্ধারিত হয়েছে যে, প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার কলা খেলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৩৩% কমে যাবে।
অন্যান্য গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, যারা কলা খাই না তাদের থেকে যারা সপ্তাহে ৪-৬ বার কলা খাই তাদের কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫০% কমে যাবে।
ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে:
কলা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে। টাইপ-2 ডায়াবেটিস সহ বিশ্বের অনেক গুরুতর রোগের জন্য ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স একটি বড় ঝুঁকির কারণ।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, প্রতিদিন ১৫-৩০ গ্রাম প্রতিরোধী স্টার্চ গ্রহণ করলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা ৩৩-৫০% বেড়ে যাবে।
কাঁচ কলা প্রতিরোধী স্টার্চের একটি দুর্দান্ত উৎস। কারণ কাঁচ কলা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
পেট ভরিয়ে রাখে:
কলা আমাদের পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিরোধী স্টার্চ হল সহজে হজম হয় না এমন একধরনের কার্বহাইড্রেট যা, কাঁচ কলা এবং অন্যান্য খাবারে থেকে পাওয়া যায় যা আপনার দেহে দ্রবণীয় ফাইবারের মতো কাজ করে।
নিয়ম অনুসারে, যে কলাটি যত বেশি সবুজ হবে, তত বেশি তার প্রতিরোধী স্টার্চ।
অন্যদিকে, পাকা কলাতে কম পরিমাণে প্রতিরোধী স্টার্চ এবং ফাইবার থাকে। তবে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে।
পেকটিন এবং প্রতিরোধী স্টার্চ উভয়ই ক্ষুধা কমায় এবং খাওয়ার পরে পরিপূর্ণতার অনুভূতি বাড়ায়।
হজমের জন্য ভালো:
কলা হজমের জন্য ভালো এটা সবারই জানা। কলাতে থাকা ডায়েটরি ফাইবার সহজে খাবার হজম করার পাশাপাশি অনেক স্বাস্থ্য সুবিধাতেও ভূমিকা পালন করে।
একটি মাঝারি আকারের কলাতে প্রায় ৩ গ্রাম ফাইবার থাকে। কলা ফাইবারের একটি ভালো উৎস। কলাতে দুই ধরণের ফাইবার থাকে:
পেকটিন: কলা পাকার সাথে সাথে কমে এবং
প্রতিরোধী স্টার্চ: কাঁচ কলা থেকে পাওয়া যায়।
প্রতিরোধী স্টার্চ হজম না হয়ে আমাদের বৃহৎ অন্ত্রের মধ্যে পৌঁছায়, যেখানে এটি অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটিরিয়ার খাদ্য হিসাবে কাজ করে।
কিছু টেস্ট-টিউব গবেষণায় দেখা গেছে যে, পেকটিন কোলন ক্যান্সার থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।
হার্টের জন্য ভালো:
পাকা কলাতে থাকা উচ্চ পরিমাণের পটাসিয়াম হার্টের জন্য ভালো।
এর গুরুত্ব সত্ত্বেও, খুব কম লোকই তাদের ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম পান। কলা পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস।
একটি মাঝারি আকারের কলাতে পটাসিয়াম (১১৮ গ্রাম) ৯% (RDI) থাকে।
পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ডায়েট রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে এবং পটাসিয়াম খাওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে হৃদরোগের বা হার্টের রোগের ঝুঁকির পরিমাণ ২৭% কমে যায়।
তদুপরি, কলাতে পরিমাণে বেশ ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা, হার্টের বা হৃদরোগের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে:
ফলমূল এবং শাকসবজি ডায়েটরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি দুর্দান্ত উৎস। এগুলোতে ডোপামাইন এবং কেটেকিনস সহ বেশ কয়েক ধরণের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে, যেমন হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে। কলাতে রয়েছে ডোপামিন যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে।
রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে:
কলা পেকটিন সমৃদ্ধ, যা এক ধরণের ফাইবার। এই পেকটিন মাংসপেশীকে তার স্পঞ্জি কাঠামোতে রূপ দেয়।
কাঁচ কলাতে প্রতিরোধী স্টার্চ থাকে যা দ্রবণীয় ফাইবারের মতো কাজ করে এবং হজম না হয়ে সরাসরি বৃহদান্তে গিয়ে পৌঁছায়।
পেকটিন এবং প্রতিরোধী স্টার্চ উভয়ই খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা সংযত রাখতে সহায়তা করে।
কলা গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে (GI) নিচের দিকে অবস্থান করে। কাচঁ কলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর মান প্রায় ৩০ এবং পাকা কলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর মান প্রায় ৬০।
টাইপ-2 ডায়াবেটিস রোগীদের পাকা কলা খাওয়া এড়ানো উচিত।
কলা ব্যায়ামের জন্য উপকারী:
কলাতে থাকা খনিজ উপাদান এবং সহজে হজম যোগ্য কার্বোহাইড্রেটের কারণে অ্যাথলিটদের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার হিসাবে পরিচিত।
অনেক সময় ব্যায়াম করতে গিয়ে আমরা মাংস পেশীতে ব্যাথা পেয়ে থাকি। কলা এই ব্যাথা কমাতে সহায়তা করে।
সতর্কতা
কিডনি রোগীদের জন্য উচ্চ পটাসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো নয়। কলা যেহেতু পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফল, এজন্য কিডনি রোগীদের কলা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
কাজের ব্যস্ততার কারণে স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা খুব কম সময়ই পাই। তবে শরীর ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার তো খেতেই হবে।
এ জন্য ফাস্টফুডের বদলে খুঁজে নিতে পারি সহজলভ্য প্রাকৃতিক খাবার কলা। গর্ভবতী মা থেকে শুরু করে শিশু পর্যন্ত সবার জন্য কলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের প্রতিদিন ১-২টি কলা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
সূত্র: হেলথলাইন