আমড়ার অসাধারণ স্বাস্থ্য সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিন।

সুজলা, সুফলা, শস্য, শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ প্রতিবছর নানারকম মৌসুমী ফল নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু খাওয়ার ধুম চলতে চলতে আষাঢ় শ্রাবণ মাসে অর্থাৎ বর্ষাকালে সুস্বাদু এই ফলটি বাজারে উঠতে শুরু করে।

পুষ্টিকর এই ফলটির দুটি প্রজাতির চাষ হয়। দেশি আমড়া ও বিলাতি আমড়া। বিলাতি আমড়া দেশি আমড়ার মতো অতো টক নয়। আকারে বড়ো এবং শ্বাস বেশি। তাই হয়তো দেশি আমড়ার চাষ ইদানিং একেবারে কমে গেছে।

আমড়া থেকে সুস্বাদু আচার, চাটনী এবং জেলী তৈরি করা যায়। তরকারী হিসাবে রান্না করেও আমড়া খাওয়া যায়। বিলাতি আমড়া বা কচকচে কাঁচা বিলাতি আমড়া সর্ষে বাটা ও বিট লবন দিয়ে মেখে খেতে খুব ভালো লাগে।

কিছুটা অস্বাস্থ্যকর হলেও স্কুল ছুটির পরে বা টিফিনে স্কুল গেটের সামনে অস্থায়ী দোকান থেকে সুস্বাদু আমড়া মাখা কিনে খাওয়ার মজাটাই আলাদা। আপনারা বাড়িতে কাসুন্দি বা সর্ষে বাটা, বিট লবন, শুকনো মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি দিয়ে মেখে খেতে পারেন। মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে আমড়ার তুলনা হয় না।

আমড়াতে ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমান আপেলের থেকে বেশী। ল্যাটিন আমেরিকা আমড়ার আদি বাসস্থান। আমড়াকে গোল্ডেন আপেলও বলা হয়ে থাকে। তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরে আমড়া খেতে পারেন। এটি হজমের জন্য ভালো। কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে।

আমড়ার কিছু ভেষজগুণও রয়েছে। এটি পিত্তনাশক ও কফনাশক। আমড়া খেলে মুখে রুচি ফেরে, ক্ষুধা বাড়ায়।

আমড়া কি ও কোথায় পাওয়া যায়?

আমড়া হল উপবৃত্তাকার ছোট আম জাতীয় সুস্বাদু রসালো ফল। আমড়া Anacardiaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এটি আফ্রিকা, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, বাহামা, ইন্দোনেশিয়া, এবং অন্যান্য ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অংশগুলিতে পাওয়া যায়।

গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশের আভাকাডোর মতো স্বাদ যুক্ত আমড়া। আমড়ার জনপ্রিয়তা মিষ্টি এবং টক স্বাদের জন্য। এটি সবুজ, হলুদ, গোলাপী, বেগুনী বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। আমড়া ইংরেজিতে Hog plum নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Spondias mombin .

আমড়া কেন বুড়া হওয়া বিলম্বিত করার জন্য ভাল?

ফ্রি রাডিক্যালস মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়া রোগ এর উৎস হিসাবে কাজ করে। আমড়ার মধ্যে প্রচুর পরিমানে প্রযোজনীয় মৌলিক ভিটামিন এবং পুষ্টিকর উপাদান উপস্থিত রয়েছে যা ফ্রি রাডিক্যালস বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। যেহেতু ফ্রি রেডিক্যাল বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে তাই মানুষের বুড়া হওয়া বিলম্বিত করে।

আমড়ার উপকারীতা

আমড়া অনেক উপকারী একটি ফল। ১০০ গ্রাম আমড়ায় ভিটামিন-সি পাওয়া যায় ২০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, সামান্য ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম ৩৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ৪ মিলিগ্রাম। নিচে আমড়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা দেওয়া হল:

হজমের জন্য ভাল

আমড়া ফাইবার(আঁশ)এর চমৎকার উৎস। এই ফল একটি অনন্য মিষ্টি এবং টক স্বাদ যুক্ত। আমড়াতে প্রচুর আঁশ পাওয়া যায় এবং এটি কম ক্যালোরি যুক্ত ফল। আমড়াতে আঁশ বেশি থাকার কারণে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিনের খাবারের সাথে আমড়া রাখলে এটি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।

হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়

আমড়াতে প্রচূর পরিমানে আয়রন বিদ্যমান। আয়রন একটি খনিজ উপাদান যেটা আমাদের শরীরে অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আয়রনের-অভাব( অ্যানিমিয়া) বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নননশীল দেশের বড় সমস্যা। ১০০ গ্রাম আমড়াতে ৩.২ মিলিগ্রাম আইরন রয়েছে। যদি আমরা দৈনিক ১০০ গ্রাম আমড়া খাই তবে আমাদের প্রয়োজনীয় দৈনিক চাহিদার ১৮ শতাংশ পূরণ হবে।

ভিটামিন “সি” উচ্চ পরিমাণ থাকে

আমড়া ভিটামিন “সি” এর অবিশ্বাস্য উৎস। সুসাস্থ এবং শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলির পরিচালনার জন্য ভিটামিন “সি” খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন “সি” অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির মধ্যে একটি যা শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

ভিটামিন “সি” মানুষের দেহে প্রোটিন কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে। এই কোলাজেন প্রোটিন মানুষের চামড়ায় পাওয়া যায়। কোলাজেন প্রোটিন ত্বকের উজ্জ্বলতা, দৃঢ়তা বজায় রাখে এবং ত্বকের কুঁচকানো প্রতিরোধ করে।

আমড়ায় প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এটি খেলে স্কার্ভি রোগ এড়ানো যায়। বিভিন্ন প্রকার ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধেও লড়তে পারে আমড়া। অসুস্থ্য লোকদের মুখের স্বাদ ফিরিয়ে দেয় এই আমড়া।

হাড় মজবুত করে

আমড়াতে ক্যালসিয়ামের পরিমান বেশী। প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে আমড়ার তুলনা হয় না। হাড়ের যেকোনো রোগ দূর করে হাড়কে শক্তিশালী করে এই ক্যালসিয়াম।

আমড়াতে ভিটামিন K পাওয়া যায়। ভিটামিন K রক্তক্ষরণ কমায় অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। শিশুদের দৈহিক গঠনে ক্যালসিয়াম খুবই দরকারি। এই ফলে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় শিশুদের এই ফল খেতে উৎসাহিত করতে পারেন।

পেশী শক্তি বৃদ্ধি করে

আমড়াতে অল্প পরিমান থিয়ামিন রয়েছে। থিয়ামিন মানুষের পেশী শক্তিশালী করার জন্য দরকারী।

দাঁত ও মাড়ি মজবুত করে :

ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম থাকার কারণে দাঁত ও মাড়ি মজবুত রাখে।

সর্দি কাশি ও জ্বরের উপশমেও আমড়া অত্যন্ত উপকারী। এখন আমড়া প্রায় সারাবছর জুড়ে পাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে এটি বেশি পরিমানে পাওয়া যায়। তাই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে দামে সস্তা এই ফলটি আমরা অবশ্যই খাব।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

Leave a Reply