চালকুমড়া শরীর ঠাণ্ডা রাখে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।

চালকুমড়া বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য ঐতিহ্যবাহী চীনা এবং আয়ুর্বেদিক ঔষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই সবজিটি রেচক, মূত্রবর্ধক এবং এফ্রোডিসিয়াক বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রশংসিত হয়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে ও মন মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

কচি চালকুমড়ার গায়ে ছোট ছোট কাটার মতো লোম থাকে এবং যখন চালকুমড়া পরিপক্ক হয়ে যায় তখন দেখতে অনেকটা সাদাটে হয়ে যায়। পরিপক্ক চালকুমড়া দিয়ে তৈরি করা হয় কুমড়ো বড়ি। চালকুমড়া ৮০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এটি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়াতে প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়।

চালকুমড়া, জালিকুমড়া বা চালকুমরা সংস্কৃত ভাষায় একে ‘কুষ্মাণ্ড’ বলা হয়। এর ইংরেজি নাম Winter melon, White gourd, Winter gourd, Tallow gourd, Chinese preserving melon, Ash gourd, wax gourd. বৈজ্ঞানিক নাম: Benincasa hispida.

চাল কুমড়া আমরা তরকারি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও মোরব্বা, হালুয়া, পায়েস ও কুমড়া বড়া তৈরি করে খাই। শুধু চাল কুমড়াই নয় এর কচি পাতা ও ডগা শাঁক হিসেবে খাওয়া যায়।

চালকুমড়া সারা বছর ধরে পাওয়া গেলেও এটা মূলত বর্ষা কালের সবজি। বর্ষা কালে চালকুমড়া আর আলু দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোল খেতে কি যে ভালো লাগে তা বলে বোঝানো যাবে না। ইলিশ ছাড়াও কৈ, রুই, কাতলা মাছ দিয়ে খেতে অনেক মজা। এছাড়া আর একটা মাছের কথা না বললে নয় ঘুসো চিংড়ী বা ছোট্টো চিংড়ি দিয়ে চালকুমড়া। সকাল বেলা গরম ভাতে চালকুমড়া ভাজি খুবই মজার একটি আইটেম।

চালকুমড়ার পুষ্টিগুণ

নিচে চালকুমড়ার গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো –

  • পানি: ৯৬%
  • ক্যালোরি: ১৩
  • ফাইবার: ৩ গ্রাম
  • ভিটামিন “সি”: ১৪% (DV)
  • রিবোফ্লাভিন: ৮% (DV)
  • জিংক: ৬% (DV)

চালকুমড়ার উপকারিতা

চালকুমড়াতে অল্প পরিমাণে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ পাশাপাশি ভিটামিন “বি” রয়েছে। ভিটামিন “সি” ছাড়াও চালকুমড়া ফ্লেভোনয়েড এবং ক্যারোটিন এর একটি ভাল উৎস। এটি দেহের কোষের ক্ষয়, টাইপ-2 ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। নিচে এই চালকুমড়ার উপকারিতা আলোচনা করা হলো –

ওজন কমায়:

চালকুমড়াতে ক্যালোরি কম, উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং পানির পরিমাণ বেশি। উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এই সবজিটি ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ফাইবার হজমকে ধীর করে দেয় এবং বেশ সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এতে ক্ষুধা কম লাগে এবং বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় ফলে ওজন হ্রাস পাই।

হজম স্বাস্থ্য ঠিক রাখে:

এই সবজিটি দ্রবণীয় ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস। দ্রবণীয় ফাইবার আমাদের মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে আমাদের অন্ত্র্রের গতিবিধি ঠিক রাখতে সহায়তা করে। দ্রবণীয় ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে হজম স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

আলসার প্রতিরোধ:

আলসার নিরাময়ে চালকুমড়া খুবই উপকারী। চালকুমড়া এন্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসাবে পেট এবং অন্ত্রের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন বা আলসার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি মসলাযুক্ত খাবার বা দীর্ঘদিনের জন্য উপবাসের কারণে পাকস্থলিতে তৈরি হওয়া এসিড দূর করতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

প্রতিদিন আমাদের শরীরে যে পরিমাণ ভিটামিন “সি” প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি ভিটামিন “সি” আছে চালকুমড়ায়। তাই চালকুমড়া খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়া চালকুমড়ায় থাকা জিংকও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী:

চালকুমড়া টাইপ-2 ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে কার্যকরী। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, চালকুমড়া রক্তে সুগারের মাত্রা এবং ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। তাই এই সবজিটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে:

দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া মানে, ভিটামিন বি-2 অর্থাৎ রিবোফ্লোবিনের ঘাটতি। চালকুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-2 অর্থাৎ রিবোফ্লোবিন আছে। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-2 গ্রহণ করলে চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা যায়। চালকুমড়া এক্ষেত্রে অনেক উপকারী। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট চোখের রেটিনার স্ট্রেস কমায় ও ছানি পড়া রোধ করে।

শরীর ঠাণ্ডা করে:

অনেক সময় শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা একেবারেই ভালো নয়। তাই সপ্তাহে ২-৩ দিন নিয়মিত চালকুমড়ার রস খেতে পারেন। আসলে এই সবজিটিতে যেমন রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পানি, তেমনি রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খনিজও, যা শরীরকে ঠাণ্ডা রাখার পাশাপাশি দেহের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদেরও বের করে দেয়। ফলে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। তেমনি দেহের ভিতরে তাপমাত্রা বা প্রাদাহ বাড়ার সম্ভাবনাও আর থাকে না।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স: