ডার্ক চকলেট মস্তিস্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ কমায় ও ত্বকের জন্য ভালো।
চকলেট কেনা পছন্দ করে শিশু কিংবা বুড়ো প্রত্যেক বয়সের মানুষ চকলেট খেতে খুবই পছন্দ করে। চকলেট বার থেকে শুরু করে চকলেট কেক, চকলেট মিল্ক শেক, চকলেট ব্রাউনি, চকলেট পেস্ট্রি- নাম শুনলেই সকলের জিভে জল চলে আসে।
চকলেট এর মূল উপাদান হচ্ছে কোকোয়া। এটি তিতা স্বাদযুক্ত এই তেতো স্বাদ দূর করতে এতে দুধ, চিনি যোগ করে চকলেট বানানো হয়।
বাজারে আমরা সাধারণত দুই প্রকার চকলেট দেখতে পাই একটি হচ্ছে ডার্ক চকলেট আর অন্যটি হচ্ছে মিল্ক চকলেট।
ডার্ক চকলেটে কোকোয়ার পরিমাণ ৭০% বা তার বেশি থাকে এবং চিনির পরিমান কম থাকে। আজ আমরা ডার্ক চকলেটের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
ডার্ক চকলেট না মিল্ক চকোলেট?
হ্যাঁ, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রথমে বলি কোকো পাউডার। কোকো পাউডার কোকো বীজ থেকে তৈরি যাতে প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রয়েছে। এছাড়া কোকো পাউডার শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
আবার আসি অন্ধকার ডার্ক চকলেট এবং মিল্ক চকলেট উভয়তেই সেই স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে যা কোকো পাউডারে আছে।
তবে মিল্ক চকলেটে ১০% কোকো পাউডার এবং ডার্ক চকোলেটে কোকো পাউডার রয়েছে ৯০%। আপনি যত বেশি কোকো পাচ্ছেন, তত বেশি স্বাস্থ্য সুবিধা পাবেন।
এর পরে প্রশ্ন আসবে যদি ১০% কোকো পাউডার থাকে তবে বাকি কী? বুঝতে পারছেন কিছু! বাকিটা চিনি এবং দুধ। মিল্ক চকোলেটে চিনি বেশি থাকে, তারপর দুধ এবং চকলেট। তাই তো মিল্ক চকোলেট বাচ্চাদের দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
আর একটি ডার্ক চকলেটে মিল্ক চকোলেটের তুলনায় চিনি এবং দুধ কম থাকে এবং কোকো পাউডারে বেশি থাকে।
যেহেতু ডার্ক চকলেটে বেশি কোকো রয়েছে, তাই এতে ফাইবার, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও বেশি রয়েছে। তাই ডার্ক চকলেট আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ডার্ক চকোলেটের পুষ্টি উপাদান
কোকো গাছের বীজ থেকে তৈরি তাই ডার্ক চকলেট অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর অন্যতম সেরা উৎস। এছাড়া এতে রয়েছে –
- ফাইবার: ১১ গ্রাম
- আয়রন: ৬৭%
- ম্যাগনেসিয়াম: ৫৮%
- কপার: ৮৯%
- ম্যাঙ্গানিজ: ৯৮%
এতে প্রচুর পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং সেলেনিয়ামও রয়েছে। ডার্ক চকোলেট এর ফ্যাটি অ্যাসিড প্রোফাইলটিও দুর্দান্ত। এতে ক্যাফিন এবং থিওব্রোমিনের মতো উত্তেজক উপাদান রয়েছে তবে কফির তুলনায় ক্যাফিনের পরিমাণ খুব কম।
ডার্ক চকোলেটের স্বাস্থ্য উপকারিতা
ডার্ক চকোলেটের স্বাস্থ্য উপকারগুলি মূলত এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভানলগুলি থেকে আসে। নিচে ডার্ক চকোলেটের স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো –
ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়:
ডার্ক চকোলেট পলিফেনলস, ফ্ল্যাভানলস এবং কেটেকিনস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফ্রি র্যাডিকেল এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করে।
যার ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়া অনেকাংশে কমে যায়।
রক্তচাপ হ্রাস করে:
ডার্ক চকোলেটের ফ্ল্যাভ্যানল শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন করে। নাইট্রিক অক্সাইডের ফলে রক্তনালীগুলি প্রশস্ত হয়, যা রক্ত প্রবাহকে উন্নত করে এবং রক্তচাপকে হ্রাস করে।
খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করে:
ডার্ক চকোলেট খাওয়ার ফলে হার্টের রোগের বেশ কয়েকটি ঝুঁকি কমাতে পারে। তার মধ্যে একটি হলো LDL খারাপ কোলেস্টেরল উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে এবং HDL ভাল কোলেস্টেরল উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।
হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে:
যারা নিয়মিত ডার্ক চকলেট খান তাদের হার্ট অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো থাকে। ডার্ক চকলেট উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে, যেটি হার্ট সুস্থ্য রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৪৭০ জন পুরুষদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোকো পাউডার ১৫ বছরের সময়কালে ৫০% হার্টের অসুখের ঝুঁকি হ্রাস করে।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি সপ্তাহে ৫ বারের বেশি ডার্ক চকোলেট খাওয়া ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি ৫৭% হ্রাস পায়।
ত্বকের জন্য ভালো:
চকলেট তৈরির মূল উপাদান কোকোয়া। কোকোয়া বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ ফ্ল্যাভোনলে ভরপুর যা ত্বকের জন্য দুর্দান্ত।
ফ্ল্যাভোনল সূর্যের ক্ষতির হাত থেকে ত্বকে রক্ষা করতে পারে, ত্বকে রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে পারে এবং ত্বককে হাইড্রেশন করতে পারে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে:
ডার্ক চকোলেট মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, পাঁচ দিনের জন্য উচ্চ-ফ্ল্যাভানল যুক্ত ডার্ক চকলেট খাওয়া ফলে মস্তিস্কে রক্ত প্রবাহকে উন্নত হয়।
বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ডার্ক চকলেটে থাকা কোকো পাউডার জ্ঞানীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করতে পারে।
আমরা যা খাবো পরিমিত পরিমানে খাবো। আমি বলছি না যে ডার্ক চকলেটের ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো নয়। ডার্ক চকলেট তার মানে এটা নয় যে প্রতিদিন খেতে হবে।