কাঁকরোল দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, তারুণ্য ধরে রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
“কাঁকরোল” খুব কচি, ছোট্ট কাঁঠালের মত দেখতে কাটা কাটা সবুজ রংয়ের একটি সবজি।
সকাল বেলা গরম ভাতে কাঁকরোল ভর্তা বা কাঁকরোল ভাজি, খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি খাবারের আইটেম। বিভিন্ন মাছের সাথে কাঁকরোলের কেমিস্ট্রিও একেবারে অনবদ্য।
আপনি একবার খেলে এর প্রেমে পড়ে যাবেন। কাঁকরোলের কালিয়া, কাঁকরোল ঘন্ট, কাঁকরোল ভাজি আরো যে কত পদ রয়েছে তা বলা মুশকিল। বর্ষাকালের এই সময়টাই বাজারে প্রচুর কাঁকরোল পাওয়া যায়।
বাংলায় কাঁকরোল নামে চিনলেও এর ইংরেজি নাম Spine gourd. এটি আরো অনেকগুলো নামে সুপরিচিত যেমন: Teasle gourd, bristly balsam pear, prickly carolaho, kantola, kakrol, Ban karola, or small bitter-gourd.
এটি Cucurbitaceae/gourd পরিবারের এক প্রজাতির flowering plant. এর বৈজ্ঞানিক নাম Momordica dioica (মোমরডিকা ডাইওকা)। মৌসুমী শাকসবজি অসুস্থতা এবং ফ্লুর বিরুদ্ধে লড়াই করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কাঁকরোলের পুষ্টিগুণ
কাঁকরোল অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। নিচে কাঁকরোলের পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো –
- ক্যালসিয়াম: ০.৫ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম: ১.৫ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম: ৪.৩ মিলিগ্রাম
- আয়রন: ০.১৪ মিলিগ্রাম
- জিংক: ১.৩৪ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন: ১৯.৩৮%
- ক্যালোরি: ৪.১ কিলোক্যালরি
- ফ্যাট: ৪.৭%
- মোট ফেনোলিক যৌগ: ৩.৭ মিলিগ্রাম
- ফাইটিক অ্যাসিড: ২.৮ মিলিগ্রাম
কাঁকরোলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
আয়ুর্বেদে কাঁকরোলে শীতলকরণ, বেদনানাশক, ঘুমদায়ক এবং মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য আছে বলে মনে করা হয়।
আয়ুর্বেদে, এটি মূত্রত্যাগ, শ্বাসযন্ত্রের ব্যাধি, এবং প্রদাহ ও মলদ্বারের সাথে সম্পর্কিত অনেক রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট এবং বমিভাব প্রতিরোধ করতে এটি নতুন মায়েদের খাওয়া উচিত।
অ্যান্টি অ্যালার্জিক বৈশিষ্ট্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
কাঁকরোল সাধারণত বর্ষার সময় পাওয়া যায়। এর অ্যান্টি-অ্যালার্জেন এবং অ্যানালজেসিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি মৌসুমী কাশি-সর্দি এবং অন্যান্য এলার্জি নিরাময় করতে সহায়ক।
কাঁকরোলে অ্যান্টিএলার্জিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল, অ্যানালজেসিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রভাব:
এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চিনির মাত্রা হ্রাস করে কারণ এটি Plant insulin বা উদ্ভিদের ইনসুলিন সমৃদ্ধ।
কোনও কিছুতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি এবং পানির পরিমাণ বেশি হলে সেটা ডায়াবেটিসযুক্ত ডায়েটের জন্য দুর্দান্ত এবং কাঁকরোল দুটো গুনেই গুণান্বিত। কাঁকরোলের হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এটি ইনসুলিনের নিঃসরণ এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উভয়ই বাড়িয়ে তোলে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য, এটি হালকা সেদ্ধ বা ভাজি করে খাওয়া যেতে পারে বা অন্যান্য শাকসবজির সাথে জুস করে খাওয়া যায়।
হজম সিস্টেম উন্নত করে:
কাঁকরোল সবজিটি শীতল প্রকৃতির এবং হজম করা সহজ। সজ্জা এবং বীজগুলি দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং গ্যাস্ট্রিক আলসার, পাইলস এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো স্বাস্থ্যগত রোগগুলির হাত থেকে রেহাই দেয়।
উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং হার্ট ভালো রাখে:
কাঁকরোলের তাজা রস উচ্চ রক্তচাপযুক্ত লোকদের জন্য উপকারী। এটি রক্ত সঞ্চালন এবং উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়াকলাপের কারণে এথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
এটিতে অ্যান্টিলিপিড পারক্সিডেটিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাই ধমনীর দেয়ালকে সুরক্ষা দেয় এবং হার্ট-এর রোগ নিরাময় করে।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়:
কাঁকরোলে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ভিটামিন, বিটাক্যারোটিন ও অন্যান্য উপাদান থাকে, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করার পাশাপাশি চোখের ছানি প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁকরোলের পুষ্টি উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার কোষের সংখ্যা বৃদ্ধিকে ধীর গতির করতে পারে।
এতে নির্দিষ্ট একটি প্রোটিন থাকে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করতে পারে।
ত্বক ভালো রাখে বা তারুণ্য ধরে রাখে:
কাঁকরোলে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন “সি” রয়েছে। এটি ত্বককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে কারণ এতে বিটা-ক্যারোটিন, লুটিন এবং জ্যাক্সানথিনের মতো বিভিন্ন ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা প্রতিরক্ষামূলক স্ক্যাভেঞ্জার হিসাবে কাজ করে।
এটিতে অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা বয়সের এবং দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শরীরের মুক্ত র্যাডিকেলগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে।
বিষণ্ণতা প্রতিহত করে:
কাঁকরোলে অনেকগুলি ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে যা নার্ভাস সিস্টেমের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। তাই বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
সতর্কতা
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন।
আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
সূত্রঃ TheIndianExpress, healthbenefitstimes
রেফারেন্স:
Spine gourd kakrol benefits
Spiny gourd