পান্তা ভাতের অনেক গুন। নিচিন্তে খেয়ে নিন ও উপকারীতা জেনে নিন।

শীতকাল বাদে বছরের বেশিরভাগ সময়ে অর্থাৎ গরমের সময়ে বাংলার ঘরে ঘরে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে পান্তাভাত একটি অতি সুপরিচিত খাবার। এটিকে ইংরেজিতে Fermented Rice বা Soaked Rice বলা হয়ে থাকে।

পান্তা ভাত কি?

সাধারণতঃ ১০-১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা ফার্মেন্টেড (গাঁজানো)- ভাতকে আমরা পান্তাভাত বলি। রুম টেম্পারেচার অর্থাৎ ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আগের দিন বিকালে বা রাত্রে ভাত পানিতে ভিঁজিয়ে রাখা হয়। 

পরের দিন সকালে এটা খাওয়া হয়। এই সময়টায় এতে কিছু উপকারি ব্যাকটেরিয়া ও এসিড তৈরী হয়। এটাই এর গোপন রহস্য।

গ্রাম বাংলায় পান্তাভাত

হাজার বছর আগে পান্তাভাতই মানুষ বেশি খেতো এবং সকালবেলা গরমভাত অপেক্ষা পান্তা ভাতই বেশি জনপ্রিয় ছিলো। শীতল, তাপনাশক অর্থাৎ শরীর ঠান্ডা রাখে বলে গ্রামের কর্মজীবী মানুষ এটা খেয়ে থাকে।

গ্রীষ্মকালের যে সময়টায় বেশি গরম পড়ে তখন এই খাবারটা খেয়ে কাজে বের হন। পান্তাভাত সাধারণত লবন, কাঁচা পেঁয়াজ কাঁচা মরিচ বা শুকনো মরিচ ভাজা দিয়ে খাওয়া হয়।

সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, পান্তাভাতে রয়েছে অনেক পুষ্টিকর উপাদান ও স্বাস্থ্যসুবিধা।

কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ল্যাকটিক এসিড যুক্ত হওয়ায় এটি ফার্মেন্টেড হয়ে পরিমানে কিছুটা বেড়ে যায় এবং আলাদা একটা স্বাদ যুক্ত হয়। সারারাত পানিতে থেকে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হয়।

আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম- এর পরিমান বেড়ে যায়। সোডিয়ামের পরিমান কমে যায়।

পান্তা ভাতের স্বাস্থ্য উপকারিতা

সাম্প্রতি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, পান্তাভাতের রয়েছে অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। নিচে পান্তা ভাতের স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো –

আয়রনের পরিমান বৃদ্ধি পায়:

ভাত ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন তৈরী হয়। সেখানে সমপরিমাণ গরমভাতে আয়রন থাকে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম।

পটাসিয়াম/ক্যালসিয়াম এর পরিমান বৃদ্ধি পায়:

১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে পটাসিয়ামের পরিমান বেড়ে হয় ৮৩৯ মিলিগ্রাম। এবং ক্যালসিয়ামের পরিমান বেড়ে হয় ৮৫০ মিলিগ্রাম। যেখানে সমপরিমাণ ভাতে ক্যালসিয়াম থাকে মাত্র ২১ মিলিগ্রাম।

সোডিয়ামের পরিমান হ্রাস পায়:

পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমান কমে হয় ৩০৩ মিলিগ্রাম। সমপরিমাণ গরম ভাতে সোডিয়াম থাকে ৪৭৫ মিলিগ্রাম। আমরা জানি, অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

এনজাইমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়:

আমেরিকান নিউট্রিশন এসোসিয়েশনের গবেষণা মতে, ভাত যদি আমরা ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখি তবে এতে তৈরী হয় ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া। এতে ভাতে থাকা পুষ্টিবিরোধী উপাদান কমে যায়।

ভাত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পাকস্থলীর প্যানক্রিয়াটিক আমাইলেজসহ আরো কিছু এনজাইমের কার্যকারিতা বহু গুন বেড়ে যায়। ফলে পান্তা ভাতের জটিল শর্করাগুলো সহজেই হজম হয়ে যায়।

হজমে সাহায্য করে:

কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয় যা আমাদের হজমে সাহায্য করে। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিনাম বৃদ্ধি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পান্তা ভাতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

ত্বক ভালো রাখে:

তারুণ্যময় উজ্জ্বল ত্বক ধরে রাখতে সাহায্য করে ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

B ভিটামিন সমৃদ্ধ:

পান্তা ভাতে পাওয়া যায় ভিটামিন B-৬ ও ভিটামিন B-১২ যা খুব কম খাবারে পাওয়া যায়। এই ভিটামিন B-৬ রক্তে শর্করার পরিমান ঠিক রাখে ও ভিটামিন B-১২ আমাদের এনিমিয়া থেকে দূরে রাখে।

শরীর সতেজ ও ঠান্ডা রাখে:

পান্তা ভাত শরীর সতেজ রাখে ও শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখে।

সর্তকতা

পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিকের মধ্যে এটি খেলে ঘুম ঘুম ভাব বা ঝিমুনি হয়।

বর্তমানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে পান্তা খাওয়ার ধুম শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে পান্তা ইলিশ- পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ মাছ ভাজা। এতে করে আমরা ইলিশ বেড়ে ওঠার মৌসুমে অপরিপক্ব ইলিশ (জাটকা ইলিশ) ধরে নিজেদেরই ক্ষতি ডেকে আনছি। দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ করছি।

ইলিশ খেতেই হবে এমনটি নয়। পান্তা আমরা অবশ্যই খাবো। হাজারো ভর্তা, ডাল, অনান্য মাছতো আছেই।