শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়।
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হাইপোমাগনেসেমিয়া নামে পরিচিত। প্রায়শই আমরা ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিকে অবহেলা করি। ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে বমিভাব, ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, ক্ষুধা হ্রাস ও ক্লান্তি হতে পারে।
ম্যাগনেসিয়াম প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন খাবারে থাকে। এই খনিজটি ৩০০ টিরও বেশি এনজাইমকে দেহে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া করতে সাহায্য করে।
এটি প্রোটিন তৈরি, শক্তিশালী হাড় তৈরি, রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম অনিদ্রা দূর করা, মানসিক চাপ দূর করা, মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে, পেশী এবং স্নায়ুর ক্রিয়াকলাপগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেশ কার্যকরী।
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা হয়। কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে সেগুলি তুলে ধরা হলো-
পেশীর দুর্বলতা:
ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে হাত কাঁপুনি এবং পেশীর দুর্বলতা এমনকি খিঁচুনিও হতে পারে। হাত কাঁপুনি এবং পেশীর দুর্বলতা লক্ষণগুলি অন্যন্য কারণেও হতে পারে, যেমন স্ট্রেস বা অত্যধিক ক্যাফিন গ্রহণের ফলে।
মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে যায়:
দুশ্চিন্তা ও হতাশা একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এছাড়া ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে হতাশার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল ম্যাগনেসিয়ামের অভাব।
অস্টিওপোরোসিস:
অস্টিওপোরোসিস এমন একটি রোগ যা হাড়ে থাকা ক্যালসিয়ামের ক্ষতি করে এবং সেইজন্য হাড়ের ক্ষয়ের মত সমস্যা খুব দ্রুত ঘটে।
যার কারণে হাড়গুলি দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। অস্টিওপোরোসিস হওয়ার ঝুঁকির অন্যতম কারণ হলো – বার্ধক্য, ব্যায়মের অভাব, ভিটামিন “ডি” এবং “কে” এর অভাব।
মজার বিষয় হচ্ছে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিও অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকির কারণ।
ক্লান্তি এবং পেশীর দুর্বলতা:
ক্লান্তি, শারীরিক বা মানসিক দুর্বলতা এগুলি ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির লক্ষণ। মনে রাখবেন সব সময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়া মানে বিশ্রাম নেওয়া দরকার এমনটা নয়। ক্লান্তি স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির আরও একটি লক্ষণ হল পেশীর দুর্বলতা, যা মায়াসথেনিয়া (myasthenia) নামেও পরিচিত।
উচ্চ রক্তচাপ:
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে যা হার্টের রোগের জন্য একটি শক্তিশালী ঝুঁকির কারণ।
বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি নিম্ন রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
হাঁপানি:
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হাঁপানির রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব ফুসফুসের শ্বাসনালীতে বায়ুবাহনকে সংকুচিত করে তোলে।
অনিয়মিত হৃদস্পন্দন:
হার্ট অ্যারিথিমিয়া বা অনিয়মিত হার্টবিট ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির সবচেয়ে গুরুতর লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। প্রায়শই অ্যারিথমিয়ার কোনও লক্ষণই থাকে না।
অ্যারিথমিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে: হালকা মাথা ব্যথা, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা, বুক ব্যাথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সবচেয়ে গুরুতর ক্ষেত্রে।
অ্যারিথমিয়া স্ট্রোক বা হার্ট ফেইলওর হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে।
আমাদের দেহের ম্যাগনেসিয়ামের অর্ধেকেরও বেশি জমা থাকে আমাদের হাড়ে এবং বাকিটা সারা শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে থাকে। তবে পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক প্রায় ৩০০-৪০০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করা ভালো। সেজন্য প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেছে নিতে পারেন।
ম্যাগনেসিয়ামের উৎস- বাদামে: ২৮৬ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে, কুমড়োর বীজে: ৫৩৫ মিলিগ্রাম, ডার্ক চকলেটে: ১৫২ মিলিগ্রাম, চিনাবাদামে: ১৮৬ মিলিগ্রাম, পপকর্ন: ১৪৪ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এছাড়া সূর্যমুখীর বীজ, কফি, ওটস এগুলোও ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস।