সিদ্ধ ডিম না ভাজা ডিম। কোনটা খাবেন?
ডিম খেতে কে না ভালবাসে? কারও পছন্দ পেঁয়াজ, লঙ্কা দিয়ে জমিয়ে ওমলেট, কারও চাই পোচ, তো কেই চায় ভাতের পাতে কষা কষা ডিমের ডালনা৷
ডিম সব রকম ভাবেই পুষ্টিকর৷ ডিম সেলেনিয়াম, ভিটামিন “ডি”, “বি”৬, “বি”১২, দস্তা, আয়রন এবং তামা জাতীয় খনিজ সমৃদ্ধ।
ডিমে লুটিন এবং জেক্সানথিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, ম্যাকুলার অবক্ষয় এবং ছানি ছত্রাককে প্রতিরোধ করতে পারে। ডিমে থাকে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। তবে ডিম আপনি কীভাবে খাচ্ছেন তার উপর পুষ্টি উপাদান নির্ভর করে।
ডিম রান্না করে খাওয়ার ফলে কিছু পুষ্টি হজম সহজ করতে সাহায্য করে। উদাহরণ ডিমের প্রোটিন। অধ্যয়নগুলি দেখিয়েছে যে প্রোটিন উত্তপ্ত হলে এটি আরও হজম হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মানব দেহ রান্না করা ডিম থেকে ৯১% প্রোটিন ব্যবহার করতে পারে, সেখানে কাঁচা ডিম থেকে কেবল ৫১%।
ডিমগুলি বায়োটিনের একটি ভাল উৎস, যা ফ্যাট এবং চিনি বিপাকের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এটি ভিটামিন বি-7, বা ভিটামিন এইচ নামেও পরিচিত। কাঁচা ডিমের সাদা অংশের একটি প্রোটিন যা বায়োটিনের সাথে আবদ্ধ হয়ে শরীরের ব্যবহারের জন্য অনুপলব্ধ করে তোলে।
যাইহোক, ডিমগুলি রান্না করা হলে, তাপ এভিডিনের (avidin) কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটায়, এটি বায়োটিনের সাথে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে কম কার্যকর করে তোলে। এটি বায়োটিনকে শোষণ করা সহজ করে তোলে।
উচ্চ-তাপে রান্না করার ফলে পুষ্টি কমে যেতে পারে
ডিম রান্না কিছু পুষ্টিকে আরও হজম করে তোলে, তবে এটি অন্যের ক্ষতি করতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে রান্না করা ডিমে ভিটামিন “এ” প্রায় ১৭-২০% দ্বারা হ্রাস পায়।
এছাড়া ডিম রান্না করার ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মাইক্রোওভেনে, ডিম সেদ্ধ এবং ডিম ভাজার সহ সাধারণ রান্নার পদ্ধতিগুলি নির্দিষ্ট অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির সংখ্যা ৬-১৮% হ্রাস করে।
কম সময় ধরে ডিম রান্না করার ফলে বেশি পুষ্টি বজায় রাখতে দেখা গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ডিম ৪০ মিনিটের ধরে রান্না করার ফলে ভিটামিন “ডি” এর ৬১% পর্যন্ত হারাতে পারে।
উচ্চ-তাপে রান্না করা ডিম কোলেস্টেরলকে জারণ করে
ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল বেশি থাকে। একটি বড় ডিমের মধ্যে প্রায় ২১২ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। ডিম যখন উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হয়, তখন ডিমের মধ্যে থাকা কোলেস্টেরল অক্সিডাইজড (oxidized) হয়ে যায় এবং অক্সিসেরল নামে পরিচিত যৌগ তৈরি করে।
ফলে কিছু লোকের মধ্যে অক্সিডযুক্ত কোলেস্টেরল এবং অক্সিজেরল হার্টের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। অক্সিডাইজড কোলেস্টেরলের প্রধান ডায়েটার উৎস ভাজা খাবার যেমন ভাজা চিকেন, ফিশ এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।
সিদ্ধ ডিম না ওমলেট কি খেলে পুষ্টি পাবেন সর্বাধিক
একটা গোটা সেদ্ধ ডিমে রয়েছে-
- ক্যালরি: ৭৮
- প্রোটিন: ৬.৩ গ্রাম
- কার্বহাইড্রেট: ০.৬ গ্রাম
- ফ্যাট: ৫.৩ গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ১.৬ গ্রাম
- রাইবোফ্লোভিন: ১৫% (DV)
- ভিটামিন “বি”১২: ১০% (DV)
- ফসফরাস: ৯% (DV)
অন্যদিকে ওমলেটে রয়েছে
- ক্যালোরি: ৯০
- ফ্যাট: ৬.৮ গ্রাম
- স্যাচুরে়টেড ফ্যাট: ২ গ্রাম
- ফসফরাস: ১০% (DV)
ওমলেট
তেলে ভাজার কারণে সেদ্ধ ডিমের চেয়ে ওমলেটে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই যারা ওজন ঠিক রাখতে চায় কিংবা বাড়াতে না চায় তাদের ডিম পোচ বা ওমলেট না খাওয়াই ভালো।
আর ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা থাকলে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বাচ্চাদের জন্য ডিম পোচ ভালো। কারণ সেদ্ধ ডিমের চেয়ে ডিম পোচের কুসুমে গুণাগুণ বেশি থাকে।
সেদ্ধ ডিম
যারা ওজন ধরে রাখতে চায় এবং ওজন কমাতে চায় তাদের সেদ্ধ ডিম খাওয়া উচিত। কিন্তু যারা সেদ্ধ ডিম খেতে পারে না, তারা পানিতে ডিম পোচ করে খেতে পারে। যাদের ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা আছে তারা সেদ্ধ ডিম খেতে পারে। ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন থাকে।
শরীরে অ্যালবুমিনের (বিশেষ ধরনের প্রোটিন) পরিমাণ বেশি থাকলে ডিমের সাদা অংশ না খাওয়া ভালো। অন্যদিকে যাদের অ্যালবুমিন কম তারা দিনে একাধিক ডিম খেতে পারে এবং সেদ্ধ ডিম তাদের জন্য ভালো।
তাছাড়া কাজ করার জন্য তো আমাদের এনার্জির দরকার হয়ই। ডিম খেলে আমরা সহজেই এই এনার্জি পেতে পারি। ডিমে থাকা ভিটামিন থেকেই মূলত আমরা এই এনার্জি বা শক্তি পেয়ে থাকি।
ডিমে থাকা ভিটামিন “বি” আমাদের খাওয়া খাদ্যকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করে। তাই প্রতিদিন সকালে ডিমসেদ্ধ খেলে আপনি সারাদিন এনার্জেটিক থাকবেন।
উপরের এসব দিক থেকে দেখা যায় যে, ডিম এক একজনের শরীরের জন্য এক এক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তাই নিজের শরীরের অবস্থান বুঝে আপনি নিজেই ঠিক করুন ডিম কোন ভাবে খেলে আপনি সবচাইতে বেশি উপকৃত হতে পারবেন।