“ধনেপাতা” ইনসুলিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখে ও খাবারে রুচি আনে।
আপনি ফুচকা খাবেন বা মুড়িমাখা। ধনেপাতা ছাড়া খেলেন। বেশি স্বাদ পেলেন না। ধনেপাতা দিয়ে খেলেন। পরবর্তীতে ধনেপাতা না হলে জাস্ট ভাবাই যাই না, টেস্ট অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
ডালে, তরকারিতে, মাছের ঝোলে, মাংসে সবকিছুতেই স্বাদ বাড়িয়ে দেয় এই ধনেপাতা। শুধু কি স্বাদে, ধনে পাতার স্বাস্থ্য গুণও অনেক বেশি৷ চিকিৎসকরা বলছেন, রোজ ধনে পাতা খেলে অনেক রোগ তাড়াতাড়ি দূর হবে৷
তবে ধনে পাতা এখন সারাবছর কমবেশি পাওয়া যায়। অনেকেই তরকারির স্বাদ বৃদ্ধিতে ধনেপাতা ব্যবহার করেন। আবার ভর্তায়ও না হলে চলে না এই সুগন্ধি পাতা। এতো গেল রসনাবিলাসের কথা।
কিন্তু জানেন কি, খাবারে স্বাদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধনেপাতার রয়েছে একগুচ্ছ ঔষধি গুণ।
হেমন্তের হিমের পরশের সঙ্গে বাজারে উঁকি মারতে শুরু করে শীতের অতিথিরা। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, কাঁচা তেঁতুল, শিমের সঙ্গে দোকানীর ঝুড়ি উপচে পড়ে টাটকা ধনেপাতায়।
ধনেপাতার মধ্যে রয়েছে বিরল ঔষধি নানা উপাদান যা রক্ত শোধন করে। খাদ্যাভ্যাসের দরুণ আমাদের শরীরে রোজ তিলে তিলে জমা হতে থাকে বেশ কিছু ভারী ধাতু এবং বিষাক্ত দূষণকারী পদার্থ।
এর থেকে শরীরে বহু দূরারোগ্য অসুখ যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ, মস্তিষ্কের বিভ্রাট, মানসিক রোগ, কিডনি ও ফুসফুসের অসুখ এবং হাড়ের দুর্বলতা তৈরি হতে পারে।
ধনেপাতা রক্তপ্রবাহ থেকে এই সমস্ত ক্ষতিকর উপাদান দূর করে শরীরকে সুস্থ্য ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
শুধু তাই নয়, এটি উদ্ভিদ অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিফাংগাল এবং যে কোনও চুলকানি ও চামড়ার জ্বলনে অব্যর্থ ওষুধ।
ধনিয়া বা ধনেপাতা ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস। এ ছাড়া ধনিয়া পাতা ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “কে” এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে।
এগুলিতে স্বল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, থায়ামিন, নিয়াসিন এবং ক্যারোটিন রয়েছে।
ধনেপাতার উপকারীতা
এখানে ধনিয়া পাতার কিছু স্বাস্থ্য উপকারীতা দেয়া হলো :
কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে
ধনিয়াপাতা খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। হজমে উপকারী, যকৃতকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং পেট পরিষ্কার করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
ধনেপাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাল। এটি ইনসুলিনের নিঃসরণকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে।
এর অ্যান্টি-সেপটিক বৈশিষ্ট্য মুখের আলসার নিরাময়ে সহায়তা করে।
উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
ধনে পাতা উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও অ্যান্টিক্যান্সার, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং নিউরোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
ব্যথা কমাতে
ধনিয়াপাতার এন্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে। এ কারণেই এটি আর্থ্রাইটিসের মতো প্রদাহজনিত রোগের বিরুদ্ধে ভাল।
ধনেপাতায় উপস্থিত সিনিওল এসেনশিয়াল অয়েল এবং লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যার মধ্যে অ্যান্টিরিউম্যাটিক এবং অ্যান্টি-আর্থ্রাইটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
এরা ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে।
স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখে
স্মৃতিশক্তি প্রখর এবং মস্তিস্কের নার্ভ সচল রাখতে সাহায্য করে ধনেপাতা।
ধনিয়াপাতার থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি মস্তিষ্কের প্রদাহ হ্রাস করতে পারে, স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে পারে। যদিও আরও গবেষণা চলমান।
সুস্থ্য ত্বকের জন্য
ডিসইনফেকট্যান্ট, ডিটক্সিফাইং বা বিষাক্ততা রোধকারী, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে এরা বিভিন্ন স্কিন ডিজঅর্ডার বা ত্বকের অসুস্থতা সারাতে সাহায্য করে।
ত্বক সুস্থ্য ও সতেজ রাখতে তাই ধনে পাতার উপকারীতা অনেক।
অ্যালার্জি ও গুটিবসন্ত প্রতিরোধে
অ্যান্টি হিস্টামিন উপাদান থাকায় এরা অ্যালার্জি বা এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
ধনেপাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিইনফেকসাস, ডিটক্সিফাইং, ভিটামিন “সি” এবং আয়রন গুটিবসন্ত প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
মুখের দুর্গন্ধ ও অরুচি ভাব দূর করে ধনে পাতা। এছাড়া শুকনো ধনেও একই কাজ করে। মাঝে মাঝে ধনেপাতা চিবিয়ে খান, মুখের দুর্গন্ধ থাকবে না।
চোখের জন্য ভাল
ধনেপাতা চোখের জন্য ভাল। ধনেপাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট চোখের রোগ প্রতিরোধ করে। এটি কনজাংটিভাইটিস চিকিৎসার একটি ভাল প্রতিকার।
সাবধানতা:
ধনেপাতা উপকারী তবে, অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত ধনেপাতা লিভারের কার্যক্ষমতাকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এতে থাকা এক ধরনের উদ্ভিজ তেল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে।
অতিরিক্ত ধনেপাতা নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই ধনেপাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
স্বাভাবিকভাবে ধনেপাতা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বিষয়ক সমস্যা দূর করে থাকে। কিন্তু বেশি পরিমাণে ধনেপাতা সেবন পাকস্থলীতে হজমক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করে থাকে।
ধনেপাতা অল্প খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় কিন্তু এটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া ভ্রূণের বা বাচ্চার শরীরের জন্য ভালো নয়।
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।