স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে কোন খাবারগুলি কার্যকরী।

আমাদের শরীরের যেকোনো কিছু প্রসেস করার কেন্দ্রস্থল হল মস্তিষ্ক। সমগ্র শরীরের কন্ট্রোল থাকে মস্তিষ্কে। আমাদের হৃদস্পন্দন, শ্বাস প্রশ্বাস সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্ক থেকে।

আমরা যে নড়াচড়া করি, অনুভূতি প্রকাশ করি, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করে নতুন কিছু সৃষ্টি করি সবকিছুই মস্তিষ্কের মাধ্যমে।

মস্তিস্ককে সুস্থ্য ও কর্মক্ষম রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন উপায়ে মস্তিস্ককে সুস্থ্য এবং চাঙ্গা রাখা সম্ভব। যেমন মেডিটেশন বা ধ্যান করা, বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ইত্যাদি।

কিছু খাবার আছে যেগুলো ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ, ফলে বৃদ্ধি পাবে স্মৃতিশক্তি। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যকরী খাবারগুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –

বাদাম:

গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাদাম খাওয়ার অভ্যাস হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর হার্টকে একটি সুস্থ্য মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত করা হয়।

২০১৪ এর পর্যালোচনাতে দেখা গেছে যে, বাদাম জ্ঞান বৃদ্ধিতে এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগগুলি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে।

এছাড়াও, আরও একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা বাদাম খান না তাদের তুলনায় যারা বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বাদাম খেয়েছিলেন এমন মহিলাদের স্মৃতি খুব তীব্র হয়েছে।

হলুদ

আলঝেইমার একটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ যা মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। হলুদে থাকা কার্কুমিন আলঝাইমারযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।

এছাড়া কার্কুমিন সেরোটোনিন এবং ডোপামিনকে বাড়িয়ে তোলে যা মেজাজকে উন্নত করে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কার্কুমিন হতাশার লক্ষণগুলি কমিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি কার্কুমিন মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টরকে বৃদ্ধি করে।

এটি বয়স-সম্পর্কিত মানসিক অবক্ষয়কে বিলম্বিত করতে সহায়তা করতে পারে।

আদা:

আদা সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ৬০ জন মধ্যবয়স্ক মহিলাদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আদা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।

ডিম:

ডিম ভিটামিন বি-6 এবং ভিটামিন বি-12, ফোলেট এবং কোলিন এর উৎস যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়।

প্রতিদিন শিশুদের একটি করে ডিম খাওয়ালে মেধা বিকাশে সহায়তা করবে। গর্ভাবস্থা এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর মায়েদের জন্য কোলিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য কোলিন প্রয়োজনীয়। ডিম বয়স্কদের মানসিক অবক্ষয় কমিয়ে দিতে পারে।

কমলালেবু:

একটি মাঝারি কমলা খাওয়ার মাধ্যমে প্রতিদিনের চাহিদার ভিটামিন “সি” পেতে পারি। ভিটামিন “সি” মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৪ এর পর্যালোচনা নিবন্ধ অনুসারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বয়সের সাথে সম্পর্কিত মানসিক অবক্ষয় এবং আলঝাইমার রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।

ভিটামিন “সি” একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা মস্তিষ্কের কোষগুলিকে ক্ষতি করতে পারে এমন ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

ডার্ক চকলেটে:

ডার্ক চকলেটে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে স্মৃতিভ্রম এর ঝুঁকি কমায় ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত ডার্ক চকলেট খায় তাদের অন্যদের তুলনায় স্মৃতিশক্তি ভালো।

কুমড়ো বীজ:

কুমড়োর বীজে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা দেহ এবং মস্তিষ্ককে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

এছাড়া মিষ্টি কুমড়োর বীজ ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, কপার এবং জিঙ্ক এর একটি দুর্দান্ত উৎস।

ব্রকলি:

ব্রকলিতে বিদ্যমান কিছু পুষ্টি উপাদান এবং জৈব ক্রিয়াশীল যৌগ আমাদের মানসিক অবক্ষয় হ্রাস করে এবং ব্রেইনের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি আমাদের নার্ভের টিস্যু ফাংশন ও ভালো রাখে।

৯৬০ জন বয়স্ক লোকের উপর এক পরীক্ষায় দেখা গেছে গাঢ় সবুজ শাকসবজি যেমন ব্রকলি বয়সের সাথে সাথে মানুষের মানসিক যে অবক্ষয় হয় তা রোধ করতে পারে।

মাছ:

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা প্রায়শই বয়সের সাথে সাথে হ্রাস পায়। হালকা মানসিক অবক্ষয় স্বাভাবিক হলেও বয়সের সাথে সাথে আলঝাইমার রোগের মতো মারাত্মক নিউরোডিজেনারেটিভ অসুস্থতাও দেখা দেয়।

পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব লোকেরা বেশি মাছ খান তাদের মানসিক অবনতির হার কম হয়।

গবেষণাগুলি আরও প্রকাশ করে যে, যারা প্রতি সপ্তাহে মাছ খান তাদের মস্তিষ্কের প্রধান কার্যকরী টিস্যু অনেক সক্রিয় থাকে।

গ্রীন টি:

গ্রীন টিতে থাকা ক্যাফেইন আমাদের ব্রেনকে চাঙ্গা রাখতে বাধা প্রদানকারী এডেনোসিন (Adenosine) কে প্রতিহত করে। গ্রীন টি কর্মক্ষমতা, মেমরি এবং ফোকাস উন্নত করতে পারে।

এটি পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ যা মস্তিষ্ককে মানসিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে পারে। আলঝাইমার এবং পার্কিনসনের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

সূত্র: হেলথলাইন, medicalnewstoday