গর্ভবতী মায়েদের জন্য দইয়ের উপকারিতা। দই কি রাতে খাওয়া যাবে।
গর্ভবতী মাকে দই খেতে দিন। দই, অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যের তুলনায় বেশি ক্যালসিয়ামযুক্ত এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত দই খাওয়া গর্ভবতী মা ও বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। দই খেলে গর্ভাবস্থার অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
দইয়ের উপকারীতার কথা বলতে গেলে এরপর যেটি আসে তা হলো দইয়ে প্রোবায়োটিক ব্যাকটিরিয়া থাকে, যা হজম স্বাস্থ্যকে বাড়িয়ে তোলে।
দই নামটি শুনলেই যেনো মনটা ভালো হয়ে যাই, জিভে জল চলে আসে। কিন্তু সেটা হলো মিষ্টি দই এবং এটা খেতেই আমরা অভ্যস্ত। তবে দইয়ের উপকারিতা পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই টক দই খেতে হবে। স্কিমড মিল্ক বা মাখন তোলা দুধ থেকে তৈরি টক দই হলো সবচেয়ে উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত।
সাধারণ এবং সরল ভাষায়, দই হলো দুধের ব্যাকটেরিয়াল গাঁজনের ফল। আপনার যা দরকার তা হল পাস্তুরাইজড মিল্ক এবং ব্যাকটিরিয়া। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন দুধের ল্যাকটোজ সুগারকে ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে। এই ল্যাকটিক এসিডের কারণেই আমরা দইয়ের অসম্ভব সুন্দর টক স্বাদ উপভোগ করে থাকি।
কোনটা খাবেন-মিষ্টি দই না টক দই?
দই পাতার সময় দুধের সাথে চিনি মেশালে হয় মিষ্টি দই। কিন্তু চিনি থাকলেই অ্যাসিড হওয়া থেকে শুরু করে শরীরে নানা দুর্বিপাকের সম্ভাবনা। মিষ্টি দই একেবারেই চলবে না। সবসময় টক দই খেতে হবে। কারণ মিষ্টি দই মানে হলো অতিরিক্ত চিনি। সুগার মানেই অতিরিক্ত ক্যালোরি। সেখান থেকে ওজন বৃদ্ধি।
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের দই খাওয়ার উপকারীতা:
টক দই একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার, কারণ এতে আছে দরকারী ভিটামিন, মিনারেল, আমিষ ইত্যাদি। এটি দুগ্ধজাত খাবার ও দুধের সমান পুষ্টিকর খাবার। এমনকি এটি দুধের চাইতেও বেশি পুষ্টিকর খাবার হিসাবে গণ্য করা হয়। কারণ দুধের চাইতে বেশি vitamin, যেমন: vitamin B complex, calcium, ফসফরাস, জিংক টক দইতে পাওয়া যায়।
গর্ভবতীর হজমশক্তি বাড়ায়:
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের হজমশক্তি ঠিক রাখাটাও অতীব জরুরী। দই একটি প্রোবায়োটিক খাবার অর্থাৎ উপকারী ব্যাকটেরিয়াযুক্ত খাবার। টক দই অন্ত্র বান্ধব ব্যাকটেরিয়াতে পরিপূর্ণ থাকে। এটি হজমশক্তি বাড়ায়। এই কারণে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদেরা সবসময়ই টক দই খেতে পরামর্শ দেন।
টক দই একটি lactic fermented খাবার। নিয়মিত টক দই খেলে পাকস্থলীর সংক্রমণ কমে। সেই সঙ্গে হজমশক্তি বাড়ে। এতে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকার কারণে এটি গর্ভবতীর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
শরীর ঠান্ডা রাখে:
টক দই এমন একটি খাবার যা শরীর যেমন ঠান্ডা রাখে, তেমনি কাজ করার শক্তিও দেয়। টক দই খুব ঠান্ডা একটি খাবার। এমনকি যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু রয়েছে এবং দুধ খুব ভালভাবে সহ্য করতে পারে না তারা সহজেই দই হজম করতে পারে। এটি সহজে হজম হওয়ায় এটি অন্য রূপে দুধের সমস্ত পুষ্টিকর সুবিধা পেতে আপনাকে সহায়তা করে।
