দিনে একটি আপেল সত্যই কি ডাক্তারকে দূরে রাখতে পারে।
আপেল খুবই জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু একটি ফল। আপেল সম্পর্কে একটা প্রবাদ আছে যে ‘An apple a day, keeps the doctor away অর্থাৎ “দিনে একটি আপেল, ডাক্তারকে দূরে রাখে”।
“বিছানায় যাওয়ার সময় একটি আপেল খান এবং ডাক্তারকে দূরে রাখুন।” শুনতে অনেক পুরানো একটি কথা বলে মনে হলেও এই কথাটির সর্বপ্রথম হদিস পাওয়া ১৮৬৬ সালে “Notes and Queries” নামক ওয়েলসের একটি ম্যাগাজিনে।
ফেব্রুয়ারি ১৮৬৬ সালের সংস্করণে উল্লেখ করা হয়- “Eat an apple going to bed and you will keep a doctor from earning his bread”। বিংশ শতাব্দীতে এই বিবৃতির বেশ কয়েকটি ভিন্ন সংস্করণ পাওয়া গেলেও বর্তমানে আমরা যে সংস্করণ ব্যবহার করি তা শোনা যায় এলিজাবেথ রাইটের একটি রেকর্ডিং থেকে।
আপেল সম্পর্কে প্রচলিত এই ধারণার পেছনে যুক্তি হচ্ছে— আপেল রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, হার্টের অসুখ ও ক্যানসার প্রতিরোধ করে, রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, আপেলের খোসা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় তা বার্ধক্য প্রতিরোধ করে তারুণ্য ধরে রাখে।
আপেল ক্রয়েসেটিন, ক্যাফিক এসিড এবং এপিকেচিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলিরও দুর্দান্ত উৎস।
প্রায় ১৫০ বছর পরেও এই কথাটি প্রায়শ শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু এ কথায় কিছুটা সত্যতা না থাকলে নিশ্চয় এরকম আলোচ্য হত না? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক দিনে একটি আপেল খাওয়া সত্যই ডাক্তারকে দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে কিনা।
আপেল অত্যন্ত পুষ্টিকর
প্রথমে আসি এর পুষ্টি উপাদানের দিকটাই। আপেলের উল্লেখযোগ্য কিছু উপাদান নিচে দেওয়া হলো:
- ক্যালোরি: ৯৫
- কার্বস: ২৫ গ্রাম
- ফাইবার: ৪.৫ গ্রাম
- ভিটামিন “সি”: ৯%
- পটাসিয়াম: ৪%
- ভিটামিন “কে”: ৩%
আপেল হার্টের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর
প্রতিদিন আপেল খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগ সহ বেশ কয়েকটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার ঝুঁকি কমাতে পারে। ২০,০০০ এরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে আপেল সহ উচ্চমানের সাদা-মাংসযুক্ত ফল এবং শাক সবজি গ্রহণ স্ট্রোকের একটি ঝুঁকি কমায়।
আপেলের মধ্যে পেকটিন নামক ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রনালীতে কোলেস্টরেল জমতে দেয় না। যার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক থাকে। এর ফলে হার্টে রক্তচলাচলা স্বাভাবিক থাকতে। এছাড়া আপেলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস শতকরা ২০ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে আপেল
আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভনয়েড ও পলিফেনল নামক উপাদান আছে যা ক্যান্সার গঠনের প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। সমীক্ষার এক পর্যালোচনা অনুসারে, বেশি পরিমাণে আপেল খাওয়া ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনল থাকায় অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ২৩% কমে যায়।
লিভার, স্তন এবং কোলোনের মধ্যে ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে বাঁধা দেয়। এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, আপেলের মধ্যে যে পরিমাণে ফাইবার থাকে, তা মলাশয়ের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।
এছাড়া আপেল ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আপেল মিষ্টি ফল হলেও দাঁতের জন্য খুব ভালো। সাধারণত ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার কারণে দাঁত ক্ষয় হয়, আপেলের রস ৮০% পর্যন্ত দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে।
পাশাপাশি আপনার দাঁতকে করে তুলবে সাদা ও উজ্জ্বল। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, উচ্চ পরিমাণে ফল খাওয়া হাড়ের ঘনত্ব এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকির কমাতে পারে।
আপেল চাপ কমাতে, মানসিক অবনতি রোধ করতে এবং বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলি ধীর করতে সহায়তা করতে পারে। হাঁপানির এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।
সুতরাং, আপেল ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ। তাই ডাক্তার থেকে দূরে থাকার জন্য আপেল ডায়েটে একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে। তার মানে শুধু যে আপেল খেতে হবে এমনটা নয় আপেল ছাড়া আমরা কলা, আম, গাজর, নাশপাতি, টমেটো ইত্যাদি।