তেঁতুল উচ্চ রক্তচাপ কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, ত্বক উজ্জ্বল করে।
তেঁতুল নাম শুনলেই জিভে পানি চলে আসে। তেঁতুল বসন্ত কালের হলেও সারা বছর ধরে পাওয়া যায়। ফুল ঝরে যখন একটু বড় হয়ে ওঠে অর্থাৎ কঁচি তেঁতুল ঢিল ছুঁড়ে পেড়ে খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই আছে।
তেঁতুল (tamarind) পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। তবে মেয়েদের কাছে একটু বেশি পছন্দের। আমাদের অনেকের প্রিয় খাবার ফুচকা, তেঁতুল ছাড়াতো অসম্পূর্ন থেকে যাবে।
কি আচার্য একটি বিষয় তেঁতুল কাঁচা অবস্থায় খোসাসহ খাওয়া যায় কিন্তূ পেঁকে গেলে নিজেই খোসা থেকে আলাদা হয়ে যায়। কোনো কোনো গাছের তেঁতুল খুব টক হয়ে থাকে আবার কোনো কোনো গাছের তেঁতুল টক-মিষ্টি স্বাদের হয়।
তেঁতুল পেঁকে গেলে খোসা ছাড়িয়ে রোদে ভালো করে শুকিয়ে বীজ ফেলে বা বীজসহ এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
তেঁতুলের তৈরি আচার বা তেঁতুল গুড় ছোট থেকে বুড়ো সবাই খেতে খুব পছন্দ করে। যদি খাবারের শেষে হয় একটু তেঁতুলের চাটনী বা তেঁতুলের টক ডাল তাহলেতো কথাই নেই।
আমরা সবাই জানি যেকোনো টক জাতীয় ফল আমাদের শরীরের জন্য ভালো। তবে অনেকেরই একটি ভুল ধারণা রয়েছে তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য, যকৃত এবং পিত্তথলির সমস্যা এবং পেটের সমস্যার জন্য আমরা তেঁতুল খেতে পারি। এছাড়া সর্দি এবং জ্বরের চিকিৎসায় ভালো কাজ করে।
মহিলারা কখনও কখনও গর্ভাবস্থাতে বমি বমি ভাব দূর করতে তেঁতুল খেয়ে থাকে। অনেক সময় তেঁতুলের বীজের ঘন পেস্ট ভাঙ্গা হাড় ভালো করতে ব্যবহার করা হয়।
তেঁতুলের পুষ্টিগুণ
তেঁতুলের পুষ্টিগুন পরিমাণে অনেক বেশি। নিচে তেঁতুলের পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো –
- ম্যাগনেসিয়াম:২৮%(RDI)
- পটাশিয়াম:২২%(RDI)
- আয়রন: ১৯%(RDI)
- ক্যালসিয়াম:৯%(RDI)
- ফসফরাস: ১৪%(RDI)
- ভিটামিন বি 1:৩৪%(RDI)
- ফাইবার:৬ গ্রাম(RDI)
- ভিটামিন বি 2 :১১%(RDI)
- ভিটামিন বি 3:১২%(RDI)
- প্রোটিন:৩ গ্রাম (RDI)
- ফ্যাট:১ গ্রাম (RDI)
এছাড়া তেঁতুলে ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “কে”, ভিটামিন “বি 6”, ফোলেট, ভিটামিন “বি 5”, এবং কপার রয়েছে।
তেঁতুলের উপকারীতা
স্কেলিটাল ফ্রুরোসিস (skeletal fluorosis) এক ধরণের দাঁতের রোগ। তেঁতুল এই রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। পাকা তেঁতুল রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে হাত-পায়ের জ্বালা কমে। নিচে তেঁতুলের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
হার্টের জন্য ভালো:
তেঁতুল হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এতে ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো পলিফেনল রয়েছে, যা আমাদের শরীরে LDL (“খারাপ”) কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
হাই কোলেস্টেরল আছে এমন হামস্টারদের (hamsters) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, তেঁতুল খাওয়ার ফলে LDL (“খারাপ”) কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের (এক ধরণের ফ্যাট) মাত্রা হ্রাস পেয়েছে।
যেটা আমাদের হার্টের জন্য খুবই ভালো। তেঁতুলে উপস্থিত উচ্চ পটাশিয়াম রক্ত চাপ কম রেখে আমাদের হার্টকে সুস্থ্য রাখে।
হজম শক্তি বাড়ায়:
পেট ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্যতা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে তেঁতুলের সাহায্য নিন। তেঁতুলে টারটারিক অ্যাসিড থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে। পেটের গ্যাস্ট্রিক, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী।
এখনো আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় তেঁতুলের পাতা ডায়রিয়া সারাতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া তেঁতুল গাছের ছাল এবং শিকড় পেটের সমস্যা দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে:
আমরা জানি যেকোনো টক জাতীয় খাবারই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো। তেঁতুল রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
এতে উপস্থিত এক ধরণের এনজাইম যার নাম alpha-amylase রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
ক্ষত সারিয়ে তুলতে:
যেকোনো ক্ষত সারতে ভিটামিন “সি” খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তেঁতুল গাছের পাতা এবং ছাল অ্যান্টি-সেপটিক এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল‚ ফলে ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়:
তেঁতুলের মধ্যে উচ্চ পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম আছে। ম্যাগনেসিয়াম আমাদের দেহে ৬০০ টিরও বেশি কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। তেঁতুলে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার কমাতে সাহায্য করে।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার তাৎক্ষণিকভাবে উপশম হয় কাঁচা অথবা পাঁকা তেঁতুল খেলে।
ত্বক উজ্জ্বল করে:
যে কোনো টক জাতীয় ফলই আমাদের ত্বকের জন্য ভালো। প্রমাণ হয়ে গেছে তেঁতুল ক্ষতিকারক সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও যাদের ব্রণ আছে তাদের জন্যেও তেঁতুল উপকারী। তেঁতুলে থাকা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের এক্সফলিয়েশন করতেও সাহায্য করে যার ফলে মৃত কোষ উঠে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।
সর্দি কাশি কমে:
তেঁতুলে antihistaminic properties প্রপার্টি আছে যার ফলে এলাৰ্জি হতে দেয় না। এছাড়াও এতে উপস্থিত ভিটামিন “সি” শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে সর্দি কাশি হওয়ার প্রবণতা কমে।
সতর্কতা:
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।