গিমা শাক দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, খাবারের রুচি বাড়ায় ও কৃমির সমস্যা কমায়।
গ্রাম বাংলার একটি অতি পরিচিত শাক গিমা। এটি ঢিমা শাক, গিমে শাক বা জিমা শাক নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Glinus oppositifolius, M. verticillata। এর ইংরেজি নাম- Gima, Jima, Bitter Cumin, Maita, Maitakaduri shak, Indian Chickweed, Kangkong, Green carpetweed ইত্যাদি।
গিমা শাক আগাছার মতো জন্মায়। যেখানে সেখানে কোন যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে। বর্ষার শেষে অর্থাৎ শীতের শুরুতে এই শাক জন্মায়। এই শাক লতার মতো চিকন চিকন ডাল, দেখতে ঝোপালো হয় ও মাটিতে চাপাভাবে লেগে থাকে।
এর ছোট ছোট সবুজ পাতা স্বাদের তিতা হয়। সাদা রঙের ফুলও ফোটে। গিমা শাকের পাতা ছিড়ে চালের গুড়ি, সামান্য হলুদ ও পরিমান মতো লবণ দিয়ে ভেজে খাওয়া যায়। এছাড়া আলু কুচি কুচি করে গিমা শাক দিয়ে ভেজে খাওয়া যায়।
এই শাক খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এর পাতার পাশাপাশি কাণ্ড, ফুল সবই ব্যবহার করা হয়। এই শাক অজীর্ন, জন্ডিস, জ্বর, পিত্ত, কফ সারাতে উপকারী। মুখের রুচি ফিরাতে ভালো কাজ করে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও এই শাকের কাণ্ড, পাতা, ফুল কাজে লাগে।
গিমা শাকে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই শাকে আছে, ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন “সি”, ক্যারোটিনয়েডস, ক্যালসিয়াম।
গিমা শাকের উপকারিতা
নিচে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে গিমা শাকের উপকারিতা দেওয়া হলো –
ওজন কমাতে:
যেকোন শাক সবজি ওজন কমাতে খুবই কার্যকরী। শাকে প্রচুর ফাইবার থাকে যা অল্প খেলেই পেট ভরে যায় এবং বেশ সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। গিমা শাকে প্রচুর ফাইবার রয়েছে তাই গিমা শাক ওজন কমাতে খুবই কার্যকরী।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো:
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তেত খুবই উপকারী। পাশাপাশি ডাক্তাররা প্রতিদিন ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি বেশি শাক সবজি খেতে পরামর্শ দেন। শাক সবজির তালিকায় গিমা শাক রাখতে পারেন। এই শাক নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
গ্যাস্ট্রিক কমায়:
গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস এই শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। খাবারে একটু অনিয়ম হলেই শুরু হয়ে যায় গ্যাস্ট্রিক আর তারপর শুরু হয় পেটে ব্যথা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে গিমা শাক। গিমা শাক খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাসের প্রকোপ কমে যায়।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে:
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠেছে। অল্পবয়সে চশমার উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। তাইতো আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠেছে। সেজন্য আমাদের খাদ্য তালিকায়ও নজর দিতে হবে। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে গিমা শাক দারুণ উপকারী। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন একটি শাক রাখতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়:
শাক-সবজি মানেই ফাইবার এটা আর আলাদা করে বলার দরকার হয় না। বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি রয়েছে যেগুলো নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভবনা কম যাবে। গিমা শাকের মূল সিদ্ধ করে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়।
ভিটামিন “সি” এর অভাব পূরণ হয়:
গিমা শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি” রয়েছে। তাই এই শাক খেলে ভিটামিন “সি” এর অভাব পূরণ হয়। ভিটামিন “সি” আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
খাবারের রুচি বাড়ায়:
নানা কারণে আমাদের খাবারে অরুচি হতে পারে। মুখে মোটেও রুচি নেই, কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। কী খেলে রুচি বাড়বে? গিমা শাক খেলে রুচি বৃদ্ধি পাবে। খেতে তেতো হলেও গিমা শাক খাবারের রুচি বাড়ায়। গিমা শাকের রস খেলে জন্ডিস দ্রুত ভালো হয়।
কৃমির সমস্যা কমায়:
কৃমির সমস্যা কমায়। রক্তে হিমোগ্লোবিন অর্থাৎ লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়।
গিমা শাক বেশি পরিমানে খেলে বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের সি শাক খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।