অলিভ অয়েল স্ট্রোক প্রতিরোধী, ব্যথা কমাতে ও ত্বকের জন্য দারুন কার্যকরী।

অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল সচারাচর ছোট বাচ্চাদের ত্বকে ব্যবহার করা হয়।

অনেকে আবার শীতের শুস্কতা দূর করতে লোশনের পরিবর্তে ব্যবহার করে থাকে। আর রূপচর্চায় অলিভ অয়েলের তো তুলনায় হয় না।

আবার চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কোনো অংশে কম নয়। তাহলে ভেবে দেখুন যে তেলের এতো গুণ সেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতোটা উপকারী হবে।

খুব দামী হলেও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। অলিভ অয়েলের উপকারিতার কারণে দ্রুত বিশ্বের জনপ্রিয় তেল হয়ে উঠছে।

এতে থাকা ফ্যাট হল মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট হিসাবে বিবেচনা করে।

স্বাস্থ্য উপকারীতার পাশাপাশি অলিভ অয়েল আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। রান্না, প্রসাধনী, ঔষুধ, সাবান এবং ঐতিহ্যবাহী হিসাবে অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করা হয়।

অলিভ অয়েল মূলত ভূমধ্যসাগরীয় দেশসমূহ থেকে এসেছিল তবে এখন এটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

ইংরেজিতে Olive oil এবং বৈজ্ঞানিক নাম Olea europaea. অলিভ অয়েলে অ্যালিক অ্যাসিড থাকে ৮৩%, লিনোলিক অ্যাসিড ২১% এবং প্যালামিটিক অ্যাসিড ২০%, ফ্যাট ১৩.৫ গ্রাম, ভিটামিন “ই” ১৪.৩৫ মিলিগ্রাম থাকে।

অলিভয়েলের উপকারিতা

অলিভ অয়েল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এই তেল স্ট্রোক প্রতিরোধে, হার্টের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ও টাইপ-2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। নিচে অলিভ অয়েলের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে:

অলিভ অয়েলে প্রায় ১৪% স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন ওমেগা-6 এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড।

তবে অলিভ অয়েলে প্রধান ফ্যাটি অ্যাসিড হল অ্যালিক অ্যাসিড নামক মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা মোট তেলের ৭৩% অংশ জুড়ে আছে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালিক অ্যাসিড প্রদাহ হ্রাস করে এবং ক্যান্সারের কোষে উপকারী প্রভাব ফেলতে পারে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ:

অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েলে ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-E এবং ভিটামিন-K রয়েছে। তবে এই তেলে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।

এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। এগুলি ব্যথার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এ দুটি হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে:

রক্ত জমাট বাঁধার কারণে বা রক্তক্ষরণের কারণে, মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাতের কারণে স্ট্রোক হয়। অলিভ অয়েলে থাকা মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে।

৮৪১,০০০ লোকের গবেষণায দেখা গেছে যে, অলিভ অয়েল স্ট্রোক এবং হার্টের অসুখের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

১৪০,০০০ অংশগ্রহণকারীদের অন্য একটি পর্যালোচনায়, যারা অলিভ অয়েল গ্রহণ করেছেন তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কম ছিল।

হার্টের রোগের জন্য ভালো:

হার্টের রোগ বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ একটি মৃত্যুর কারণ।

“খারাপ” এলডিএল কোলেস্টেরলকে জারণ থেকে রক্ষা করে, আপনার রক্তনালীগুলির আস্তরণকে উন্নত করে এবং অতিরিক্ত রক্ত ​​জমাট বাঁধা রোধ করতে পারে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অলিভ অয়েলের ব্যবহার ব্লাড পেসারের ওষুধের প্রয়োজনীয়তা ৪৮% কমিয়েছে।

টাইপ-2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে:

অলিভ অয়েল টাইপ-2 ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে অলিভ অয়েল রক্তে শর্করার ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতার উপর উপকারী প্রভাব ফেলতে পারে।

৪১৮ জন স্বাস্থ্যকর লোকের মধ্যে একটি গবেষণায় দেখা যায় অলিভ অয়েল ৪০% এরও বেশি টাইপ-2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।

রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের নিরাময়ে:

রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস হল একটি অটোইমিউন রোগ যা হাড়ের জয়েন্ট এর ব্যথা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

জলপাই তেল রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস দ্বারা সৃষ্ট জয়েন্টের ব্যথা বা ফোলা কমাতে করতে পারে।

মাছের তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে এটির উপকারী প্রভাবগুলি অনেক বেড়ে যায়।

অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

জলপাই তেলে এমন অনেক পুষ্টি রয়েছে যা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলিকে ধংস করতে পারে। এর মধ্যে একটি হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (Helicobacter pylori), একটি জীবাণু যা পেটে থাকে।

এটি পেটের আলসার এবং পেটের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অলিভ অয়েল এই ব্যাকটিরিয়ার সাথে লড়াই করতে পারে।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:

ভার্জিন অলিভ অয়েলে উপস্থিত ওমেগা-3 এবং ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা মস্তিষ্ক এবং স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল।

ত্বকের জন্য ভালো:

অন্য যে কোনও তেলের তুলনায় অলিভ অয়েল খুবই হাল্কা, যে কারণে খুব সহজেই মিশে যায় ত্বকের সঙ্গে। রাতে ঘুমনোর আগে, প্রতি নিয়ত কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মুখে ম্যাসাজ করতে পারেন।

এতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকার ফলে তা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। যার ফলে ত্বক অনেক বয়স পর্যন্ত মসৃণ ও টানটান থাকে।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স: