সাবু দানা শক্তি বৃদ্ধি করে, শরীর ঠান্ডা রাখে ও হার্টের জন্য ভালো।

দেখতে সাদা মুক্তোর মতো ছোট ছোট দানা। কম বেশি সবাই এটার সাথে পরিচিত। ফালুদা তৈরি করার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।

একটু চিন্তা করে বলুন তো কিসের কথা বলছি? ঠিক ধরেছেন আমি সাবুর কথাই বলছি।

বিশ্বের কিছু কিছু জায়গায় সাবুকে কার্বহাইড্রেট (শর্করা) এর প্রাথমিক উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

জ্বর হলে কোনো কিছু খেতে ভালো লাগেনা মুখে রুচি থাকেনা। তাই এই সময় অনেক ডাক্তার সাবু খাওয়ার পরামর্শ দেন। আসলেই জ্বরে, সাবু উত্তম একটি খাবার।

ভালো করে জ্বালিয়ে নিয়ে তার মধ্যে লবণ ও লেবুর রস দিয়ে খেতে পারলে অনেক উপকার হয়। জ্বরে সাবু খেলে জ্বরের দুর্বলতা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়।

গরমের দিনে সাবু দানা একটি দুর্দান্ত খাবার হতে পারে। আয়ুর্বেদ অনুসারে, সাবু শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। সাবুদানা প্রোটিনের একটি ভাল উৎস এবং পেশী বিকাশকে সহায়তা করে।

এটি ফাইবার এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এবং এনার্জি বুস্টার হিসাবেও পরিচিত।

সাবুদানা কিভাবে তৈরি হয়?

সাবুদানা কিভাবে তৈরি হয়, তা কিন্তু জানেন না অনেকেই। টাপিওকা নামের একটি গাছের শেকড় থেকে স্টার্চ বা শর্করা সংগ্রহ করা হয়। এরপর তা থেকে সাবুদানা তৈরি করা হয়।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সাবুদানা কি নিরাপদ?

স্টার্চ বেশি থাকায় সাবুদানা অনেকটা সাদা ভাত বা আলুর মতোই, ডায়াবেটিস রোগীদের তাই নিয়মিত খাওয়া ঠিক নয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের সাবু খেতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ মতো খেতে হবে।

সাবুদানার পুষ্টি উপাদান

নিচে সাবু দানার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো:

  • ক্যালোরি: ৩৩২
  • প্রোটিন: ১ গ্রাম
  • ফ্যাট: ১ গ্রাম
  • কার্বস: ৮৩ গ্রাম
  • ফাইবার: ১ গ্রাম
  • জিঙ্ক: ১১% (RDI)

সাবুর উপকারিতা

ইংরেজিতে সাবুকে sagu, sabudana, sago pearl ইত্যাদি বলা হয়। ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সাবুতে তুলনামূলক কম থাকে। নিচে সাবু বা সাবু দানার উপকারিতা দেওয়া হলো:

হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়:

রক্তের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চ মাত্রা হল হার্টের রোগের কারণ। সাবুতে উচ্চ পরিমাণের এমিলস (amylose) রয়েছে যা এক ধরণের শর্করা।

এমিলস লিনিয়ার চেইনযুক্ত এক প্রকার গ্লুকোজ যা হজম হতে বেশি সময় নেয়।

চেইনগুলি ধীরে ধীরে ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথে তারা নিয়ন্ত্রিত হারে চিনি ছেড়ে দেয়, যা আপনার কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ঠিক রাখতে পারে।

ফলে সাবু হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।

কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে:

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে সাবু শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৮ জন সাইক্লিস্টদের (যারা সাইকেল চালায়) একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ব্যায়াম করার সময় সাবু দানা গ্রহণ করায় ব্যায়াম করার শক্তি ৩৭% বৃদ্ধি পেয়েছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্যায়াম করার পরে সাবু দানা গ্রহণ দেহের শক্তি পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে:

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করে।

ফ্রি রেডিকাল আমাদের দেহে বৃদ্ধি পাওয়া মানে, সেলুলার ক্ষতি যা ক্যান্সার এবং হার্টের রোগের জন্য দায়ী।

টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ট্যানিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো পলিফেনল সাবুতে পরিমাণে বেশি থাকে। যা আমাদের দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।

রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ (প্রতিরোধী শর্করা) রয়েছে:

সাবু দানাতে প্রায় ৭.৫% রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ (প্রতিরোধী শর্করা) রয়েছে। রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ (প্রতিরোধী শর্করা) যা হজম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়, কিন্তু হজম হয় না।

প্রতিরোধী স্টার্চ কোলনে পৌঁছায় এবং অন্ত্রে ব্যাকটিরিয়ার খাবার হিসাবে কাজ করে।

এই ব্যাকটেরিয়াগুলি প্রতিরোধী স্টার্চ ভেঙে দেয় এবং সংক্ষিপ্ত-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড (SCFA) এর মতো যৌগ তৈরি করে।

অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিরোধী স্টার্চ এবং SCFA রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনে, ক্ষুধা হ্রাস এবং হজমের জন্য ভালো।

সতর্কতা:

সাবু দানাতে ব্রাউন রাইস, ওটস এবং আস্ত গমের তুলনায় প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজের পরিমাণ কম। তারপরও সাবু আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

তবে আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: