মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর বদভ্যাস।

ভালো অভ্যাসের মতোই খারাপ অভ্যাসগুলো আমাদের মধ্যে তৈরি হয়। ইচ্ছে করলেই অভ্যাস পরিহার করা যায় না, কিন্তু চেষ্টা করলে নিজেকে ইতিবাচক উপায়ে বদলে ফেলা সম্ভব।

খারাপ অভ্যাস গুলো আমাদের মস্তিষ্কে নানা ভাবে প্রভাব ফেলে থাকে। যার ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে।

তাই খারাপ অভ্যাস থেকে সরে আসতে চাইলে এখন থেকেই ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।

জেনে নিন মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর বদভ্যাসগুলি সম্পর্কে –

অতিরিক্ত চিনি খাওয়া:

দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি গ্রহণ আমাদের দেহের প্রোটিন এবং পুষ্টি গ্রহণ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

এর ফলে পুষ্টির অভাবে মস্তিষ্কের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে স্মৃতিশক্তি বিকাশে এবং চিন্তাভাবনাতে বাধা দেয়।

পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে না:

পর্যাপ্ত ঘুম সকল ধরণের অসুখের একমাত্র ঔষধ। কাজের চাপ, স্ট্রেসের ছুতোয় আমরা প্রায়ই খাওয়া-দাওয়া, ঘুম নিয়ে অবহেলা করি। অনেক বদভ্যাসও লালন করি নিজেদের সুবিধার জন্য।

তবে জানেন কি এই সব বদভ্যাসের কারণে অজান্তেই নিজেদের ক্ষতি করছি? ছোটখাট ক্ষতি নয়, এই সব বদভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে।

ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের যে অংশটি ভোগে তা হল হিপোক্যাম্পাস।

বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকাশ করেছে যে, মস্তিষ্ক কেবল গভীর ঘুমের সময় নিজেকে টক্সিন থেকে শুদ্ধ করে।

ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলির মারা যেতে পারে, যা স্মৃতিশক্তি হ্রাস করতে পারে।

হেডফোনে উচ্চ শব্দে গান শোনা:

আপনার ইয়ারফোন বা হেডফোনগুলির সাহায্যে খুব উচ্চ ভলিউমে সংগীত শুনতে আপনার শ্রবণ ক্ষমতা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।

মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে একজনের শ্রবণশক্তি লোপ ঘটাতে পারে। ভবিষ্যতে স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং মস্তিষ্কের টিস্যুগুলির ক্ষতির মতো মস্তিষ্কের কিছু সমস্যার কারণ হতে পারে।

বয়স্কদের মধ্যে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়ার সাথে মস্তিষ্কের রোগ আলজেইমার ও ব্রেইন টিস্যু নষ্ট হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।

তাই ডিভাইসের ভলিউম ৬০% এর বেশি বা একটানা দুই ঘণ্টার বেশি গান শোনা এড়িয়ে চলুন।

পর্যাপ্ত পানির অভাব:

গবেষণায় দেখা গেছে যে হালকা ডিহাইড্রেশন মেজাজকে দুর্বল করতে, স্মৃতিশক্তি অর্থাৎ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে।

অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু থেকে শুরু করে বয়স্কদের মধ্যেও ডিহাইড্রেশন মেজাজ, স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে।

তাই আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

মস্তিষ্কের প্রায় ৮০% পানি হয়। মস্তিষ্কের দ্রুত চিন্তা করতে এবং আরও ভাল ফোকাস করার জন্য পর্যাপ্ত জল প্রয়োজন।

সুতরাং, আপনি সর্বদা হাইড্রেটেড থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পরিমাণে জল পান করা আপনার দেহ এবং মস্তিষ্ক উভয়কেই আরও ভালভাবে কাজ করতে সুবিধা করবে।

ধূমপান করা:

ধূমপান মস্তিষ্কের খুব ক্ষতিকারক একটি বদভ্যাস। স্মৃতিশক্তি হ্রাসের জন্য এই বদভ্যাসটিকে দায়ী করা হয়।

সেই সাথে ডিমেনশিয়া ও আলজেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় ধূমপান। হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বৃদ্ধি করে এটি।

অতিরিক্ত খাবার খাওয়া:

খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হলেও যদি তা অধিক পরিমাণে খাওয়া হয় তবে তা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এই বদ-অভ্যাস চিন্তা ও স্মরণশক্তির ওপর প্রভাব ফেলে।

দীর্ঘ দিন থেকে অতিরিক্ত খাবার খেলে মানুষ মারাত্মকভাবে মোটা হয়ে যেতে পারে যা আলজেইমারের সাথে সম্পর্কযুক্ত রোগ যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ ক্যালোরি গ্রহণ ভবিষ্যতে একজন ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি হ্রাস করতে পারে।

মাথা ঢেকে ঘুমানো:

আপনি অবশ্যই ভাবছেন যে এগুলি খুব সাধারণ জিনিস যা আপনি প্রায়শই প্রতিদিন করেন। মাথা ঢেকে ঘুমালে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার বৃদ্ধি পায় এবং অক্সিজেনের ব্যবহার হ্রাস পায়।

অক্সিজেন মস্তিষ্কের সঠিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মস্তিষ্ক যদি অক্সিজেন পর্যাপ্ত পরিমাণ না পায় তাহলে মস্তিষ্কের কোষগুলি ক্ষতি হয়।

অন্ধকারে অনেক বেশি থাকা:

পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোর অভাব বিষণ্ণতা বা অবসাদের মত মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে যা মস্তিষ্ককে মন্থর করে ফেলে।

গবেষণায় দেখা গেছে প্রাকৃতিক আলো থাকলে ভালোভাবে কাজ করে আমাদের মস্তিষ্ক।

রেফারেন্স: