আমরুল বা আমবলি শাক আমাশয় নাশক, হজমকারক, মূত্রবর্ধক ও মুখের রুচি বাড়ায়।

বন্ধুরা, শাকটি আমরা অনেকেই চিনি আবার অনেকেই হয়তো চিনি না। আপনার বাড়িতে, জমিতে, মাঠে-ঘটে, রাস্তার পাশে এমনিতেই জন্মে বলে অনেকে একে অবহেলা করে থাকি। এখন বাজারে কিনতেও পাওয়া যায়।

ভীষণ সুস্বাদু খেতে শাকটি টক স্বাদের হয়ে থাকে। এর ঔষধি গুণের কথা জানলে আপনি আর একে অবহেলা করবেন না।

আমরুল বা আমবলি শাক ভোজ্য এবং ভিটামিন সি এর সমৃদ্ধ উৎস। বাঙালির forgotten রেসিপির খাতায় নাম উঠলেও এখনও হারিয়ে যায়নি আমরুল শাকের মজাদার সব রান্না।

গরম ভাতে আমরুল শাক ভাজা সাথে যদি চিংড়ি মাছ বেটে দেওয়া যাই তাহলে তো কথাই নেই।

আমরুল বেগুনের টক, আমরুল লাউয়ের টক মজাদার সব খাবারের রেসিপি। মুখে রুচি আনে ও হজমকারক।

আম রুক অর্থাৎ আমাশয় রোগ নাশ করে বলে একে কোথাও কোথাও আমরুক বলে। পাতায় তিনটি করে হৃৎপিণ্ডের আকারের টক স্বাদের পত্রক থাকে বলে একে চুকাত্রিপতীও বলা হয়।

কোথাও কোথাও এটিকে অম্বলী এবং শুশুক পাতাও বলে।

সাধারণত এটি বাড়ির আনাচে-কানাচে, ছায়াযুক্ত স্থানে অনায়াসে টিকে থাকতে পারে।

হলুদ আমরুলের পাতা ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পাতা রস করে বা শাক হিসাবে খেলে সর্দি, আম, প্রসাবে সমস্যা ইত্যাদি অসুখে ভালো কাজ দেয়।

জ্বালাময়ী অন্ত্রের ব্যাধি, ডায়রিয়া, হেমোরয়েডস, চর্মরোগ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়

বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে হলুদ আমরুল শাক বা আমবলি শাক দেখতে পাওয়া যায়।

আমরুল ছেট ছোট, সরু লতানো উদ্ভিদ। আমবলি শাক বা Indian Sorrel এর সংকৃত নাম Changeri.

Geraniaceae-পরিবারের এই শাকটির বৈজ্ঞানিক নাম Oxalis Corniculata. ইংরেজিতে এটি creeping wood sorrel or procumbent yellow sorrel নামে পরিচিত।

হিন্দি নাম- তিনপাতিয়া, আমলা পত্রিকা, পাঞ্জাবির নাম- খট্টি বুটি, খট্টমিতা। এর সংস্কৃত নামগুলি অম্বাশত, আমলাপত্রিকা, আমলিকা ইত্যাদি।

পুষ্টিগুণ

এটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিনোসিসপটিভ, অ্যান্ট্যানস্যানার, অ্যান্টিডিবাটিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং ক্ষত নিরাময়ের বৈশিষ্ট্যযুক্ত।

আমবলি শাকের উপকারিতা বা ঔষধি গুণ

আমবলি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “এ”, ম্যাগনেসিয়াম, আইরন, সোডিয়াম ক্যালসিয়াম। এতে ক্যালোরি কম কিন্তু ফাইবার বেশি।

আমাশয় রোগে হিতকর:

আম দোষ দূর করে বলে এটির এক নাম আমরুক, যা আগেই উল্লেখ করা। আমাশয় (ইং: Dysentery) একটি অতিসাধারণ ব্যাধি যা মানব অন্ত্রে সংক্রমণের মাধ্যমে ঘটে থাকে।

ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের পরিপাক তন্ত্রে সংক্রমণ করে। অন্ত্রের সংশ্লিষ্ট অংশে প্রদাহের সৃষ্টি হয়, পেট ব্যথা করে এবং শ্লেষ্মা ও রক্তসহ পাতলা পায়খানা হতে থাকে।

আমাশয় হলে পেট কামড়ানোসহ মলের সঙ্গে পিচ্ছিল আম অথবা শ্লেষ্মাযুক্ত রক্ত যায়। রোগীর বারবার পাতলা পায়খানা হতে থাকে। মলের সঙ্গে মিউকাস (শ্লেষ্মাঝিল্লি) বা আম বেশি থাকে।

সাধারণত ডানদিকের তলপেটে ব্যথা হয়৷ ডিহাইড্রেশান প্রতিরোধের স্বার্থে প্রচুর পরিমাণে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে৷ আমরুল পাতার রস অল্প চিনির সাথে মিশিয়ে শরবতের মতো খেলে আমাশয় নিরাময় হয়।

হজমকারক:

শাক রান্না করে খেলে ক্ষুধা বৃদ্ধি হয়। এটি হজম এবং বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। তাই এটি হজমকারক হিসাবে পরিচিত।

কফ-কাশিতে ভালো:

চমৎকার ভিন্ন এক টক স্বাদের আমরুল শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “সি”। তাই এটি কফ কাশি ও সাইনাস সমস্যায় ভীষণ উপকারী।

শিশুদের বুকে সর্দি বসে গেলে অথবা কাশি হলে মূলসহ আমরুল পাতার এক চামচ রস গরম করে দিনে ১ বার বা প্রয়োজনে ২ বার খাওয়ালে জমা সর্দি উঠে যায়।

ফোঁড়ার যন্ত্রনা লাঘবে:

কোন স্থানে ফোড়ায় যন্ত্রণা হলে আমরুলের পাতা বেটে প্রলেপ দিলে যন্ত্রণা লাঘব হয়। পাতা গরম পানিতে বেটে ফোড়ায় প্রলেপ দিলে ফোড়া ফেটে যায়।

জ্বর কমায়:

আমরুল রস জ্বরনাশক। জ্বর চিকিৎসায়, আমাশয় এবং স্কাভি রোগে ব্যবহার ওষুধের অন্যতম ভেষজরুপে আমরুল পরিচিত।

পুরাতন আমাশয় রোগে মাখন তোলা দুধের সাথে আমরুল পাতা সিদ্ধ করে দিনে ২/৩ বার খেলে বিশেষ উপকার হয়।

এসিডিটি হ্রাস করতে:

অনেকে টক খেতে ভালবাসেন, কিন্তু খেলে অম্ল হয়। এক্ষেত্রে আমরুল ব্যবহার শ্রেয়। কারণ এতে আছে অম্ল, মধুর ও কষায় এ তিনটি রসের সমন্বয়।

তাই আমবলি অম্লপিত্ত রোগ না বাড়িয়ে অতৃপ্ত রুচিকে তৃপ্ত করে।

চুলকানি ও পাঁচড়া নিরাময়ে:

অমরুলের জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে, তাই গায়ে চুলকানি অনেক সময় পাঁচড়া হয়ে যায়, মনে হয় যেন দাদ হয়েছে। এমন ক্ষেত্রে অমরুল পাতার রস গায়ে মাখলে উপশম হয়।

মূত্রগ্রহ রোগ নিরাময়ে:

মূত্রগ্রহ রোগ হলে অর্থাৎ প্রস্রাবের বেগ হয় কিন্তু হয় না-অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনের দরকার হয়।

এরুপ ক্ষেত্রে আমরুল পাতার রস ২ চা চামচ করে প্রতিদিন ৪ বার আধা কাপ পানি মিশিয়ে খেলে ঐ অসুবিধা সেরে যায়।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্রঃ wiki, planetayurveda.com, ccras.nic.in