শীতকালীন শিম ব্রেইনের জন্য ভালো ও হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে।
সুস্বাদু, হালকা মিষ্টি স্বাদের শীতকালীন শিম (Lablab bean) খুবই পুষ্টিকর। রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধের অসাধারন গুণ আছে। এছাড়াও যারা চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে চিন্তিত তাদের জন্য শীতকালীন শিম বেশ উপকারী। শীতকালীন শিম সকলের খুবই পছন্দের একটি সবজি।
আমিষসমৃদ্ধ এই শিম (lablab bean) তরকারি, ভাজি, ভর্তা এবং মাছের ঝোলেও খাওয়া যায়। শীতকালীন এই শিম দিয়ে রুই মাছের ঝোল খেতে খুব ভালো লাগে। এছাড়া শোল মাছ, শিং মাছ, তেলাপিয়া মাছ ও শুটকি মাছও এই শিম দিয়ে খেতে খুব মজা লাগে।
শিমের বীজ প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ বলে, বাঙালিদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই শিমের বীজের ভুনা বা শিমের বীজের ডাল রান্না করে খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। নিরামিষ শিম আলুর তরকারি রুটি পরোটা দিয়ে খেতে পারেন।
সরষে ফোঁড়ন ও নারকেল কোরা দিয়ে শিম ঘন্ট বা ভাজি নামানোর আগে একটু সরষে বাটা দিয়ে নামিয়ে নিন ব্যাস আর কোন পদ দরকারই হবে না। বাচ্চারা শিম খেতে পছন্দ না করলেও শিমের বীজ বাচ্চাদের খুবই পছন্দের একটি খাবার।
শিমের পুষ্টি উপাদান
নিচে শিমের পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –
- শক্তি: ৫০ক্যালরি
- কার্বহাইড্রেট: ৯.২ গ্রাম
- চর্বি: ০.২৭ গ্রাম
- প্রোটিন: ২.৯৫ গ্রাম
- ফোলেট (বি 9): ১২%(DV)
- ভিটামিন “সি”: ৬% (DV)
- ক্যালসিয়াম:৪% (DV)
- আয়রন: ৬% (DV)
- ম্যাগনেসিয়াম: ১২%(DV)
- ফসফরাস: ৭% (DV)
- পটাসিয়াম: ৬% (DV)
- কপার: ৪%(DV)
শীতকালীন শিমের উপকারিতা
শীতকালীন শিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো –
ব্রেইনের জন্য ভালো:
কপার আমাদের ব্রেইনের জন্য খুবই কার্যকরী। এটা আমাদের কাজের ফোকাস কে ঠিক রাখে এবং আমাদের মনকে চাঙ্গা রাখে। শরীরে কপারের অভাব হলে ক্ষুধা কম লাগে, কাজের প্রতি ফোকাস থাকে না। শিমে প্রচুর কপার থাকায় এটি আমাদের ব্রেনের জন্য খুব উপকারী।
হার্টের জন্য ভালো:
শীতকালীন শিমে ভিটামিন B1 রয়েছে যা হার্টের রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। কারণ এটি স্বাস্থ্যকর ভেন্ট্রিকুলার ফাংশন বজায় রাখে এবং হার্ট এটাক হওয়ার আশংক্ষা কমায় ।
ক্যান্সার প্রতিরোধ:
জিংক একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করতে এবং রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। জিংক টিউমার তথা ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
হজম সহায়তা করে:
ফাইবার হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফাইবার মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং শরীর থেকে বর্জ্য দ্রুত পাস করার জন্য সহায়তা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম প্রতিরোধে সহায়তা করে।
অনিদ্রা দূর করে:
কম পুষ্টি গ্রহণ অনিদ্রার অন্যতম কারণ। পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ঘুমের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। শিমে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি আমাদের অনিদ্রার লক্ষণগুলি হ্রাস করে, ঘুমের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
মাড়ির স্বাস্থ্য:
ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজগুলি দাঁত ক্ষয় নিরাময়ে সহায়তা করে। বাচ্চাদের ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজন হয় যা দাঁতগুলির শক্ত কাঠামো গঠনে সহায়তা করে। শিমে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকায় এটি আমাদের মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।
খিঁচুনি রোধ করুন:
শিমে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে যা পেশীগুলির খিঁচুনি হ্রাস করে এবং পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে। পটাসিয়ামের ঘাটতি হল দুর্বল পেশীর অন্যতম কারণ।
খুবই সহজলভ্য এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ শীতকালীন শিম বা দেশি শিম। তাই এই শীতে কেউ মিস করবেন না। মাঝে মধ্যে এই সবজিটিকে খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন।