পানি বা জল যখন ওষুধ হয় বা ওষুধ হিসাবে কাজ করে। জলই সর্বোত্তম ঔষধ।
ছোটোখাটো অনেক অসুস্থ্যতায় জল বা পানি ওষুধ হিসাবে কাজ করে অর্থাৎ ডাক্তারেরা জল নির্ধারণ করেন? আপনার তরল ধরে রাখুন(যেমনঃ ডায়রিয়া) এবং প্রচুর বিশ্রাম নিন। প্রচন্ড জ্বরে প্রচুর পানি পানের পাশাপাশি পানি দিয়ে গা মোছা, কপালে জল পটি ও জল দিয়ে মাথা ধোয়া জরুরি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলুন বা প্রচন্ড গরমে ঘেঁমে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পরে মনটা একমাত্র জল বা পানির জন্য হাহাকার করে। আর পেটে পড়তেই ওষুধের মতো কাজ করে, শক্তি যোগায়, ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা, হজম শক্তি বাড়ানো, ওজন কমানো থেকে শুরু করে জয়েন্ট-এর ব্যথা, মুখের দুর্গন্ধ সর্বোপরি মন ভালো রাখে এই প্রকৃতি প্রদত্ত জল বা পানি।
এটি সর্বাধিক অবমূল্যায়িত ওষুধগুলির মধ্যে একটি এবং এটি একেবারে বিনামূল্যে। কোনও স্বাস্থ্য বীমা প্রয়োজন নেই, ব্যবস্থাপত্রগুলির জন্য কোনও লুকানো ব্যয় নেই।
সাধারণ ডায়রিয়ায় কোনো ওষুধপত্র না খেয়ে বিশ্রাম নিন, বারবার বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি খাওয়ার স্যালাইন বা ডাবের পানি পান করুন, বেশি করে তরল খান। এটাই যথেষ্ট।
স্বাস্থ্য সেবায় ইউনিসেফ নবজাতক ও মায়েদের সুপেয় পানি প্রাপ্তির সুযোগ-সুবিধার প্রতি বিশেষ নজর দেয়। কারণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ধাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করে এবং মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমায়।
নিরাপদ পানি এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের সেবাদাতাদের জন্যও অপরিহার্য। নিরাপদ পানির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং উন্নত হাইজিন রোগীদের জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা এবং তার জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায়।
আধুনিক বিশ্বে, অগ্রগতি সত্ত্বেও আমরা আমাদের জল নিরাপদ, অ্যাক্সেসযোগ্য এবং পানীয়যোগ্য করতে পারি নাই। এক কোটি ৯৪ লাখ মানুষ এখনও সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে থাকা আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। এছাড়া পানিতে ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরাইড ও লৌহ দূষণের কারণেও খাওয়ার পানির মান খারাপ থাকে।
বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ পানির উৎসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি মাত্রায় ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি পাওয়া যায়। মলের জীবাণু রয়েছে এমন উৎসের পানি পান করছে ৪১ শতাংশের বেশি মানুষ। এক্ষেত্রে স্বল্প শিক্ষিত নগরবাসী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ২০১৩ সালের জরিপে বলা হয়েছে।
শহরাঞ্চলের এসব পরিবারে যে পানি খাওয়া হয় তার এক তৃতীয়াংশেই উচ্চমাত্রার ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া থাকে, যা ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ।
যাই হোক জল বা পানি অনেক ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ওষুধ হিসাবে কাজ করে। কীভাবে এটি আমাদের অসুস্থ অবস্থায় সুস্থ রাখতে এবং আরও ভাল হতে সাহায্য করে এটা আমরা কম বেশি সকলেই জানি?
জল সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি:
আমাদের দেহ মূলত জল দিয়ে তৈরি। একটি প্রাপ্তবয়স্ক শরীরের প্রায় ৬০% -৭০% এর সমন্বয়ে গঠিত, তাই আপনার প্রয়োজনীয় জল থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা অল্প সময়ের মধ্যে একটি বড় প্রভাব ফেলবে।
আমরা খাবার ব্যতীত কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী বা বেঁচে থাকতে পারি, কিন্তু জল ছাড়া প্রথম দু’দিনের মধ্যে স্বাস্থ্যগত প্রভাব পড়তে শুরু করবে এবং অনুমান করা হয় যে কোনও মানুষ জল বা পানি ছাড়া সবচেয়ে দীর্ঘতম এক সপ্তাহ বা তার কিছু বেশি বাঁচতে পারে।
আমরা অবশ্যই খাবার এবং অন্যান্য তরল থেকে কিছুটা জল পাই। তবে জল বা পানি আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় তরলগুলি পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
জল অসুস্থ্যতা রোধ করতে পারে:
আমরা সকলেই জানি যে, পানীয় জল আপনার পক্ষে অনেক কারণেই ভাল। তবে সম্ভবত পানির বা জলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি হল আমাদের শরীরকে বিষমুক্ত করা। মূত্রের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে বিপজ্জনক টক্সিনগুলি অপসারণে কাজ করে কিডনির সাথে বন্ধুত্ব সহকারে।
ইউরিয়া নাইট্রোজেন আমাদের রক্তের প্রধান টক্সিন যা যখন লিভারে প্রোটিনগুলি ভেঙে যায় তখন তৈরি হয়। কিডনি তারপরে আমাদের রক্ত থেকে ইউরিয়া নাইট্রোজেন সরিয়ে আমাদের প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়।
তবে এই প্রক্রিয়াটির মূল বিষয়টি হল ইউরিয়া নাইট্রোজেন হল জল দ্রবণীয়। জলের অংশ ব্যতীত, আমাদের রক্তে এবং কিডনিতে টক্সিন তৈরি হতে পারে, যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়, অসুস্থতা ঘটে এবং কিছু ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর হয়। পর্যাপ্ত জল দিয়ে বা জলের সাহায্যে কিডনি ক্ষতিকারক ইউরিয়া নাইট্রোজেন শরীর থেকে প্রেরণে বা বের করে দিতে সক্ষম হয়।
সূত্রঃ
https://info.isabelhealthcare.com/blog/why-is-water-so-important-water-is-the-best-medicine