যে বীজগুলো খুবই পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

প্রাচীনকাল থেকেই শরীরকে সুস্থ এবং রোগমুক্ত রাখতে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের বীজের ব্যবহার হয়ে আসছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন- কুমড়ার বীজ, সাদা তিল, সূর্যমুখীর বীজ, চিয়া বীজ, তিসি বীজ বা ফ্লেক্স সিডস বীজের অনেক পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে। যা আমাদের সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে থাকে।

সেই সঙ্গে এসব বীজে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সবই পাওয়া যায়। যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, হার্টকে সুস্থ রাখে আর প্রাকৃতিক উপায়ে বাড়িয়ে তোলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বিভিন্ন প্রকার সালাদ, স্যুপ, স্মুদিতে মিশিয়ে নিয়ে খেতে পারেন আপনার পছন্দের বীজ।

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কিছু বীজের নাম ও উপকারিতা সম্পর্কে-

pumkinseeds for seed post

কুমড়া বীজ:

পুষ্টি উপাদানের ‘পাওয়ার হাউস’ কুমড়ার বীজে আছে ভিটামিন “বি”, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, প্রোটিন, ট্রিপটোফেন অ্যামিনো অ্যাসিড ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব খাদ্য উপাদান। কুমড়োর বীজ (Pumpkin Seeds) “পেপিটা” নামেও পরিচিত – এটি একটি মেক্সিকান স্প্যানিশ শব্দ।

কুমড়োর বীজে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং রয়েছে পরিমাণে পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, পটাসিয়াম এবং ফোলেট। এছাড়াও এতে ক্যারোটিনয়েড এবং ভিটামিন “ই” এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রদাহ হ্রাস করতে এবং কোষকে ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করতে পারে।

sunflowerseeds for seed post

সূর্যমুখীর বীজ:

সূর্যমুখীর বীজ (sunflower seeds) ভিটামিন “বি” এবং ভিটামিন “ই” এর উৎকৃষ্ট উৎস। এ বীজে থাকা ফোলেট জন্মত্রুটি প্রতিরোধ করে। এ বীজের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন “ই” কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, চুল ও ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। এ বীজ প্রোটিন ও হার্ট-হেলদি ফ্যাটে সমৃদ্ধ। এছাড়া সূর্যমুখী বীজ ফেনোলিক অ্যাসিড এবং ফ্ল্যাভোনয়েড সহ উপকারী উদ্ভিদ যৌগগুলির একটি ভাল উৎস – যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস হিসাবেও কাজ করে।

flaxseed for seed post

তিসি বীজ:

বাদামি রঙের এবং বাদামের স্বাদযুক্ত তিসি বীজ (flaxseed) ফাইবারের উৎস। ফাইবার কোলেস্টেরল কমায়, দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে এবং ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। এ বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চোখ ও মস্তিষ্কের উপকার সাধন করে এবং ট্রাইগ্লিসারাইডস কমাতে সহায়তা করে।

watermelonseeds for seed post

তরমুজের বীজ:

তরমুজের বীজে (watermelon seeds) থাকে প্রোটিন, ভিটামিন, ওমেগা-3 এবং ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিংক, পটাসিয়াম এবং আরও অনেক পুষ্টি উপাদান। হার্টের রোগ এমনকি ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগও নিয়ন্ত্রণে আনে তরমুজের বীজে থাকা গুনাগুণ। গবেষকরা বলছেন, তরমুজের বীজে এমন এক রাসায়নিক থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী।

BeanAsparagus for Seed post

শিমের বীজ:

এ বীজ খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি খাবার। প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন এবং ভিটামিনের দুর্দান্ত উৎস শিমের বীজ (bean seeds)। এছাড়া এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ফোলেট রয়েছে। শিমের বীজে ২০ টি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে। যার মধ্যে নয়টি আমাদের দেহের জন্য অপরিহার্য। শিমের বীজ গর্ভবতী মায়েদের জন্য, হার্টের রোগী ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং কোষ্ঠকাঠিন্নতা দূর করতে সহায়তা করে।

sesameseeds for seeds post

তিলের বীজ:

তিলের বীজে রয়েছে ক্যালোরি, ফাইবার, প্রোটিন, মনোঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা-6 ফ্যাট, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম। তিলের বীজে প্রচুর লিগানান থাকে। প্রকৃতপক্ষে, তিল বীজ (Sesame seeds) হল লিগনানের সবচেয়ে পরিচিত উৎস।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে তিল বীজ হার্টের রোগ এবং স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে পারে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে পাঁচ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৫০ গ্রাম তিলের বীজ খাওয়ার ফলে রক্তের কোলেস্টেরল উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তিলের বীজ প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করতে পারে, যা আর্থ্রাইটিস সহ অনেক রোগের লক্ষণকে আরও খারাপ করতে পারে।

chiaseeds for seeds post

চিয়া বীজ:

চিয়া বীজের (Chia seeds) মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এ বীজের ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম হাড় ও দন্ত্য স্বাস্থ্য উন্নত করে, অন্যদিকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ট্রাইগ্লিসারাইডস চর্বি কমিয়ে হৃদপিণ্ডকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এ বীজের দ্রবণীয় ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে ভূমিকা রাখে, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে এবং অনেকক্ষণ ধরে পেট ভরা রাখে।

Jackfruitseeds for seeds post

কাঁঠালের বীজ:

কাঁঠালের বীজ (jackfruit seeds) থেকে প্রোটিন, আইরন, ফাইবার, পটাসিয়ামের মতো অসংখ্য দরকারী পুষ্টি আমরা পেতে পারি। সম্প্রতি গবেষণা জানিয়েছে, কাঁঠালের বীজ মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

থিয়ামিন ও রাইবোফ্লেবিন নামের দুটি উপাদান পাওয়া যায় কাঁঠালের বীজ থেকে যা দেহের এনার্জির ঘাটতি দূর করে। এছাড়া কাঁঠালের বীজ থেকে পাওয়া যায় জিঙ্ক, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কপার, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপাদান যা সুস্থতার জন্য আবশ্যক।

রেফারেন্স: