চেক ডিসঅনার হলে কি করবেন?

বর্তমান এই আধুনিক বিশ্বে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। মানুষ এখন ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কিং ব্যাবস্থার সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।

বর্তমান সময়ে ব্যবসা করতে গেলে ব্যাংকের সাহায্য ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করা অকল্পনীয়। বড় পুঁজির ব্যবসা করতে গেলে প্রচুর অর্থ লেনদেন করতে হয়, সেক্ষেত্রে চেকের ব্যবহার অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশে অতীতে চেকের ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত। বর্তমান সময়ে ব্যাঙ্কিং ব্যাবস্থার উন্নতির সাথে সাথে চেকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন বেড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপ্লবের এই যুগে লক্ষ-কোটি লেনদেনের ক্ষেত্রে চেক ডিসঅনার হওয়াটা তাই একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুর্ভাগ্যবশত: বর্তমান বাংলাদেশের আদালতগুলিতে চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত মামলা যেভাবে বেড়েছে তাতে বোঝা যাই যে,সমস্যাটা কতটা মহামারী আকার ধারণ করেছে।

এই সংক্রান্ত আমাদের দেশের আইনটি হলো The Negotiable Instrument Act,১৮৮১। এই আইনের ধারা- ১৩৮ এর অধীনে কোর্ট চেক dishonour সংক্রান্ত মামলার বিচার করে থাকেন। এই এক্ট-এ তিন প্রকার নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট-এর কথা বলা হয়েছে।

  • বিল অফ এক্সচেঞ্জ।
  • প্রমিসরি নোটস।
  • চেকস।

উপরের তিন প্রকার নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট-এর  মধ্যে আমরা শুধুমাত্র চেক সম্পর্কে আলোচনা করবো।

চেক ডিসঅনার বা বাউন্স অফ চেক বলতে কি বুঝায়?

সহজকথায়- ব্যাংক কোনো কারণে চেকটাকে অনার না করে ফেরত(return) দিয়ে দিলে,তাকে ডিসঅনার অফ চেক বলে। ব্যাংক অনেক কারণে চেক ডিসঅনার করে থাকে। তবে ব্যাংক প্রধানতঃ দুটি কারণে রিটার্ন মেমো ধরিয়ে দিয়ে চেক ডিসঅনার করে থাকেন।

  1. ফান্ডের অপর্যাপ্ততা।
  2. স্বাক্ষর ভিন্ন হলে।

চেক ডিসঅনার হলে আইনগতভাবে কি করণীয় আছে?

প্রথমে একটি উদাহরণ দেয়া যাক তাহলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।

ধরি, মিস্টার x এবং মিস্টার y একে অপরের সাথে ব্যাবসায়িক লেনদেনে জড়িত। মিস্টার x, মিস্টার y-এর কাছে ৫-লক্ষ টাকা পাবে। মিস্টার y, ৫-লক্ষ টাকার একটি চেক ইস্যুকৃত তারিখসহ সই করে দিলেন মিস্টার x-কে।

মিস্টার y -এর স্বাক্ষরকৃত চেকটি মিস্টার x (payee বা হোল্ডার অফ চেক ) যথাসময়ে অর্থাৎ ড্রয়ার অফ চেক (মিস্টার y)-এর ইস্যুকৃত তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে চেকটি ব্যাংকে পেশ করলেন। ব্যাংক অর্থাৎ drawee চেকটি অপর্যাপ্ত ফান্ডের কারণে চেক রিটার্ন রশিদ ধরিয়ে দিলেন।

৩০-দিনের মধ্যে ড্রয়ার অফ চেককে (মিস্টার y-কে) নোটিশ দিতে হবে। এই নোটিশে তাকে ৩০-দিন সময় দিতে হবে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। ৩০- দিনের মধ্যে টাকা দিতে ব্যার্থ হলে মামলার cause of action-arise হবে। অর্থাৎ মামলা দায়ের করার অধিকার জন্মাবে x-এর, y-এর বিরুদ্ধে।

এখন কমপ্লাইন্যান্ট-x কে মামলার কারণ উদ্ভবের ৩০-দিনের মধ্যে Chief Judicial Magistrate বা First Class Magistrate বা মহানগরী হলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর accused, y-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে।

চেক ডিসঅনার মামলার সাজা

এই আইনের আওতায় দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্ছ এক বৎসর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিনগুন জরিমানা অথবা উভয়দন্ডে দণ্ডিত হইবেন।

এই আইনি পরামর্শটি দিয়েছেন:
অ্যাডভোকেট, সিদ্ধার্থ শংকর পাল।
জজ কোর্ট, খুলনা।