জামরুল শরীর ঠান্ডা রাখে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গ্রীষ্মকালে যেন পুষ্টিকর সব ফলের মেলা চলে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল কে কোনটা খাবে বলো। স্বাস্থ্য উপকারীতার দিক থেকে কোন ফল পিছিয়ে নেয়।
আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুর মতো জামরুলও খুবই পুষ্টিকর ও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
জামরুল বেশ সহজলভ্য এবং অনেকেরই বাড়িতে হয়তো এই গাছটি আছে আর জামরুল হয়ও প্রচুর।
দেখতে কিন্তু বেশ লাগে লাল কিংবা সাদা থোকায় থোকায় ঝুলে আছে বড় বড় সবুজ পাতা ভিতরে। গাছের মাথা থেকে গোড়া কোথাও বাদ যায় না।
জামরুল দেখতে একদম ঘন্টার মতো তাইতো একে অনেকে বলেন Bell Fruit। জামরুল বৃষ্টিতে পানসে হয়ে যায় আর প্রচন্ড রোদে এটা খেতে মিষ্টি লাগে।
জৈষ্ঠ্য থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। খেতে কিন্তু বেশ মজা, রসে ভরা হালকা মিষ্টি স্বাদযুক্ত।
জামরুল সাদা, সবুজ, হালকা গোলাপী আর লাল রঙের পাওয়া যায়। কোনোটা একটু লম্বাটে আবার কোনটা বেশ গোলাকৃতির। জামরুলে ফ্রেশ ও সুমিষ্ট ঘ্রাণ আছে।
জামরুল ডায়াবেটিসের জন্য ভালো?
জামরুলে শক্তিশালী অ্যান্টিহাইপারগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার অর্থ এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়।
এতে গ্লাইসেমিক লোড এর মান কম থাকে। জামরুলে জাম্বোসিন নামক একটি ক্রিয়াশীল যৌগ রয়েছে যা স্টার্চকে সুগারে পরিণত হতে বাঁধা দেয়।
ফলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুতরাং, জামরুল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
জামরুলের পুষ্টি উপাদান
প্রকৃতির যেকোনো খাবারই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সেখানে পুষ্টির প্রোফাইলের কথা মাথায় না রাখলেও চলে।
নিচে জামরুলের পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –
- ভিটামিন “সি”: ২৭%
- পানি: ৮৯.১%
- ফাইবার: ১.৯ গ্রাম
জামরুলের স্বাস্থ্য উপকারীতা
জামরুলের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটা আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। নিচে এর আরও স্বাস্থ্য উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
পানিশূন্যতা দূর করে:
এটি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। জামরুলে ৮৯.১% পানি রয়েছে।
তাই জামরুল খেলে শরীরের পানিশুন্যতা দূর হয় এবং শরীর সুস্থ্য ও সতেজ থাকে। জামরুল দিয়ে জুস করে খেতে পারেন।
ত্বকের জন্য উপকারী:
ত্বক আমাদের দেহের বৃহত্তম অঙ্গ। জামরুলে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্রণ সহ ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর করে ত্বক করে তুলবে নরম ও কোমল।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জামরুলের পাতায় প্রচুর পরিমাণে কসমোসেটিক্যাল (cosmeceutical) বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই উপাদানটি ত্বকের জন্য ভালো।
LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়:
জামরুল খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) লাইপোপ্রোটিন হ্রাস করে হার্টকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।
উচ্চ স্তরের খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ স্ট্রোক এবং হার্ট ডিজিজের কারণ।
জামরুলে ফাইটোকেমিক্যালস, এপিকেচিন রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ব্যাপক অবদান রাখে যা, স্ট্রোক এবং অন্যান্য হার্টের রোগের কারণ হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
যেকোনো সিজনাল ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। জামরুলে ২৭% ভিটামিন “সি” যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
কিডনি ভালো রাখে:
জামরুলে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এটা আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ধুয়ে বের করে দিতে কাযর্কারী ভূমিকা পালন করে।
আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে গেলে লিভার আর কিডনি দুটোই ভালো থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে:
জামরুলের ফাইবার রয়েছে যা হজম স্বাস্থ্যের দারুণ উপকারী। এই ফলটি কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল করে তোলে।
দেহকে শীতল করে:
গরমে উপাদেয় ফল জামরুল আজ যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু আমরা এটাকে হারাতে চাই না কারণ জামরুল একটি প্রাকৃতিক শীতলকারক।
গরমে শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে জামরুল।
এটি কেবল শরীরকে হাইড্রেট করে না, অতিরিক্ত ঘামের কারণে নষ্ট হওয়া পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলি পূরণে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিসের জন্য ভালো:
জামরুলে শক্তিশালী অ্যান্টিহাইপারগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার অর্থ এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়।
এতে গ্লাইসেমিক লোড এর মান কম থাকে। জামরুলে জাম্বোসিন নামক একটি ক্রিয়াশীল যৌগ রয়েছে যা স্টার্চকে সুগারে পরিণত হতে বাঁধা দেয়।
যার ফলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভালো:
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের বমি বমি অনুভূত হয়। আর এই বমির কারণে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
জামরুল গর্ভবতী মহিলাদের ডিহাইড্রেশন দূর করে হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে।
সতর্কতা
জামরুলের খারাপ দিক খুবই কম। নেই বললেই চলে। তবে জামরুলের বীজ না খাওয়াই ভালো।
এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
সূত্র: netmeds, healthbenefitstimes