মাথা যন্ত্রণা কেন হয়? মাথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবার উপায়।
মাথা যন্ত্রণা খুবই জটিল একটি সমস্যা। মাথা যন্ত্রণা এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে।
দৃষ্টিস্বল্পতা, কাজের চাপ, রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় নাই, অতিরিক্ত টেনশন, জোরে শব্দ বা অতিরিক্ত সূর্যের তাপ এমনকি অতিরিক্ত ঠান্ডায়ও মাথা ব্যথা হতে পারে।
এছাড়া সর্দি-কাশি, জ্বর এবং গাঢ় সুগন্ধির কারণেও মাথায় ব্যথা হতে পারে।
রোদ বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক-মানসিক পরিশ্রম, ক্ষুধার্ত থাকা, মানসিক চাপ ইত্যাদি কারণে মাথা যন্ত্রণা হতে পারে।
কাজেই এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবার আগে এসব অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। মাথা যন্ত্রণার ধরন বা কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়।
মাথা যন্ত্রণা কী এবং কেন হয়?
মাথা ও ঘাড় বরাবর যন্ত্রণা করাই মাথা যন্ত্রণা নামে পরিচিত। ব্রেইন ও হাড়ের আবরণ তার চারপাশের রক্তনালি, নার্ভ তাদের আবরণ, মাথার চামড়ার নিচের মাংসপেশি, চোখ, সাইনাস, কান ও ঘাড়ের মাংসপেশির ইত্যাদির প্রদাহ এবং টানই মূলত মাথা যন্ত্রণার প্রধান কারণ।
ঘরোয়া উপায়ে মাথা যন্ত্রণা দূর করার উপায়
নিচে ঘরোয়া উপায়ে মাথা যন্ত্রণা দূর করার উপায় বলা হলো এবং সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
সময়মতো খাবার খান:
সঠিক সময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার যাঁরা খেয়ে থাকেন তাঁদের অযথা মাথা যন্ত্রণা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
নিয়মমাফিক কাজ চালানোর জন্য মস্তিষ্কে গ্লুকোজের প্রয়োজন হয় আর সময়মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি মস্তিষ্কে সরবরাহ না হলে মাথা যন্ত্রণা হয়।
বিশ্রাম করুন:
কাজের ফাঁকে চোখ বন্ধ করে কিছু সময় বিশ্রাম করা উচিত। ঘরের আলো কমিয়ে চেয়ার বা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বা শুয়ে কিছু সময় বিশ্রাম নিলে মাথা যন্ত্রণা কমে আসবে।
হাসুন:
হালকা মাথা যন্ত্রণা উপশমে হাসি বেশ উপকারী। হাসলে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টিকারী হরমোন এন্ড্রোফিন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এন্ড্রোফিন মাথা যন্ত্রণা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
প্রাণভরে শ্বাস নিন:
বুক ভরে শ্বাস নিলে তা মাথা যন্ত্রণা উপশমে সাহায্য করে। বিশুদ্ধ বাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস নিলে তা প্রাকৃতিকভাবে মাথা যন্ত্রণা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
মানসিক চাপ থেকে ছুটি নিন:
যে পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে হবে সেখান থেকে সরে যান।
এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে খোলা কোনো জায়গা থেকে হেঁটে আসতে পারেন অথবা মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবে এমন কিছু করতে পারেন।
পানি পান করুন:
পানি আমাদের শরীরের অধিকাংশ রোগ দূর করতে পারে। অপর্যাপ্ত পানি পান করা মাথা ব্যাথার অন্য আরেকটি কারণ হতে পারে।
অধ্যয়নগুলি প্রমাণ করেছে যে, দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশন হল মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেনের একটি সাধারণ কারণ।
মাথা ব্যাথার সময় আমাদের বেশি পরিমাণে পানি পান করা উচিত। কেননা সঠিক পরিমাণে পানি পান করলে মাথা ব্যথা কমাতে সহায়তা করবে।
এছাড়াও আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে, যা মাথা ব্যথাকে কমাতে সহায়তা করবে।
পর্যাপ্ত ঘুম:
পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতি রাতে ছয় ঘণ্টারও কম ঘুমিয়েছে এবং যারা বেশি ঘুমিয়েছে তাদের মধ্যে তুলনা করে দেখা গেছে যে, যারা কম ঘুমিয়েছে তাদের ঘন ঘন এবং তীব্র মাথা ব্যথা ছিল।
তবে খুব বেশি ঘুমও মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। তাই প্রাকৃতিক ভাবে মাথা ব্যথা প্রতিরোধ করতে হলে সঠিক বিশ্রাম অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
ম্যাগনেসিয়াম:
রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ এবং স্নায়ু সংক্রমণসহ দেহে অগণিত ক্রিয়াকলাপের জন্য ম্যাগনেসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মজার বিষয় হচ্ছে ম্যাগনেসিয়াম মাথা ব্যথা কমাতে কার্যকর।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ৬০০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম সাইট্রেট দিয়ে চিকিৎসা মাইগ্রেনের মাথা ব্যথার তীব্রতা হ্রাস করতে সহায়তা করে।
কফি পান করুন:
মাথা ব্যথা কমাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি পানীয় উপাদান হলো চা এবং কফি। এই দুটোই মাথা ব্যথার ঔষুধ হিসেবে কাজ করে।
এছাড়া কফির মধ্যে থাকা ক্যাফিন মাথা ব্যথা কমাতে কিংবা মাথা ব্যথার চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া আদা চাও মাথা ব্যথা দূর করতে খুবই কার্যকর। এই দুটো পানীয় তৎক্ষণাৎ মাথা ব্যথা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করে।
ব্যয়াম করুন:
মাথা ব্যথার ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা হ্রাস করার একটি সহজ উপায় হল শারীরিক কাজ কর্মে লেগে থাকা।
উদাহরণস্বরূপ, ৯১ জনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মাথা ব্যথার ফ্রিকোয়েন্সি হ্রাস করার জন্য Relaxation এর থেকে যারা ৪০মিনিট ধরে বাইরে সাইকেল চালায় তাদের মধ্যে মাথা ব্যথা কম ছিল।
৯২,০০০ এরও বেশি লোক সহ আরও একটি অধ্যয়ন দেখায় যে, নিম্ন স্তরের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ স্পষ্টভাবে মাথা ব্যথার ঝুঁকির সাথে জড়িত ছিল।
শক্ত ঘ্রাণ এড়িয়ে চলুন:
যেকোনো ধরনের দৃঢ় গন্ধ সম্পন্ন পারফিউম, ধুপকাঠি কিংবা সুগন্ধি ব্যবহারের ফলে হঠাৎ মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।
মাইগ্রেন বা টানাপূর্ণ মাথাব্যথার অভিজ্ঞতার শিকার হওয়া ৪০০ জনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, শক্ত গন্ধ, বিশেষত সুগন্ধিগুলি প্রায়শই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যদি আপনার মনে হয় গন্ধের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে তাহলে আতর, সিগারেটের ধোঁয়া এবং সুগন্ধযুক্ত খাবারগুলি এড়িয়ে চললে মাথা ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।
রোদ থেকে দূরে থাকতে হবে:
রোদ আমাদের শরীরের জন্য ভালো হলেও। কাঠফাটা রোদে আমাদের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।
যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তারা রোদে ছাতা ব্যবহার করুন বা খুব বেশি রোদে রাস্তায় না বেরোনো ভালো কারণ রোদে গেলে তাদের মাথা ব্যথা বাড়তে পারে।
মাথা ব্যথাকে অবহেলা না করে সেটি যদি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।