কাঁঠালের বীজ প্রোটিনের চাহিদা পূরণে, রক্তশুন্যতা দূরীকরণে ও হজমে সহায়তা করে।
আপনি কি বোকা না বুদ্ধিমান? ধূর ছাই এটা কোনো প্রশ্ন হলো। থাক বাদ দিন। আপনি অবশ্যই বুদ্ধিমান।
আপনি বুদ্ধিমান কারণ আপনি কাঁঠাল খেয়ে কাঁঠালের বীজ ফেলে দেননা। তাহলে কাঁঠালের বীজ ফেলে দিলে কি বোকা সেজে গেলাম? না বিষয়টি তাও নয়।
আমরা অনেকেই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানিনা। অজ্ঞতার কারণেই এটি আমরা ফেলে দেই। কাঁঠালের বীজের উপকারিতা জানলে আর কোনোদিন সেটাকে ফেলে দেওয়ার কথা মাথাতেও আনবেন না।
এই খাবারটি থেকেই প্রোটিন, আইরন, ফাইবার, পটাসিয়ামের মতো অসংখ্য দরকারী পুষ্টি আমরা পেতে পারি। সম্প্রতি গবেষণা জানিয়েছে, কাঁঠালের বীজ মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
কাঁঠাল যেমন জনপ্রিয়, কাঁঠালের বীজও তেমনি খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। আলুর বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয় এটি। অসাধারণ সব স্বাদের খাবার তৈরীতে কাঁঠালের বীজের ব্যবহার আমরা কম বেশি সবাই জানি।
কাঁঠালের ইংরেজি নাম jackfruit এবং Artocarpus heterophyllus এর বৈজ্ঞানিক নাম। Moraceae-পরিবারের আর্টোকার্পাস গোত্রের ফল এটি।
নিরামিষ তরকারি ও আমিষ- দুটোতেই এটি ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ সকালে গরম ভাতের সঙ্গে কাঁঠালের বীজ ভর্তা। একেবারে সহজ রেসিপি। গরম ভাত, সর্ষের তেল তেল, লবন ও সেদ্ধ করা কাঁঠালের বীজ।
চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গার সাথে কাঁঠালের বীজ সহযোগে, ছোট মাছ দিয়ে রাঁধা তরকারি, ডাটা ও কাঁঠালের বীজ দিয়ে চিংড়ী বা শুঁটকি মাছের তরকারি, কাঁঠালের বীজ দিয়ে মুরগীর মাংস ইত্যাদি।
কাঁঠালের বীজের উপকারিতা
কেবল কাঁঠালই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়, কাঁঠালের বীজেও রয়েছে অনেক গুণ। থিয়ামিন ও রাইবোফ্লেবিন নামের দুটি উপাদান পাওয়া যায় কাঁঠালের বীজ থেকে যা দেহের এনার্জির ঘাটতি দূর করে।
এছাড়া কাঁঠালের বীজ থেকে পাওয়া যায় জিঙ্ক, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কপার, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপাদান যা সুস্থতার জন্য আবশ্যক।
উচ্চ পরিমানে প্রোটিন বিদ্যমান:
কাঁঠালের বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমানে প্রোটিনের উপস্থিতি শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শক্ত পেশী গঠনে সহায়তা করে।
কাঁঠালের বীজে যে পরিমাণ প্রোটিন থাকে, তা দেহের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।
বলিরেখা দূর করে:
আপনি কি বলিরেখা অর্থাৎ কোঁচকানো চামড়া নিয়ে চিন্তিত। ত্বককে বলিরেখা থেকে নিষ্কৃতি দিতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে কাঁঠালের বীজ।
একটি বীজ পাটায় পিষে বা মিক্সচার গ্রিন্ডারে গুঁড়ো করে ঠান্ডা দুধে মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরী করুন।
এই পেস্টটি নিয়মিত মুখে মাখুন। বলিরেখা পালাবে। এটি কাঁঠালের বীজের প্রধান সুবিধাগুলির একটি এবং কম খরচে ও সহজ উপায়ে আপনার ত্বকের যৌবনকে বাড়িয়ে তুলবে।
কাঁঠাল বীজ আপনার ত্বকের টেক্সচারের জন্য ভালো। কাঁঠালের বীজের পেস্ট এর সাথে একটু দুধ, মধু অথবা কোল্ড ক্রিম দিয়ে আপনার মুখে সমানভাবে এটি প্রয়োগ করুন।
শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
রক্তশুন্যতা দূর করে:
আমাদের প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে কাঁঠালের বীজ রাখলে শরীরে আয়রন-এর মাত্রা বাড়বে। এই বীজে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে।
তাই এটি আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দূর হয়। আপনার মস্তৃষ্ক ও হার্ট সুস্থ্য থাকবে।
স্বাস্থ্যকর চুল ও ভালো দৃষ্টিশক্তির জন্য:
কাঁঠালের বীজে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘এ’ থাকে। চোঁখের স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন এ খুবই প্রয়োজন।
এটি রাতকানা রোগ কাটাতেও সাহায্য করে। চুলের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে এই ভিটামিন এ। এটি চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে:
বদহজম রোধে খুবই কার্যকরী এই কাঁঠালের বীজ। কাঁঠালের বীজ রোদে শুকিয়ে বেটে পাউডারের মতো করে ফেলুন।
বদহজমে সহজ হোমমেড রেমেডি হতে পারে এই পাউডার। কাঁঠালের বীজে প্রচুর পরিমানে আঁশ থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
ঠান্ডা এবং সংক্রমণ নিরাময়:
এটি ঠান্ডা ও সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে যাতে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়।
প্রচুর মাত্রায় প্রোটিন এবং অন্যান্য উপকারি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস উপাদান রয়েছে কাঁঠালের বীজে। এসব উপাদান মস্তিষ্কের কেমিকেল ব্যালেন্স ঠিক রাখে।
উদ্দীপক:
কাঁঠালের বীজ aphrodisiac হিসাবে বিবেচিত হয় কারণ এটি মিলনের উদ্দীপনাকে উদীপ্ত করে। কাঁঠালের বীজে বিদ্যমান আইরন পরিতোষে সহায়ক হিসাবে কাজ করে।
যারা এতদিন কাঁঠাল খেয়ে কাঁঠালের বীজ ফেলে দিলেন তারা আসলে ভুলই করলেন।
সতর্কতা
কোনো কিছু অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়। যা খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন।
আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশ্যাই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।