ডেঙ্গু জ্বর- পৃথিবীর ১০০ টির বেশি দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
ডেঙ্গু জ্বর কি? একটি পর্যালোচনা
ডেঙ্গু জ্বর (DENG-GE / EE) একটি মশা-বহনযোগ্য ভাইরাল রোগ যা বেশিরভাগই বর্ষা মৌসুমে দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বর একটি বেদনাদায়ক রোগ যা মশা দ্বারা বিস্তৃত হয় – বেশিরভাগই “এডিস আজিটি” যা পৃথিবীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ঘটে। চার ধরণের ডেঙ্গু ভাইরাস রয়েছে। ডেঙ্গু ভাইরাস প্রধানত এডিস আজিপি প্রজাতির মশা দ্বারা প্রেরিত হয়।
ডেঙ্গু জ্বর ২০০০ সালে প্রথম বাংলাদেশে দেখা দেয় এবং পরিস্থিতি বেশ বিপদজনক ছিল। ডেঙ্গু জ্বর সারা বিশ্বে বিস্তৃত – বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং অপরিকল্পিত দ্রুত নগরায়ণ দ্বারা ডেঙ্গু ভাইরাস প্রভাবিত হয়।
ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অনেক জ্বর হয়, ফুসকুড়ি, মাংস পেশীতে ব্যাথা হয় এবং হাড়ের সংযোগ স্থলে ব্যাথা হয়। অতিমাত্রার ডেঙ্গু জ্বর, “ডেঙ্গু হেমোরেজিক” জ্বর নামে পরিচিত। অতিমাত্রার ডেঙ্গু জ্বর হলে বমির সাথে রক্ত আসে, শরীরের রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং মৃত্যুও হতে পারে। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। গবেষকরা ডেঙ্গু জ্বরের টিকা নিয়ে কাজ করছেন। যেসব এলাকায় ডেঙ্গু জ্বর আছে সেখানে মশার আবাসস্থল হ্রাস করাই সবচেয়ে ভাল প্রতিরোধক।
বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি
সাম্প্রতিক কয়েক দশকে ডেঙ্গুর ঘটনা বিশ্বজুড়ে নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। “ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন” অনুসারে, ১২৮ টি দেশে ৩.৯ বিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এই রোগটি এখন বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশে আঞ্চলিক। সর্বাধিক ক্ষেত্রে পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ঘটে:
- ভারতীয় উপমহাদেশ
- দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া
- দক্ষিণ চীন
- তাইওয়ান
- প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ
- ক্যারিবিয়ান (কিউবা এবং Cayman দ্বীপ ছাড়া)
- মক্সিকো
- আফ্রিকা
- মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা (চিল, প্যারাগাই এবং আর্জেন্টিনা বাদে)
ডেঙ্গু জ্বর কিভাবে ছড়ায়:
ডেঙ্গু জ্বর একটি ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রামিত এডিস মশার কামড় দ্বারা প্রেরিত হয়। মশার কামড়ে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রামিত হয়। এটি সরাসরি একজন ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে পড়ে না। ঘন জনবসতি পূর্ন এলাকায় জন্ম নেয় এবং বংশবিস্তার করে। কিন্তু ঝোপঝাড় ও গ্রামে দেখা যায় না। এডিস মশা দিনের মধ্যে প্রধানত সকালে এবং সন্ধ্যায় কামড়ায়। রক্ত খাওয়ার পর, মহিলা এডিস মশাগুলি পানির কৃত্রিম পাত্রে ডিম পাড়ে।
ডেঙ্গু মশা তাদের মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে কামড়ানোর ফলে মশার মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাস সক্রমণ ঘটে। এই আক্রান্ত মশাটি ডেঙ্গু ভাইরাস অন্য ব্যাক্তির মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রামিত মশাটি কোনো সুস্থ্য ব্যক্তিকে কামড়ানোর পর ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সুস্থ্য ব্যক্তি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।
লক্ষণ ও উপসর্গ:
ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত হলে অতিমাত্রায় জ্বর হয় (104 F ডিগ্রি) এবং নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দেয়:
- মাথা ব্যাথা
- মাংস পেশীতে এবং হাড়ের সংযোগ স্থলে ব্যাথা
- বমি বমি ভাব
- চোখে ব্যাথা হওয়া
- গলায় ব্যাথা
- ফুসকুড়ি
গুরুতর ডেঙ্গু বা হেমোরেজিক জ্বরে নিন্মলিখিত উপসর্গ দেখাদিলে জীবন নাশের হুমকি থাকে –
- গুরুতর পেট ব্যথা
- বমি করা
- মাড়ি এবং নাক থেকে রক্তপাত
- মূত্র, মলের সাথে রক্ত পড়া
- শ্বাসকষ্ট
প্রতিরোধ:
মশা থেকে প্রতিরক্ষামূলক ব্যাবস্থা নিন:
ঘরের ভিতর থাকলে মশা থেকে প্রতিরক্ষামূলক ব্যাবস্থা হিসাবে লং শার্ট ও প্যান্ট পরিধান করুন। প্রয়োজনে মোজা ব্যবহার করুন। এয়ার কন্ডিশন ঘর বা ঘরে প্রয়োজনে মশারী ব্যবহার করুন।
মশার আবাস্থল হ্রাস করুন:
ঘরের আশেপাশে মশা থাকতে পারে বা প্রজনন হতে পারে এমন জায়গাগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখুন। বৃষ্টির পানি জমে থাকতে পারে এমন জিনিস পত্র, বিশেষ করে পুরোনো টায়ার, বালতি, ফুলের টব, ডাবের খানা পরিষ্কার করে ফেলুন। পাখি, পোষা প্রাণী এবং গবাদি পশুর ব্যবহৃত পাত্রের পানি নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
চিকিত্সা:
- ডেঙ্গু জ্বর হলে অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
- বিশ্রাম করুন এবং তরল খাবার খান।