পুদিনা চা হজম সমস্যা দূর করে, এলার্জি কমায় ও নিঃশ্বাস সতেজ রাখে।
পুদিনা পাতা আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। এর মূল, পাতা, কান্ড ওষুধীগুনে পরিপূর্ণ।
ইউরোপ এবং এশিয়ায় হাজার হাজার বছর ধরে পুদিনা মনোরম, মিষ্টি স্বাদ এবং স্বাস্থ্যের সুবিধার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সুগন্ধি হিসাবে রান্নায়ও পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়। রান্নায় সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার ছাড়াও পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি চা শরীরের জন্য খুবই উপকারী যা মুহূর্তেই আপনার শরীরকে করবে চাঙ্গা।
এই চা প্রাকৃতিকভাবে সতেজক, ক্যাফেইন-মুক্ত চা। পাশাপাশি মাথা ব্যথা, সাইনাস এবং পেটের সমস্যার জন্য এটি দারুন উপকারী।
এছাড়াও পুদিনা চা হজমশক্তি বাড়ায় এবং ব্যথা কমায়। এটি মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি দেয়। মুখের দুর্গন্ধ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এই চা কার্যকরী।
গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল কমাতে পুদিনা চা দারুন কাজ করে। এমনকি জ্বর সারাতেও এই চা উপকারী।
পুদিনা চা খাওয়ার উপকারিতা
জেনে নেওয়া যাক, পুদিনা চা খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি-
উচ্চ রক্তচাপ দূর করে:
পুদিনা পাতা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি চা নিয়মিত পান করলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দূর হয় এবং হার্টবিটের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে।
মুখের নানা ইনফেকশনের সমস্যা সমাধান করে:
পুদিনা চাতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাব রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করতে বিশেষ ভাবে সহায়ক।
তাই নিয়মিত পুদিনা পাতার চা পানে মুখের ইনফেকশন জনিত সমস্যা দূর হয়।
দেহের নানা অঙ্গের ব্যথা দূর করে:
মাথা ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা এমনকি পেটে ব্যথার মতো সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে পুদিনা পাতার চা।
পাশাপাশি পুদিনা চা শক্তির মাত্রা উন্নত করতে পারে এবং ক্লান্তি কমাতে পারে।
বিষণ্ণতা দূর করে:
এই চা মানসিক চাপ দূর করে মস্তিষ্ক শিথিল করতে পারে। মানসিক চাপের পাশাপাশি পুদিনা চা দূর করে বিষণ্ণতার সমস্যাও।
স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে:
কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, পুদিনা পাতার চায়ের সুমিস্ট ঘ্রাণ মস্তিষ্ককে সজাগ, সচেতন রাখে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নতিতে সহায়তা করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
পুদিনা পাতার মেন্থল উপাদান নানা ধরণের ক্যান্সারের গঠন হতে বাঁধা দেয়, বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার।
ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত পুদিনা পাতার চা পান করলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বমি বমি ভাব কমায়:
বমি বমি ভাব দূর করতে পুদিনা পাতা খুবই কার্যকরী। নানা কারণে বমি হতে পারে। এই বমি ভাবের সমাধান এক মুহূর্তেই করে দেবে পুদিনা চা।
অ্যাজমা এবং অন্যান্য শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূরে রাখে:
পুদিনার অসাধারণ ঘ্রাণ শ্বাসপ্রশ্বাস নালীর নানা সমস্যা জনিত রোগ দূর করতে সহায়তা করে। পুদিনা চা পানে অ্যাজমা সহ শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাও দূর হয়।
পুদিনা চা সংক্রমণ, সাধারণ ঠান্ডা এবং অ্যালার্জির কারণে জমে থাকা সাইনাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
ঘুম উন্নত করতে পারে:
পুদিনা চা ঘুমতে যাওয়ার আগে পান করা ভালো কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে ক্যাফিন-মুক্ত।
পেশী শিথিলকারী হিসাবে পুদিনা চা ঘুমানোর আগে পান করলে শিথিল ঘুম আনতে সাহায্য করে।
এলার্জি কমায়:
পুদিনাতে রয়েছে রোসমারিনিক অ্যাসিড। রোসমারিনিক অ্যাসিড অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়ার হ্রাস করে। যেমন- নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ চুলকানো এবং হাঁপানি।
২১ দিনের একটি গবেষণায়, যাদেরকে রোসমারিনিক অ্যাসিডযুক্ত মৌখিক পরিপূরক দেওয়া হয়েছিল তাদের নাকের চুলকানি, চোখের চুলকানি এবং অন্যান্য উপসর্গগুলি কম ছিল।
হজম সমস্যা দূর করতে পারে:
পুদিনা গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া এবং বদহজমের মতো হজমের লক্ষণগুলি কমাতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে পুদিনা পাচনতন্ত্রকে শিথিল করে এবং ব্যথা কমিয়ে দেয়।
প্রায় ২,০০০ শিশুদের ১৪ টি ক্লিনিকাল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পুদিনা পাতা পেটে ব্যথার ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা হ্রাস করতে পারে। তাই হজম সমস্যা দূর করতে পুদিনা চা পানের অভ্যাস করুন।
মাথাব্যথা উপশমে সাহায্য করে:
পুদিনা চায়ের সুবাস পেশী শিথিল করতে এবং মাথাব্যথা উন্নত করতে সাহায্য করে। পুদিনা পেশী শিথিলকারী এবং ব্যথা উপশমকারী হিসাবে কাজ করে, এটি মাথাব্যথা হ্রাস করতে পারে।
পেপারমিন্ট তেলের মেন্থল রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং শীতলতা প্রদান করে, ফলে ব্যথা দূর হয়।
মাইগ্রেনের সমস্যা আছে এমন ৩৫ জন মানুষের একটি স্টাডিতে, পিপারমিন্ট তেল কপালে প্রয়োগ করা হয়। এতে দুই ঘণ্টা পরে ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
নিঃশ্বাস সতেজ রাখে:
পুদিনা পাতাতে টুথপেস্ট, মাউথওয়াশ এবং চুইংগামের মতো স্বাদ রয়েছে।
পুদিনাপাতা বা পুদিনা চা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং ব্যাকটিরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম। তাই একে প্রাকৃতিক মাউন্ট ফ্রেশনার বলা যেতে পারে।
যেভাবে তৈরি করবেন পুদিনা চা
২ কাপ পানিতে ১ মুঠো পুদিনা পাতা ধুয়ে সামান্য ছেঁচে দিয়ে ফুটাতে থাকুন। যখন পানি ফুটে ১ কাপ পরিমাণে হবে তখন ছেঁকে নামিয়ে নিন।
মিষ্টির জন্য চিনি অথবা মধু মিশিয়ে পান করুন।