মেথি শাক রক্তাল্পতা রোধ করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও হজমের জন্য ভালো।
আমাদের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরণের শাক থাকে। যেমনঃ লাল শাক, লাউ শাক, পালংশাক, পুই শাক, সরিষা শাক, মুলা শাক ইত্যাদি।
আর এইসব শাকের মতো মেথি শাকও অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। মেথির পাতা শাক হিসাবে খাওয়া হয়। মেথি শাক গ্রাম বাংলার মানুষের প্রিয় একটি শাক।
মেথি তেতো স্বাদযুক্ত মসলা। এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি ও তারুণ্য ধরে রাখার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা।
আপনি মেথি শাক সবজি হিসেবে তো খেতেই পারেন আবার পরোটা বা মেথি শাক লুচি বানিয়েও খাওয়া যায়।
মেথি শাক তারুণ্য ধরে রাখতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, পেটের নানা সমস্যা নিরাময়ে, রক্তাল্পতা রোধ করতে এবং কোলেস্টেরল হ্রাস করতে খুবই উপকারী।
আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে শুধু সুস্থ্যই রাখে না, পাশাপাশি বাইরে থেকে ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতেও সমানভাবে কাজ করে এই শাক।
এই শাকের নিজস্ব একটা গন্ধ রয়েছে, যা অনেকেই পছন্দ করে। মেথি শাককে ইংরেজিতে: fenugreek Leaves বলে।
মেথি শাকের পুষ্টি উপাদান
১০০ গ্রাম মেথি শাকে
- ক্যালোরি: ৩২৩
- ফ্যাট: ৬ গ্রাম
- প্রোটিন: ২৩ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ৫৮ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ০.১৭
- ম্যাগনেসিয়াম: ৪৭%
এছাড়াও এই ভেষজ উপাদানটি ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “বি”৬, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।
মেথি শাকের উপকারিতা
আসুন এবার জেনে নিই মেথি শাকের গুণাগুণ বা উপকারিতা-
হাড়ের জন্য ভালো:
মেথি শাক ভিটামিন “কে” সমৃদ্ধ যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ভিটামিন “কে” হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস এবং অস্টিওপোরোসিসের হওয়ার সম্ভাবনা প্রতিরোধ করে।
এক কাপ মেথি শাকে ১১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। ক্যালসিয়াম এমন একটি খনিজ যা হাড়কে শক্তিশালী রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে:
খাবারের পর গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে মেথি শাক।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, টাইপ-1 ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিরা দুপুরের এবং রাতের খাবারে মেথি খাওয়ার ১০ দিন পরে তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা হ্রাস পেয়েছিল।
ত্বক ভালো রাখে:
এই শাক ত্বক আর চুলের সৌন্দর্যও রক্ষা করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের নীচে জমে থাকা ফ্রি-র্যাডিক্যাল কমিয়ে ত্বকে আনে বাড়তি উজ্জ্বলতা।
সেই সঙ্গে অন্যান্য ভিটামিন ত্বকের অনেক সমস্যা কমায়। খাওয়ার পাশাপাশি এই শাকের পেস্ট মুখে মাখলেও অনেক উপকার পাবেন।
মেথিগুঁড়ো তেলে মিশিয়ে নিয়মিত স্কাল্পে ম্যাসাজ করলে চুল পড়া কমে যায়। খুশকি হয় না। মজবুত থাকে চুলের গোড়া। এমন কি অকালপক্কতাও কমে যায়।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এর উৎস:
বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন “সি” এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি দ্বারা সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এই শাক বিভিন্ন অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সহায়তা করে।
১ কাপ মেথি শাকে ভিটামিন “সি” ৩৬.৪% এবং ১৩.৬৫% ভিটামিন “এ” রয়েছে। ভিটামিন “সি” তাপে নষ্ট হয়ে যায় তাই শাকসবজি বেশি পরিমাণে রান্না করা এড়িয়ে চলুন।
পেটের নানা সমস্যা নিরাময়ে:
মেথি শাক গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মেথিশাক আমাশয় এবং ডায়রিয়া নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে। এই শাক লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং বদহজম দূর করতেও দারুন উপকারী।
ওজন কমায়:
মেথি শাক মানেই হাই ফাইবার। সঙ্গে আরও অনেক পুষ্টি। বেশি ফাইবার থাকায় অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে।
ফলে এমনিতেই খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। ফলে ওজনও ঝরে।
ভালো কোলেস্টেরল উৎপাদন করে:
মেথি শাক অন্ত্রের কোলেস্টেরল শোষণ এবং যকৃতে কোলেস্টেরল উৎপাদন উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।
এই শাকটি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (Atherosclerosis) এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোলেস্টেরল হ্রাস করে।
কিছু গবেষণায় আরও দেখা যায় যে মেথি ভালো কোলেস্টেরল HDL উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে, খারাপ কোলেস্টেরল LDL এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উৎপাদন হ্রাস করতে পারে।
রক্তাল্পতা রোধ করে:
১ কাপ মেথি শাকে ২১.০৭ এমসিজি ফোলেট থাকে। এই শাক কিশোরী মেয়েদের গর্ভবতী মায়েদের রক্ত গঠনের জন্য খুব ভাল একটি খাবার।
আয়রন হিমোগ্লোবিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, লাল রক্তকণিকার উপাদান যা ফুসফুস থেকে শরীরের সমস্ত অংশে অক্সিজেন বহন করে।
সুতরাং আপনার যদি আয়রনের ঘাটতি থাকে তবে অবশ্যই মেথি শাক খান।
পুরুষদের মধ্যে হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে:
মেথি শাক পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন (testosterone) হরমোনের উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি যৌনকামনা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করতে পারে।
হার্টের ঝুকি কমায়:
মেথির বীজ বা মেথি শাক নিয়মিত সেবন করা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। মেথি শাক কোলেস্টেরল উন্নত করে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
মেথি হল একটি ঔষধি যা স্ট্রোকের ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি হ্রাস করে।
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য:
বুকের দুধ শিশুর বিকাশের জন্য পুষ্টির সর্বোত্তম উৎস হিসাবে পরিচিত। যে মায়েরা দুধের দুধ উৎপাদন নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তারা মেথি শাক থেকে উপকৃত হতে পারেন।
মেথি শাক মায়ের বুকের দুধের উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে পারে।
হজম সিস্টেমের জন্য ভালো:
মেথি শাকে উপস্থিত অদ্রবণীয় ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রেখে পেট ফাঁপা, বদহজমের সমস্যা দূর করে।
তাই এই শাক খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন।