ময়না ও কোকিল এর গল্প।
সে অনেক কাল আগের কথা। এক বনে ময়না পাখির বান্ধবী ছিলো কোকিল পাখি। ওরা থাকতো কাঁঠাল বাগানে। ময়না পাখি পড়াশোনায় খুব ফাঁকি দিতো। সারাদিন সেজেগুজে থাকতো। অন্য পাখিদের সাথে কথা বলতো না।
সে ছিলো অহংকারী। আর কোকিল পাখি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতো। সবার সাথে মিশতো। আর বাসায় বসে রান্নাবান্না করতো। রান্না করতে ভালো লাগতো কোকিল পাখির।
একদিন ময়না পাখিকে দাওয়াত দিলো কোকিল পাখি। বললো, আমি তোমাকে রান্না করে খাওয়াবো। শুক্রবার স্কুল বন্ধ শুক্রবার আমাদের বাসায় আসবে তুমি? ময়না বললো, ঠিক আছে, আসবো।
তুমি আমার জন্য ভালো ভালো খাবার তৈরি করে রাখবে। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোকিল রান্না করলো অনেক ভালো ভালো খাবার।
তারপর অপেক্ষা করতে করতে বিকেল হয়ে গেলো। ময়না আসছে না দেখে কোকিল উড়ে গেলো ময়নার বাসায়।
গিয়ে দেখলো ময়না বসে বসে সাজছে। কোকিল বললো, এখনো সাজলে হবে? ওদিকে আমার রান্না করা খাবার তো সব ঠান্ডা হয়ে গেলো।
ময়না বললো, আমি কী করবো? আমাকে কি সাজতে হবে না? আমি কি তোমার মতো নোংরা পাখি? তুমি বলেছো তাই আমি রাজি হয়েছি অন্য পাখি হলে তো আমি যেতেই রাজি হতাম না।
একটু বসো আমি রেডি হয়ে তোমার সাথেই যাবো। কোকিলের মন খারাপ হলো। তবুও বসে অপেক্ষা করলো অনেক সময়। অপেক্ষা করতে করতে রাত হয়ে গেলো। তবু ময়নার সাজ শেষ হয় না।
শেষে রেগেমেগে কোকিল চলেই গেলো নিজের বাসায়। এদিকে ময়না সাজতে সাজতে দেখে যে রাত হয়ে গেছে। তাই নিজের বাসাতেই শুয়ে থাকলো।
পরের দিন ইশকুলে কোকিলের সাথে দেখা হলো ময়নার। ময়না বললো, কিছু মনে করো না।
আমার সাজতে দেরি হয়ে গেছে বলে আর যাওয়া হয়নি। এক কাজ করো। আগামী শুক্রবার আমার বাসায় তোমার দাওয়াত। আমি তোমাকে রেধে খাওয়ালে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে। কোকিল বললো, ঠিক আছে। আমি যাবো।
পরের শুক্রবার কোকিল দুপুরের আগেই চলে গেলো ময়নার বাসায়। গিয়ে দেখলো ময়না বসে বসে সাজুগুজু করছে। কোকিল বললো, কি গো ময়না, আমার জন্য রান্না করো নাই? ময়না বললো, কেমন ছোঁচা তুমি! এসেই খাই খাই করছো?
একটু বসো আমি সেজেগুজে তবেই রান্না করবো। কোকিল অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু ময়নার সাজ শেষ হয় না। রাত হয়ে গেলো। কোকিল রেগে চলে গেলো নিজের বাসায়।
পরের দিন দুজনের সাথে আবার দেখা হলো। ময়না বললো তোমার এত রাগ কেন? একটু অপেক্ষা করতে পারলে না? আমার সাজ শেষ করে তোমাকে খুঁজেই পেলাম না। কোকিল মনে মনে ভাবলো ময়নাকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার।
তাই ময়নার সাথে কোনো কথা না বলে একজন মানুষের কাছে গেলো। গিয়ে বললো ময়না পাখির সাজুগুজু অহংকারী ভাব আর পড়াশোনা না করার বদ অভ্যাসের কথা। আরও বললো, ময়নাকে একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার।
মানুষটা বললো, ঠিক আছে আমি সবাইকে বলে দেবো ময়নাকে দেখলেই যেন ধরে খাঁচায় বন্দি করে রাখে। আর জোর করে পড়াশোনা শেখায়। তবেই ওর শিক্ষা হবে। কিন্তু বিনিময়ে তুমি আমাকে কী দেবে? কোকিল বললো,
আমি খুব ভালো গান গাইতে জানি। তোমরা যদি অহংকারী ময়নাকে শিক্ষা দিতে পারো তাহলে আমি প্রতি বসন্তে তোমাদের গান শোনাবো।
পরের দিন মানুষটা ওই সাজুনে ময়নাটাকে ধরে খাঁচায় আটকে দিলো। আর পড়াশোনা শেখাতে লাগলো।
সেই সাথে সব মানুষকে বলে দিলো ময়না পাখি দেখলেই ধরে যেন বন্দি করে রাখে। কোকিল খুশি হয়ে গলা ছেড়ে বনে ঘুরে ঘুরে গান গাইতে লাগলো।
সেই থেকে ময়না পাখি খাঁচায় থেকে মানুষের শেখানো কথা বলে। আর কোকিল পাখি প্রতি বসন্তে মনের সুখে গান গেয়ে বেড়ায়।