ডিমকে কেন পৃথিবীর অন্যতম স্বাস্থ্যকর খাবার বলা হয়?
ডিমকে “প্রকৃতির মাল্টিভিটামিন” হিসাবে অভিহিত করা হয়। সব বয়সের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে ডিম। ডিমের সাদা অংশটুকু উচ্চ মানের জৈব আমিষ, আর কুসুমে স্নেহ পদার্থ, লৌহ ও ভিটামিন থাকে।
শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় গড়নে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকরী। কেননা ডিমে রয়েছে ভিটামিন “এ”, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
আবার কুসুমে আছে ভিটামিন “ডি”, যা হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ১ টি করে ডিম খাওয়া খুবই জরুরী।
কারণ, ডিমের পুষ্টিউপাদান গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই ডিমকে “সুপারফুড” বলা হয়।
কেন ডিমকে পৃথিবীর অন্যতম স্বাস্থ্যকর খাবার বলা হয়?
ডিমে উচ্চমানের প্রোটিন, আয়রন, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন “এ”, ভিটামিন বি-12, ভিটামিন বি-2, ভিটামিন বি-5, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং অন্যান্য পুষ্টিতে পরিপূর্ণ থাকে।
এছাড়া ৫ টি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ৬ গ্রাম প্রোটিন সহ ৯ টি প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ৭৭ ক্যালোরি রয়েছে।
মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি ভিটামিন এবং খনিজ অল্প পরিমাণে ডিমে থাকে। এই কারণে ডিমকে পৃথিবীর অন্যতম স্বাস্থ্যকর খাবার বলা হয়।
পুষ্টি উপাদান
অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে ডিমে। নিচে কয়েকটি পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –
- ভিটামিন “এ”: ৬%
- ফোলেট: ৫%
- ভিটামিন বি 5: ৭%
- ফসফরাস: ৯%
- ভিটামিন বি 12: ৯%
- ভিটামিন বি 2: ১৫%
- সেলেনিয়াম: ২২%
ডিমের উপকারিতা
ডিমের প্রায় সমস্ত পুষ্টিই কুসুমের মধ্যে থাকে, সাদা অংশে কেবল প্রোটিন থাকে। নিচে ডিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো –
উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ:
ডিমে প্রায় ২১ টি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে যা, আমাদের দেহ প্রোটিন তৈরি করতে ব্যবহার করে।
আমাদের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণের প্রোটিন থাকলে ওজন হ্রাস পায়, রক্তচাপ হ্রাস পায় এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ডিম প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস।
একটি বড় ডিম থেকে ৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখা উচিত।
চোখের জন্য ভালো:
ডিমে থাকা লুটিন এবং জেক্সানথিন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উভয়ই কুসুমে পাওয়া যায় যা চোখের রেটিনাতে জমা হয়ে চোখকে ক্ষতিকারক সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত পরিমাণে এই পুষ্টি গ্রহণ চোখে ছানি এবং ম্যাকুলার অবক্ষয়ের ঝুঁকিটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ডিমের কুসুম খাওয়ার ফলে জ্যাক্সানথিনের মাত্রা ১১৪-১৪২% এবং লুটেইন ২৮-৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
হার্টের রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়:
আমাদের শরীরে HDL (ভালো কোলেস্টেরল) বৃদ্ধি করে ডিম। যাদের শরীরে HDL উচ্চ মাত্রাই রয়েছে তাদের হার্টের রোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কম থাকে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ছয় সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুটি ডিম খাওয়ার ফলে HDL এর মাত্রা ১০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
মস্তিষ্ক এর জন্য ভালো:
ডিম কোলিনের ভালো উৎস যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন শিশুদের একটি করে ডিম খাওয়ালে মেধা বিকাশে সহায়তা করবে।
গর্ভাবস্থা এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর মায়েদের জন্য কোলিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য কোলিন প্রয়োজনীয়।
ওজন কমাতে:
ডিম উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত খাদ্য। ডিমে থাকা প্রোটিন আমাদেরকে অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে।
এটি কোনও ব্যক্তির সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণ এবং বার বার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করতে পারে। ফলে ওজন কমে পাশাপাশি শক্তিশালী পেশী গঠনে সহায়তা করে।
সতর্কতা
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমরা অনেকে উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকি। অনেকের আবার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বেশি। সেক্ষেত্রে, ডিমের কুসুম না খাওয়াই ভালো। তবে অবশ্যই আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
সূত্র: হেলথলাইন