পটাসিয়ামের ঘাটতি কিডনি রোগের কারণ, কোনগুলো উচ্চ পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার?
পটাসিয়াম একটি খনিজ এবং একটি ইলেক্ট্রোলাইট। এই খনিজটি আমাদের পেশীগুলিকে কাজ করতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি আমাদের হৃদস্পন্দন এবং নিঃশ্বাস কে নিয়ন্ত্রণ করে। পটাসিয়াম খাবার থেকে আসে।
আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় পটাসিয়াম ব্যবহার করে এবং অতিরিক্ত পটাসিয়াম কিডনি মাধ্যমে রক্ত থেকে সরিয়ে দেয়।
কিডনি সুস্থ্য থাকলে আমাদের শরীরে পটাসিয়ামের ভারসাম্য ঠিক থাকে। কিডনি দুর্বল থাকলে, কিডনি সঠিক ভাবে শরীরের অতিরিক্ত পটাসিয়াম সরিয়ে ফেলতে পারে না।
পটাসিয়াম স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে, কোষগুলিতে পুষ্টি পরিবহন করে এবং স্বাস্থ্যকর স্নায়ু জন্য প্রয়োজনীয়।
স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিদের জন্য ৪,৭০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম প্রয়োজন। তবে বেশিরভাগ লোকেরা তাদের ডায়েটের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পটাসিয়াম পান না।
শরীর প্রাকৃতিকভাবে পটাসিয়াম উৎপাদিত হয় না। শরীরে পটাসিয়ামের ঘাটতি স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর সমস্যা। আবার শরীরে বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
যেমন- পটাসিয়াম বেশি গ্রহণ করলে কিডনি রোগ হয় ঠিক তেমনি পটাসিয়ামের ঘাটতি হলে কিডনির রোগ হয়। তাই পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এবং পানীয় সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
পটাসিয়ামের ঘাটতি হলে কি হয়
পটাসিয়ামের ঘাটতি হলে কিডনির রোগ, অতিরিক্ত ঘাম হয়, ডায়রিয়া এবং বমি বমিভাব হয়, ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হয়।
উচ্চ পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
নিচে উচ্চ পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া হলো –
মিষ্টি আলু:
মিষ্টি আলু ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রায়শই আলুর বিকল্প হিসাবে।
একটি মাঝারি আকারের মিষ্টি আলুতে ২৭% (DV) পটাসিয়াম থাকে। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে। এছাড়া ভিটামিন “এ” এর চমৎকার উৎস হিসাবে কাজ করে।
পালংশাক:
পালংশাকে বিদ্যমান ১০টিরও বেশি ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। এক কাপ পালংশাকে মধ্যে ৫৪০ মিলিগ্রাম বা প্রায় ১২% পটাসিয়াম থাকে।
এছাড়া পালংশাক ভিটামিন “কে”, ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি” এবং ফোলেটের পাশাপাশি ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন বি-2 এর একটি ভালো উৎস।
তরমুজ:
তরমুজ একটি মসৃণ সবুজ ত্বক, লাল সজ্জা এবং রস বিশিষ্ট একটা ফল। প্রায় একটি তরমুজে ১৪% পটাসিয়াম রয়েছে। এছাড়া তরমুজ লাইকোপিনের একটি চমৎকার উৎস।
লাইকোপিন তরমুজের লাল রঙের জন্য দায়ী। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।
মানব গবেষণায় দেখা যায় যে, তাজা তরমুজের রসে থাকা লাইকোপিন এবং বিটা ক্যারোটিন উভয়ের রক্তের মাত্রা বাড়াতে কার্যকর।
ভিটামিন “এ” এবং “সি”, পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়ামের দুর্দান্ত উৎস তরমুজ।
ডাবের পানি:
ডাবের পানি একটি দুর্দান্ত, হাইড্রেটিং পানীয়। কম ক্যালোরিযুক্ত, প্রাকৃতিকভাবে চর্বি ও কলেস্টেরল মুক্ত, কলা থেকে অধিক পটাশিয়ামযুক্ত – এক কথায় অমৃত।
এক কাপ ডাবের পানিতে ১৭% পটাসিয়াম থাকে। এছাড়াও, এটি ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ এর ভাল উৎস।
শিম বীজ:
শিমের বীজ খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি খাবার। প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন এবং ভিটামিনের দুর্দান্ত উৎস শিমের বীজ। শিমের বীজে ২১% পটাসিয়াম থাকে।
ফসফরাস, পটাসিয়াম, ফোলেট এর পাশাপাশি শিমের বীজে ২০ টি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে।
আলু:
বিশ্বের অনেক দেশেই রুটি বা ভাতের বদলে আলু খাওয়ার প্রচলন আছে। একটি আলু ২৬% পটাসিয়াম সরবরাহ করে।
একটি সমীক্ষায় জানা গেছে যে আলু পটাসিয়ামের সর্বোত্তম উৎস।
এছাড়া আলুতে ভিটামিন “বি”, আমাইনো অ্যাসিড ও ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি ত্বকের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বিট:
পটাসিয়াম শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। বীট পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস।
পটাসিয়াম শরীরকে ইলেক্ট্রোলাইট করতে, স্নায়ু এবং পেশী সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
একটি উচ্চ-পটাসিয়াম ডায়েট উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করতে, স্ট্রোকের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে এবং অস্টিওপরোসিস ও কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক কাপ সেদ্ধ বিটে ১১% পটাসিয়াম রয়েছে।
ডালিম:
ডালিম বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর ফল। ডালিমের রসে ১০০ টিরও বেশি ফাইটোকেমিক্যাল থাকে।
এই ফলটি ওষুধ হিসাবে হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডালিম পটাসিয়ামের দুর্দান্ত উৎস। এক কাপ ডালিমে ১২% পটাসিয়াম রয়েছে।
কলা:
সমগ্র পৃথিবীতে স্বাস্থ্যকর ফলের তালিকার শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে এর অধিক পুষ্টি, ঔষধি গুন ও সহজ প্রাপ্যতার জন্য। বিশ্বের কোনো কোনো দেশের প্রধান খাবার কলা।
গবেষকরা দেখেছেন, একটি কলায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে।
আর মানবদেহে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের যোগান দেয়া গেলেই স্ট্রোকের হাত থেকে বছরে বেঁচে যেতে পারে ১০ লক্ষ মানুষ।