বিভিন্ন প্রকার ডালের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

বাঙালির খাদ্যাভ্যাসকে “মাছে-ভাতে” বলে খণ্ডায়িত করা হলেও আসল অর্থে ডাল ছাড়া তা অনেকটাই অপরিপূর্ণ। ডাল উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ভালো উৎস। এটা শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে ও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে।

এছাড়াও ডাল নানা রকম খনিজ ও পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় তা শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এই ডালের ব্যবহার এতো বেশি যে চালের পরেই এর স্থান। ভাতের সঙ্গে তো থাকছেই, রুটিতে ডাল না হলে চলেই না। হালুয়া, চর্চরি, খিচুড়ি এমনকি বিভিন্ন সবজির সঙ্গেও ডালের প্রচলন রয়েছে। স্বাদের দিক থেকে বিভিন্ন পদের ডাল বিভিন্ন স্বাদের।

ডাল তো খান দিব্যি, রোজ সকালে গিন্নির হেঁশেলে গিয়ে কি ডাল রান্না হবে, তার তত্ত্ব-তালাসও করেন। কিন্তু জানেন কি ডালের উপকারিতা? আমরা সবাই কম-বেশি জানি যে ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। যারা নিরামিশ খান, তাঁদের বেশী করে ডাল খেতে বলা হয়। আমিষ প্রোটিনের ঘাটতি ডাল অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ডালে যে নানারকম ভিটামিন, ফসফরাস ইত্যাদি মিনারেলও থাকে, তা তো জানেন না?

মুগ, মসুর, ছোলা, অড়হর, মটর এমন আরও অনেক রকম ডাল রয়েছে। তাহলে আসুন এবার জেনে নিই, বিভিন্ন প্রকার ডালের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে-

মসুর ডাল:
ডালের মধ্যে মুসুর ডালেই সবথেকে বেশী প্রোটিন ও ফাইবার থাকে। এছাড়া মসুর ডালে পটাশিয়াম, ফাইবার, প্যান্টোথ্যানিক অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন “বি”১ প্রচুর পরিমাণে থাকায় এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। ১০০ গ্রাম রান্না করা মুসুর ডালে প্রায় ১১৬ ক্যালোরি থাকে। গলা, অন্ত্রের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে উপকারী এবং হিমোগ্লোমিন বাড়ায় মসুর ডাল। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এই ডাল খুব উপকারী। মসুর ডাল রক্তে শর্করা আর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

মুগ ডাল:
উচ্চ আঁশ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ভালো উৎস এই ডাল। কাঁচা মুগ ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন “বি”, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, জিঙ্ক ও ফাইবার। তাই এই ডাল যেমন সুস্বাদু, তেমনই পুষ্টিকরও। মুগ ডাল হজম করা খুবই সহজ। তাই বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে রোগীকে মুগ ডালের খিচুড়ি খাওয়ানোর পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও মুগের ডাল খাওয়া খুব উপকারী।

ছোলার ডাল:
ছোলার ডাল বা চানা ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার, কপার, ফোলেট, মলিবডেনামের মতো জরুরি উপাদান। যেগুলো আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই ডাল যেমন সুস্বাদু, তেমনই পুষ্টিকর। ডায়াবেটিসের রোগীদের যদি ছোলার ডাল খাওয়ানো যায়, তাহলে ভাল ফল মেলে। আর ছোলার ডালে কোলেস্টেরলের পরিমাণও কম থাকে।

অড়হর ডাল:
অড়হর ডাল অত্যন্ত পুষ্টিকর। এই ডালে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন “বি” আর পটাশিয়াম রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। উচ্চ আঁশ ও প্রোটিন সমৃদ্ধ এই ডাল পেটভরা রাখে, ক্ষুধা কমায়, ওজন কমায় ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে ভিটামিন “সি”, “ই”, “কে”, “বি” কমপ্লেক্স, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, সোডিয়াম ও জিংক পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী সব উপাদান।

বিউলির ডাল:
বিউলির ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। হজমের সমস্যা কমাতে বিউলির ডাল অত্যন্ত কার্যকর। ভাতের সঙ্গে ছাড়াও পরোটা বা রুটির সঙ্গেও অনেকে এই ডাল খেতে ভালবাসেন। দোসা, বড়া বা এই জাতীয় পদ তৈরির ক্ষেত্রে বিউলির ডাল অপরিহার্য একটি উপাদান।