চচ্চড়ি, ছেঁচকি এবং ঘন্ট বলতে কি বোঝায়? কিভাবে রান্না করতে হয়?

তিনটি( চচ্চড়ি, ছেঁচকি এবং ঘন্ট) অতি প্রাচীন বাঙ্গালী রান্না পদ্ধতি। বাঙালির রান্না পদ্ধতির তিনটি অন্যতম প্রকারভেদ। আদি অর্থে তিনটিকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাই সেটা আমরা দেখবো।

চচ্চড়ি বাঙালির দৈনন্দিন রান্না করা ব্যাঞ্জন বা তরকারি। প্রাচীন ব্যাঞ্জনগুলোর একটি যেটি সাধারণতঃ ডাটা, কুমড়ো, আলু, বড়ি ইত্যাদি তরকারির পাঁচমিশালি রান্না।

ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলসহ আরো অনেক প্রাচীন গ্রন্থে চচ্চড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে। বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়ের পাকপ্রণালী বইয়ে দশ রকমের চচ্চড়ির কথা বলা হয়েছে।

ফুলকপির চচ্চড়ি, ডাটা চচ্চড়ি, বাটি চচ্চড়ি, শাকের গোড়া চচ্চড়ি, থোড়-বড়ি চচ্চড়ি, উচ্ছে-পটল চচ্চড়ি, কাঁচা আমের চচ্চড়ি, পোস্ত বাটার চচ্চড়ি, সজিনা ডাটার চচ্চড়ি এবং বাঁধাকপির চচ্চড়ি।

চচ্চড়িতে তরকারি একটু লম্বা করে কুটতে হয়। তেলে মেথি, কালোজিরে, শুকনো ঝাল ইত্যাদি সহযোগে তরকারি অল্প সাঁতলাতে হবে। সরষে বাটাও দেয়া হয়। চচ্চড়ি কোনোভাবেই ঝাল হবে না। চচ্চড়ি হবে মাখা মাখা।

ঘন্ট:

ঘন্ট খুব মজাদার একটি খাবার। কিন্তু বাঙালি দিন দিন ঘন্ট রান্না করতে ও খেতে ভূলে যেতে বসেছে। অনেক রকমের ঘন্ট আমরা খেয়ে থাকি যেমনঃ মোচা ঘন্ট, থোড় ঘন্ট, মূলো ঘন্ট, শাকের ঘন্ট ইত্যাদি।

সবজিগুলো কেটে নুন, মিষ্টি ইত্যাদি দিয়ে অল্প জলে সিদ্ধ করে নিতে পারেন বা নাও নিতে পারেন। যেমনঃ ধরুন লাউ ঘন্ট। ছোটো ছোটো কুচি করে লাউ কাটলেন। সরষে, জিরে, শুকনো ঝাল, তেজপাতা- ফোড়নে যাই দিন না কেন, সাথে একটু কুমড়ো বড়ি ও নারকেল কোরা হলে এক লাউ ঘন্ট দিয়ে আপনি সব ভাত খেয়ে নিতে পারবেন।

ঘন্টর আবার প্রকারভেদ আছে। যেমনঃ মুড়ি ঘন্ট ও চাপড় ঘন্ট। রুই বা কাতলা মাছের মাথা আর আতপ চাল দিয়ে রান্না হয় মুড়ি ঘন্ট। নানা রকমের তরকারি সহযোগে রান্না চাপড় ঘন্ট অনেকটা সুক্তোর মতো। মটর ডাল বেটে বড়া বানিয়ে চাপড় ঘন্টোয় দেওয়া হয় আর এটাই চাপড় ঘন্টর বৈশিষ্ট্য।

ছেঁচকি ও ছ্যাঁচড়া:

ছেঁচকি বাঙালির দৈনন্দিন ব্যাঞ্জন। অল্প তেলে পাঁচফোড়ন শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে তাতে পাতলা করে কাটা তরকারি খানিক্ষণ ভেজে জল দিয়ে সিদ্ধ হয়ে নরম হলেই সেটা ছেঁচকি।

পেঁপে, মূলো বা বেগুনের মতো তরকারির ছেঁচকি হতে পারে। আবার নানা রকমের তরকারি মিশিয়েও ছেঁচকি হয়।

ছেঁচকি একটু বেশি তেল দিয়ে রান্না করলে হয়ে যাই ছ্যাঁচড়া। বিয়ে, শ্রাদ্ধ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি বড়ো কাজের বাড়িতে বাড়ির লোকদের জন্য ছ্যাঁচড়া একটি আবশ্যক পদ। ছ্যাঁচড়ায় মাছের তেল, মুড়ো, ফুলকা, কাঁটা সবই দেওয়া যায়।

শ্রাদ্ধ বা বিয়ের অনুষ্ঠান। ৫০০ বা ১০০০ লোকের আয়োজন। অনেক মাছ কেনা হলো। বাঙালি অনুষ্ঠানে মাছ তো থাকবেই বা মাছের একটি পদ আবশ্যক। অনুষ্ঠানের আগের দিন বা পরের দিন মাছের তেল, মাথা, ফুলকা, ডিম ও কাটা দিয়ে সাথে পুঁইশাক, কুমড়ো, বেগুন দিয়ে রান্না করা মিশ্র এই পদটি খেতে এককথায় অমৃত।

একসময় গ্রামাঞ্চলে বিয়েবাড়িতে আমন্ত্রিতদের ছ্যাঁচড়া পরিবেশন করা হতো।