তালাক বা ডিভোর্স এর বিদ্যমান আইন কানুন জেনে নিন।
তালাক শব্দের অর্থ বিচ্ছিন্ন বা ত্যাগ করা। ইসলাম ধর্মে আনুষ্ঠানিক বিবাহ বিচ্ছেদকে তালাক বলা হয়। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুসারে তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে তালাক দাতার অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ্য মস্তিষ্কের হতে হবে।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী তালাক উচ্চারণ করলেই ইহা কার্যকর হবে না। তালাক উচ্চারণ এর মাধ্যমে কেবল তালাকদাতার তালাক প্রদানের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়। মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭(১) ধারামতে তালাক কার্যকর করবার জন্য তালাকদাতার নিম্নলিখিত কার্যাবলি সম্পাদন করতে হবে।
- মুসলিম আইন অনুসারে তালাক উচ্চারণ
- স্থানীয় চেয়ারম্যান কে তালাক সম্পর্কে নোটিশ প্রদান
- নোটিশের কপি স্ত্রীকে প্রদান
তালাক প্রদানের নোটিশ:
মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ অনুসারে স্ত্রী তালাক প্রদান করতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। শহরের ক্ষেত্রে তালাকের নোটিশ শহরের মেয়র বরাবর পাঠাতে হবে।
স্ত্রীর ঠিকানা না জানা থাকলে তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন এর কাছে এবং যে ক্ষেত্রে এরূপ নিকটাত্মীয় নাই সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করতে হবে।
মনে রাখা জরুরী যে স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ প্রদান না করলে মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ এর ৭(২) ধারা অনুসারে দন্ডনীয় অপরাধ এবং তালাকদাতার এই কারণে ১০,০০০ টাকা জরিমানা ও ১ বছরের জেল হতে পারে।
এবং তার এই তালাক প্রদানও কার্যকর হবে না। তালাক প্রদানের নোটিশ তালাকদাতা রেজিস্টার/কাজী, নোটারি পাবলিক, ও আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠাতে পারেন।
চেয়ারম্যান কতৃক মীমাংসার চেষ্টা:
চেয়ারম্যান অবগত হবার পর ৩০ দিনের মধ্যে একটি সালিশ পরিষদ গঠন করবেন এবং দুই পক্ষের একজন করে মোট তিনজন নিয়ে সালিশ বোর্ড গঠন করবেন এবং মিমাংসার চেষ্টা করবেন।
যদি মীমাংসার চেষ্টা ব্যর্থ হয় তাহলে চেয়ারম্যানের একমাত্র কাজ হল মীমাংসার চেষ্টা ব্যর্থ এই কথা লিখে রাখা। মনে রাখা ভালো যে স্বামী স্ত্রী উভয় পক্ষের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করার চেষ্টা করা ছাড়া তালাক কার্যকর অথবা অকার্যকর কোনটাই করার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের নাই।
ইদ্দতকালীন সময়:
তালাক প্রদানের পর তালাকদাতা বা তালাকপ্রাপ্তা দুজনের কেউ যদি চেয়ারম্যানের নিকট না যায় সে ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হবে যে তাদের আর একসাথে থাকার কোনভাবেই সম্ভব না এবং তাহারা দুজনই ডিভোর্সের পক্ষে।
তখন ৯০ দিন পর ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যাবে। তালাক প্রদানের ৯০ দিনের মধ্যে তালাকদাতা ইচ্ছা করলে তালাক বা ডিভোর্স প্রত্যাহার করতে পারে। আর এই ৯০ দিন হচ্ছে ইদ্দতকালীন সময়।
আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন থাকে যে রাগের মাথায় তালাক বললে তালাক হয়ে যাবে কিনা?
আসলে বর্তমান প্রচলিত আইনে রাগের মাথায় তালাক বললে বা মুখে তালাক বললে কোনটাই কার্যকর হবে না।
তালাক-ই-তৌফিজ কি?
স্বামী তালাক দিতে পারেন কিন্তু স্ত্রী কয়েকটি নির্ধারিত কারণে স্বামীকে তালাক দিতে পারে। তাছাড়া স্বামী যদি তার বিবাহের কাবিননামায় স্ত্রীকে তালাক প্রদানের অধিকার দিয়ে থাকে তাহলে স্ত্রী কোন কারণ ছাড়া স্বামীকে তালাক দিতে পারে-এই পদ্ধতিকে তালাক-ই-তৌফিজ বলে।
১৯৬১ সালের পূর্বে বাংলাদেশে নিয়ম ছিল যে, তালাকের পর স্বামী ও স্ত্রী পুনর্বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তবে তা শর্তসাপেক্ষ। শর্তটি এই যে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কারো সঙ্গে শরিয়া অনুসরণপূর্বক যথাযথভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে এবং নতুন স্বামী তালাক প্রদানের পর আগের স্বামীর সঙ্গে পুনর্বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ দ্বারা উক্ত শর্তটি রহিত করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তালাকের পর স্বামী ও স্ত্রী যদি পুনরায় একত্রে থাকতে চায় তবে তাদের নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কারো সঙ্গে শরিয়া অনুসরণপূর্বক যথাযথভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে না।