ফ্ল্যাট কেনার পূর্বে যে আইনি বিষয়গুলো সবার জানা দরকার।

এক খন্ড জমি এবং তার উপর একটি বাড়ি করার স্বপ্ন কে না দেখে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের শহর গুলোতে যে পরিমাণে জমির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে জমি কিনে বাড়ি করা অনেকের জন্যই খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। একারণে শহর গুলোতে অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যেমন অনেক ভালো ডেভেলপার কোম্পানি গড়ে উঠেছে তেমনি কিছু অসাধু ডেভলপার কোম্পানিও রয়েছে। যারা মানুষের সরলতা, অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে। তাই ফ্লাট কেনার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে নিচের বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

এই বিষয়টি আপনি দুইটি ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন।

  1. একটি হল ডেভলপার কোম্পানী এবং তার প্রজেক্ট এর ব্যাপারে ভালো করে জানা
  2. অপরটি হল ফ্ল্যাট বাড়িটি যে জমির উপর অবস্থিত সেই জমি সম্পর্কে ভালো করে যাচাই করা

ডেভলপার কোম্পানী সম্পর্কে যাচাই করা:

  • যে প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি ফ্ল্যাট কিনছেন সেটি কেমন, আইনানুগ নিবন্ধিত কি না, তাদের অতীত রেকর্ড কেমন, কতগুলি ফ্ল্যাট বানিয়েছে, কতগুলি হস্তান্তর করেছে, কারো সাথে প্রতারণা করেছে কি না, ভালো করে যাচাই করা। কারণ ডেভলপার প্রতিষ্ঠান খারাপ হলে আপনার পরবর্তীতে ঝামেলা আর অন্ত থাকবে না।
  • ডেভলপার প্রতিষ্ঠানটি রিহ্যাবের সদস্য কিনা এটি যাচাই করে নিবেন। কারণ পরবর্তীতে ডেভলপার প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাট হস্তান্তরে কোনো রকম সমস্যা করলে এবং ডেভলপার প্রতিষ্ঠানটি রিহ্যাবের সদস্য থাকলে আপনি রিহ্যাব থেকে সাহায্য পেতে পারেন।
  • নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি যে শহরে ফ্লাট ভবনটি নির্মাণ করছে সেই শহর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফ্লাট ভবনটি নির্মাণ এর জন্য যথাযথ অনুমোদন দিয়েছে কিনা। এবং ভবনটি কত তলা এবং কতগুলো ফ্ল্যাট তৈরি করার অনুমোদন নিয়েছে তা যাচাই করবেন। এছাড়া ভবন তৈরিতে কোন মানের রড,সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কোন মানের ফিটিং ব্যবহার করা হচ্ছে তা যাচাই করুন।
  • আপনি যখন ফ্লাট ক্রয় করবেন তখন ফ্ল্যাট ক্রয়ের চুক্তিপত্রে সকল বিষয় স্পষ্ট করুন যে আপনি কত বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনছেন। এবং ফ্ল্যাট বাড়িতে গাড়ি রাখার জন্য গ্যারেজ ফ্যাসিলিটি কিভাবে পাবেন। সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য কমন স্পেস আপনি কিভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লিফট, জেনারেটর, সুয়ারেজ এ সকল সুবিধা আপনি কিভাবে পাবেন এবং মাসিক কোন মেইনটেনেন্স চার্জ দেওয়া লাগবে কি না।
  • সব সময় চেষ্টা করবেন ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ টাকা বা শেষ কিস্তির টাকা আপনি যে দিন পরিশোধ করছেন সেই দিনই ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর ও রেজিস্ট্রেশন এর দিন নির্ধারণ করতে।
  • নির্মাতা কোম্পানি ফ্ল্যাট নির্মাণে দেরি করলে আপনি কি পদক্ষেপ নিতে পারবেন তা আগে থেকে ঠিক করুন। এবং আপনি কিস্তিতে ফ্লাট ক্রয় করলে কিস্তির টাকা দিতে দেরি হলে বা কয়েকটি কিস্তি দেওয়ার পর আপনি আর টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ফ্লাট কোম্পানি আপনার বিরুদ্ধে কি করতে পারবে সেটা আগে থেকে জেনে নিন।
  • এছাড়া ভালোভাবে যাচাই করুন, যে ফ্ল্যাটটি আপনাকে দেখানো হয়েছে বিক্রয় করার জন্য, সেটি অন্য কারো কাছে বিক্রয় করা হয়ে গেছে কিনা।

ফ্লাট ভবনটির জমি সম্পর্কে যাচাই করা:

  • ডেভলপার কোম্পানী সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করবার পর এবার আপনাকে ফ্লাট ভবনটি যে জমির উপর অবস্থিত সেই জমির কাগজপত্র ভালো করে যাচাই করতে হবে। প্রথমে দেখবেন জমির মালিক যদি ডেভলপার কোম্পানী নিজেই হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে ডেভলপার কোম্পানী মালিকানা পেল। ঔ জমির সি এস, এস এ ও বর্তমান বি আর এস খতিয়ান যাচাই করবেন। জমির মালিকানার কাগজ পত্রের মধ্যে যদি কোন মিউটেশনের কপি পেয়ে থাকেন তাহলে সেটি সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) অফিসে যাচাই করবেন। এবং যদি কোন খাজনা দাখিলা থাকে তাহলে তহশিল অফিসে খাজনা ও বর্তমান মালিকের বিষয়ে যাচাই করবেন।
  • ডেভলপার প্রতিষ্ঠান যদি জমির মালিক না হয়ে থাকে তাহলে জমির মালিকের সাথে ডেভলপার কোম্পানীর কিভাবে ফ্লাট ভাগাভাগি হয়েছে এবং কি চুক্তি বা আমমোক্তার হয়েছে সেটি যাচাই করবেন।
  • এরপর জমি নিয়ে কোন প্রকার মামলা-মোকদ্দমা আছে কি না, জমি সরকারি খাস জমি কি না, জমি অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় আছে কিনা, জমি ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ আছে কিনা, এই সকল বিষয় ভালোভাবে যাচাই করবেন। কারণ অনেক সময় দেখা যায় ঝামেলাপূর্ণ জমি ডেভলপার কোম্পানীকে ফ্ল্যাট তৈরি করার জন্য দেওয়া হয় এমন ফ্ল্যাট ক্রয় করলে পরবর্তীতে এই ঝামেলা আপনাকেও সমস্যায় ফেলতে পারে।