সাধারণ মাসিক ও লোচিয়া কি এক? যারা বাচ্চাকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ান তাদের মাসিক কি দেরিতে হয়?

সাধারণ মাসিক ও লোচিয়া এক নয়। লোচিয়া সাধারণত ক্রিমি সাদা থেকে লাল রঙের হয়। এটিতে একটি মিষ্টি গন্ধও থাকতে পারে আবার এটিতে মাসিক স্রাবের মতো বাসি, দুর্গন্ধযুক্ত গন্ধও থাকতে পরেও।

লোচিয়া এবং আপনার পিরিয়ডের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল যে, লোচিয়া হালকা এবং কিছুটা জলযুক্ত হয়। সাধারণতঃ বাচ্চা প্রসবের পরে চার সপ্তাহ বা মাসখানেক ব্লিডিং হয়ে থাকে। এরপর এটি কমে গিয়ে সাদা রংয়ের যোনিস্রাব চলে। এরপর আবার মাসিক।

লোচিয়ার পরপরই পিরিয়ড শুরু হতে পারে?

কিছু মহিলাদের প্রথম প্রসবোত্তর পিরিয়ড হয় লোচিয়ার অল্প কিছুদিন পরে, অনেকের ক্ষেত্রে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে, বিশেষ করে যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে।

যখন কোনও মহিলার পিরিয়ডের পরিবর্তনগুলি বেদনাদায়ক বা অন্যথায় উদ্বেগজনক হয়, তখন একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলা ভাল, যিনি লক্ষণগুলি উপশম করতে সহায়তা করতে পারেন।

আপনার সি-সেকশন হয়েছে বা যোনিপথে প্রসব করা হোক না কেন, জন্ম দেওয়ার পর আপনার ছয় থেকে আট সপ্তাহ রক্তক্ষরণ হবে। যাইহোক, এটি ঋতুস্রাব হিসাবে বিবেচিত হয় না। একে লোচিয়া বলা হয়।

বাচ্চা হওয়ার পুরো প্রসেসটা একেবারে সহজ ভাবলে ভুল হবে এবং মায়ের শরীরের অনেক পরিবর্তন দেখা যায়।  ডেলিভারির পরে শরীর চেষ্টা করে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে।

বেশ কিছুদিন বা অনেকের ক্ষেত্রে কিছু সপ্তাহ এই লোচিয়া স্থায়ী থাকে। দিনের পর দিন ব্লিডিং-এর পরিমাণ কমতে থাকে এবং রং হাল্কা হতে থাকে। ঘন লাল বা কালচে লাল রং-এর ডিসচার্জ ধীরে ধীরে গোলাপি এবং শেষ পর্যায়ে সাদাটে, স্বচ্ছ হয়ে যায়।

এইসময় তলপেটে পিরিয়ডের মতোই ব্যথা হতে পারে কারণ জরায়ুর সংকোচন শুরু হতে থাকে। শরীরের ওপর ভিত্তি করে এই লোচিয়া ২৪-৩৬ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে, এই স্থায়িত্বের কম বেশি হতেই পারে। লোচিয়া ও মাসিক সম্পূর্ণ আলাদা।

যারা বাচ্চাকে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিড করান, তাদের জন্য ব্যাপারটা কেমন?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে মায়েরা বাচ্চাদের শুধুমাত্র বুকের দুধই খাওয়ান; তাদের মাসিক খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসে না। এর জন্য দায়ী অবশ্যই হরমোন। প্রোল্যাকটিন নামের যে হরমোন ব্রেস্টমিল্ক তৈরি করে; সেইটি জননে জড়িত হরমোন বা রিপ্রোডাক্টিভ হরমোনগুলিকে দাবিয়ে রাখে।

ফলস্বরূপ মায়ের শরীরে পুনরায় অভ্যুলেশন বা ডিম্বস্ফোটন শুরু হয় না। আর এর ফলেই স্বাভাবিকভাবেই পিরিয়ড হয় না।

পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলে সেটা কি ব্রেস্টমিল্কের সাপ্লাই কমিয়ে দেয়?

না, একেবারে কমিয়ে দেয় এটা বলা ঠিক হবে না। তবে, কিছুটা প্রভাব অবশ্যই ফেলে। ডেলিভারির পরে যখন পুনরায় মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হয়; তখন ব্রেস্ট মিল্কের পরিমাণে বা তার প্রতি বাচ্চার আচরণে কিছুটা পরিবর্তন হলেও হতে পারে।

আসলে মাসিক শুরু হলে বুকের দুধের স্বাদ কিছুটা পরিবর্তন হয়। বাচ্চা দুধ খেতে চাই না। মুখে নিয়ে কাঁদতে থাকে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়।