টমেটোর রস ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, ত্বক উজ্জ্বল করে ও কোলেস্টেরল কমায়।

শীতের সবজির রানী বা বাংলার আপেল বা বিলাতি বেগুন যাই বলি না কেনো সবজি এবং সালাদ হিসেবে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ টমেটোর চাহিদা আকাশছোঁয়া।

শুধু টমেটো নয়, এর রসও পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এবং ক্যালোরিফ্যাট কম। সুতরাং, আপনি যদি ওজন কমাতে করতে চান তবে এই পানীয়টি কেবল আপনার জন্য।

সকালে অনেকটা ব্যায়াম করেছেন বা অনেকটা সময় ধরে খাটনির কাজ করে এসেছেন।

মাঝারি সাইজের একগ্লাস টমেটোর জুস শুধু আপনাকে শক্তি সরবরাহ করবে না, সাথে সাথে আপনার শরীরের জন্য পুষ্টির ডিনামাইট হিসাবে কাজ করবে।

আকর্ষণীয়তা, ভাল স্বাদ, উচ্চ পুষ্টিমান এবং বহুবিধ উপায়ে ব্যবহারযোগ্যতার কারণে সর্বত্রই এটি জনপ্রিয়। এ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে।

টমেটোতে লাইকোপেন নামে বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোস্টেট ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের জন্য এটি একটি বিশেষ অর্থকরী সবজি। দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে টমেটো রপ্তানিরও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। রান্নার উপকরণ হিসেবে এবং খাবারের সাথে টমেটো সসও বেশ প্রচলিত।

সোলানেসি (solanaceae) পরিবারের এই ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Solanum Lycopersicum. লাইকোপার্সিকন (Lycopersicon) গণের অন্তর্ভুক্ত, টমেটোর কাণ্ড কোমল ও রসাল।

১৬শ শতকে পর্তুগীজ আবিষ্কারকগণ ভারতে টমেটো নিয়ে আসে। ১৮শ শতকে ইংরেজদের জন্য এটির চাষ হয়। আজও বাংলায় এটি “বিলাইতি বেগুণ” নামে পরিচিত।

এরপর ভারতবর্ষে বিস্তৃতভাবে এটি খাদ্য হিসেবে গৃহীত হয়, কারণ এটি ভারতবর্ষের জলবায়ুর সাথে সাথে খুব মানিয়ে নিয়েছিল, উত্তরাখণ্ড ছিল এর প্রধান উৎপাদন অঞ্চলের মধ্যে একটি।

টমেটো রসের উপকারিতা

উদ্ভিদ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে টমেটো একটি ফল হলেও, সবজি হিসেবেই সারা বিশ্বে টমেটো পরিচিত। সবজি হলেও টমোটোর মধ্যে ফলের সমুদয় গুণ বিদ্যমান এবং ফলের ন্যায় এটি রান্না না করেও খাওয়া যায়।

নিচে টমেটো রসের উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা আলোচনা করা হলো –

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য:

টমেটো রসের অন্যতম বৃহত্তম বৈশিষ্ট্য হল এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। এটি বিটা ক্যারোটিন এবং লাইকোপিন সমৃদ্ধ, যা টমেটোর লাল রঙের জন্য দায়ী এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

এই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টগুলি দেহকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে যা আমাদের কোষের ক্ষতি করে।

 হজম শক্তি বাড়ায়:

নিয়মিত টমেটোর রস খাওয়ার ফলে অন্ত্রের গতি আরও বাড়তে পারে। টমেটোর রস কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়

এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সহায়তা করে। এই রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে।

হার্টের জন্য ভালো:

টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন, ভিটামিন “সি” এবং “ই” ও বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, এগুলি সবই হার্টকে ভালো রাখে।

লাইকোপেন রক্তনালীগুলির দেয়াল শক্তিশালী করতে এবং রক্ত থেকে কোলেস্টেরল অপসারণে সহায়তা করে।

ভালো ডিটক্সিফায়িং এজেন্ট:

টমেটোর রস শরীর থেকে বিষ বের করে দেওয়ার জন্য বিস্ময়কর কাজ করে। ক্লোরিন এবং সালফার সামগ্রীর উপস্থিতি লিভার এবং কিডনিগুলিকে তাদের ডিটক্সিফিকেশন কার্যকারিতা আরও ভালভাবে সম্পাদন করতে সহায়তা করে।

আসলে টমেটোর রসে রয়েছে পটাসিয়াম যা পানির রিটেনশন হ্রাস করে। এছাড়াও এটি শরীরকে ফ্যাট-দ্রবণীয় টক্সিনগুলি অপসারণে সহায়তা করে।

কোলেস্টেরল কমায়:

টমেটোর রসে অতিরিক্ত ফাইবারের উপাদান LDL কোলেস্টেরল (খারাপ কোলেস্টেরল) ভেঙে ফেলতে সহায়তা করে। নিয়াসিনের উপস্থিতি উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রায় উপকারী প্রভাব ফেলতে দেখা গেছে।

চোখের স্বাস্থ্য বাড়ায়:

টমেটোর রস বিটা ক্যারোটিন, লুটিন এবং জেক্সানথিনের মতো ফাইটোনিট্রিয়েন্টস এবং ভিটামিন “সি”ও রয়েছে।

এইসব উপাদান চোখকে বয়সের সাথে সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় এবং ছানির সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে।

টমেটোর রস ট্যানিং থেকে মুক্তি পেতে, ত্বকের বিবর্ণতা দূর করতে, ব্রণের চিকিৎসা করতে সহায়তা করে এবং তৈলাক্ত ত্বকে সেবুমের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো করবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে করবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো চিকিৎসকের তত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করলে বা বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করলে অবশ্যাই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স: