জীবনে শত ব্যাস্ততার মাঝে একটু শান্তি পেতে কি করবেন?

প্রচুর ধন-সম্পত্তির মধ্যে সুখ নেই, মনের সুখই প্রকৃত সুখ। এটা আমরা অনেকেই জানি।

সংসারিক কাজের চাপ, টাকা পয়সা রোজগারের চাপ, ঝগড়া, টেনশন, মারামারি কতকিছুইর না সম্মুখীন হয়ে দিন চলতে হয়।

শান্তি নাই। ঘুম নাই। দামি চাকচিক্যময় বাড়ি, ফ্লাট কোনো কাজে আসছে না।

বাধ্যবাধকতা এবং দায়িত্ব প্রতি সেকেন্ডে পূরণ করতে যেয়ে আপনার নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এবং প্রতিদিনের চাহিদা বাড়তে বাড়তে আরও জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে, যা পূরণ করতে আপনি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন।

আপনাকে ভেতর থেকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। আপনি বুঝতে পারছেন না। আপনি মরতে বসেছেন। আপনি যদি কিছু করতে পারেন তবে সেটা কি হবে?

আপনি যদি সমস্ত বিশৃঙ্খলা থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারেন এবং শান্তি পেতে চান তাহলে আপনাকে এমন একটি খোলামেলা প্রকৃতি খুঁজে নিতে হবে যেখানে আপনি নিজের মন, শরীর এবং আত্মাকে বিশ্রাম দিতে পারেন।

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি কিছুটা হলেও আমাদেরকে শান্তি দিবে :

বুক ভরে নিশ্বাস নিন:

মাত্র দুই-চার মিনিটের নিঃশ্বাসের ব্যায়াম। নিঃশ্বাস নিয়ে পেট ভরুন। যতক্ষণ পারেন রেখে দিন। তারপর নিশ্বাস ছাড়ুন। এভাবে কয়েকবার করুন।

এটি মনকে শান্ত করতে এবং জিনিসগুলিকে পুনরায় দৃষ্টিভঙ্গিতে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সবুজ গাছপালা(প্রকৃতি), নদী, মাঠ বা পুকুরের ধরে গিয়ে শান্ত হয়ে বসুন। নিশ্বাস নিতে নিতে চোখ বন্ধ করুন।

প্রকৃতির সাথে মিশুন:

আপনাকে প্রকৃতির সাথে পুনরায় সংযোগ করতে বিদেশে যেতে বা দূরের দেশ ভ্রমণ করতে হবে না। এটি আপনার বাগানে খালি পায়ে হাঁটার মতো সহজ।

দর্শনীয় স্থান এবং মনোরম জায়গাগুলি উপভোগ করুন এবং ধীরে ধীরে আপনাকে প্রশস্ত করে তুলুন এবং শান্তি বোধ করুন।

পাখির কলকাকলি উপভোগ করুন। সমুদ্র, পাহাড়, ঝর্ণা, সবুজ বন যেখানে যান্ত্রিকতার প্রভাব কম।

ট্রাফিক জ্যাম নেই, মানুষের বিরক্তিকর কোলাহল নেই। ভ্রমণ করুন। মন প্রাণ উজাড় করে ঘুরে বেড়ান।

রিলাক্স করার উপায় বের করুন:

এমন অনেক কৌশল রয়েছে যা আপনাকে শান্তি খুঁজে পেতে সহায়তা করতে পারে – যোগব্যায়াম, দীর্ঘ পদচারণা, শান্ত গান বা ধ্যান।

মধুর সুরে বাদ্যযন্ত্র বাঁজছে, সেই সাথে মধুর সুরে গান। আপনার দেহ মনে অনেকটাই শান্তি দেবে। আপনার মনটা ফুরফুরে, তরতাজা হয়ে যাবে।

অল্প সময়ের জন্য সবকিছু থেকে দূরে থাকুন:

২ দিন বা একদিনের জন্য সবকিছুর সাথে যোগাযোগ বন্ধ। এর অর্থ আপনার ফোন, আইপ্যাড, ট্যাবলেট এবং ল্যাপটপ এবং সমস্ত ইন্টারনেট সংযোগ একদিনের জন্য বন্ধ করে দিন।

প্রকৃতির নিরাবতা, প্রকৃতির বিশালতার মধ্যে একটি দিনের জন্য হলেও হারিয়ে যান।

চাহিদা কম রাখুন:

‘না’ বলতে শিখুন। চাহিদা কম রাখুন। আপনার কাঁধে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাপ নেওয়া মানে অতিরিক্ত চাপ সামলানো।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে যেয়ে হিমশিম খেয়ে নিজেকে কষ্ট না দিয়ে চাহিদা কম রাখুন।

সবকিছুতে জড়ানোর দরকার নেই

জাগতিক মোহ কমিয়ে দিন। সবকিছুতে জড়ানোর দরকার নেই। তাতে ঝামেলা বাড়তেই থাকে। যত লোভ ততো খারাপ কাজ।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন যদি আপনি তা আনন্দের সাথে সামলাতে পারেন।

কারণ আপনি যত বেশি প্রয়োজনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন আপনার উপর ততো বেশি দায়িত্ব অর্পিত হবে।

ততবেশি ঝামেলায় জড়াবেন, টেনশন বাড়বে, জবাবদিহি করতে হবে, সমালোচনাও বেশি হবে। সবাই আপনার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হবে।

শত্রু হবে বেশি, বন্ধু শুভাকাঙ্খী কমে যাবে। সবসময় আপনার দোষ-ত্রুটি খুঁজে খুঁজে দেখা হবে।

আমরা এই জড় জগতের কবলে পড়ে মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি।

জড় জগতের বস্তুগত খেলায় মত্ত হয়ে লোভ, ক্রোধ, কপটতা, কৃপণতার বশবর্তী হয়ে যেটাই করছি না কেন, ফলাফল হিসাবে পদে পদে বিপদে পড়ে, ভয়ার্ত হয়ে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছি।

এই দুঃখ ও সংকটাপন্ন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।