প্রক্রিয়াজাত খাবার কি? প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষতিকর প্রভাব।
প্রক্রিয়াজাত করা খাবার খাওয়া ভালো নয় এ কথা আমরা প্রায়ই শুনি। প্রক্রিয়াজাত খাবার আসলে কী এবং কেন তা এড়িয়ে চলা উচিত তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট না। খাবারের প্রাকৃতিক অবস্থার একটি পরিবর্তিত রূপকে প্রক্রিয়াজাত খাবার বলে যা কাঁচা অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
সংরক্ষণ, স্বাদবৃদ্ধি ও দৃষ্টিনন্দন করতে খাবারে কিছু স্বাস্থ্যহানিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। ফাইবারের পরিমাণ কম থাকায় প্রক্রিয়াজাত করা খাবার হজম কম হয়। যার কারণে আমাদের নানা সমস্যা হতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষতিকর প্রভাব নিচে আলোচনা করা হলো:
পুষ্টির অভাব:
প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোতে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন ,ক্যালরি ও ফ্যাট থাকে যা অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ কোলেস্টরল ও ফ্যাটি লিভারের মতো বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত ভিটামিন মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে না তাই পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে।
ক্যানসারের কারণ:
প্রক্রিয়াজাত খাবারে সিনথেটিক বা প্লাস্টিকের উপাদান মিশে যায় যা আমাদের শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকারক। বাজারে যেসব বোতলজাত পানীয় পাওয়া যায় সেগুলোতে ফরমালডিহাইড নামের কেমিক্যাল থাকে যা প্রোস্টেট ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্যানসারের কারণ হতে পারে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে বেশি মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে ক্যান্সারের ঝঁকি ১২%।
মানসিক প্রভাব:
প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে মস্তিকে ডোপামিন নিঃসরণ কমে যায় যা মানসিক প্রভাব ফেলে। খাবার ও পানীয়ের মান ঠিক রাখতে কোম্পানি গ্লাসের তৈরি পাত্রে পণ্য বাজারজাত করে। ক্ষতিকর প্লাস্টিকের চেয়ে বোতলজাত বা গ্লাসের তৈরি পাত্রে থাকা খাবার বেছে নেয় ভোক্তারা।
অনেক গ্লাসে সীসা থাকে এই সীসা থাকা নিউরোটক্সিন শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। এটির কারণে দুর্বল মনোযোগ সমস্যা হতে পারে। এটি অল্প বয়সি শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়:
ফাস্ট ফুড যারা বেশি খান তাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কারণ প্রক্রিয়াজাত করার জন্য সেগুলোতে কেমিক্যাল মিশে যায়। এসব খাবার শরীরে প্রবেশ করে দ্রুত রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
ডায়াবেটিস জন্ম দেয়:
প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। আমরা যেসব প্লাস্টিকের পাত্র বা বোতল ব্যবহার করি সেগুলোতে স্বাস্থ্যহানিকারক রাসায়নিক উপাদান ফ্যাটালেট থাকে। এটি খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে থাকে। এমনকি টাইপ-2 ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের কারণ হয়ে থাকে।
প্রজনন সমস্যা:
প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকে ফ্যাটালেট যা দেহের হরমোনগুলোকে ব্যাহত করে। এমনকি প্রজনন সমস্যা ও দেখা দিতে পারে। প্লাস্টিকের পাত্র বা বোতলজাত খাবারে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক দেহের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। মানুষের শরীরে টক্সিন বেশি প্রবেশ করলে প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অ্যাজমার ঝুঁকি বাড়ায় :
প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্যাকেট হতে বিসফেনল এ বা বিপিএ নামক কেমিক্যাল শরীরে প্রবেশ করলে অ্যাজমার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এই ক্ষতিকারক উপাদানটি বেশি থাকে প্লাস্টিকের তৈরি ইলেকট্রিক কেটলি বা কনটেইনারে। বিপিএ কেমিক্যাল ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুদের অ্যাজমার কারণ হয়ে থাকে।
প্রক্রিয়াজাত করা খাবার খাওয়া আমাদের সাস্থের জন্য ক্ষতিকারক। আমরা এই প্রক্রিয়াজাত করা খাবার থেকে বিরত থেকে অনেটা সুস্থ থাকতে পারি।