এছাড়া গরমে আমরা পেট ঠান্ডা রাখতে টক দইয়ের সাথে শসা মিশিয়ে রায়তা বানিয়ে মাছ মাংসের সাথে খেয়ে থাকি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
টক দইয়ে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়া বা প্রবায়োটিক শরীরের জন্য খুব উপকারী। প্রতিদিন টক দই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ফলে যে কোনো সংক্রামক রোগের আশঙ্কা কিছুটা কমে। গরমের সময়ে সংক্রমণের হার বাড়ে তাই এ মৌসুমে টক দই খাওয়া বেশি জরুরি।
দই বিষন্নতাকে দূর ও চাপ মুক্ত করে:
গর্ভাবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠাটা স্বাভাবিক এবং এক্ষেত্রে এমন অনেক গর্ভবতী মহিলাদের দেখা যায় যারা মানসিক চাপে ভুগে থাকেন।
দইয়ের উপকারী ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ অন্ত্রবান্ধব ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদান আমাদের মস্তিকের চাপ কে নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণা অনুসারে, দই মস্তিষ্কে শিথিলতা এবং সংবেদনশীল ভারসাম্য সরবরাহ করে। নিয়মিত টক দই খেলে মানসিক অশান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
হাড় ও দাঁতের নির্মাণকর্তা ও রক্ষাকর্তা:
আমরা সবাই জানি, দুধ বা দই হলো ক্যালসিয়ামের খনি বা ভান্ডার। ক্যালসিয়াম এমন একটি খনিজ যা গর্ভবতী ও গর্ভের ভ্রুণ বা বাচ্চার শক্তিশালী হাড় ও দাঁত বজায় রাখতে এবং অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করতে শরীরকে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। প্রায় সমস্ত ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতে জমা থাকে, যেখানে এটি তাদের গঠন এবং মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
আমাদের শরীরে বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরী। এছাড়াও, ক্যালসিয়াম রক্তনালীগুলির সারা শরীর জুড়ে রক্ত সঞ্চারে এবং মানব দেহের প্রায় প্রতিটি কার্যকে প্রভাবিত করে এমন হরমোন এবং এনজাইমগুলি মুক্ত করতে সহায়তা করতে ব্যবহৃত হয়।
ত্বককে ও চুলকে স্বাস্থ্যকর ও চকচকে করে তোলে :
দই জনপ্রিয়ভাবে ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়। এটিতে থাকা খনিজগুলি ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। ভিটামিন “ই”, জিঙ্ক এবং দইয়ের উপাদানগুলি ত্বকের উপকার করে। মুখে দই প্রয়োগ করা ত্বককে মসৃণ করতে এবং আভা, চকচকে ও কোমলতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
দই রাতে না খাওয়াই ভালো। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর দই খাওয়া আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই ভালো। বিকালে বা সন্ধ্যায়ও খেতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে দরকারের থেকে বেশি দই যেনো না খেয়ে ফেলি আমরা।
দই কখনো বেশি বাসি করে বা তিন-চারদিন পরে খাবেন না, এতে বিপদ হতে পারে। Bacterial food poison, Bacterial dysentery বা Fungal food poison-এর সম্ভাবনা রয়েছে। – ঘরেপাতা দই-ই সবচেয়ে ভালো।
দিনে ৩০০-৫০০ গ্রাম দই খাওয়া ভালো কিন্তু তার থেকে বেশি না খাওয়াই গ্রহণযোগ্য। বেশি দই খেলে আমাদের শরীরে অত্যাধিক ক্যালসিয়াম সৃষ্টি হতে পারে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জটিলতা বাড়াতে পারে। মিষ্টি দইয়ের থেকে টক দই খাওয়া বেশি উপকারী।
টক দইয়ের সাথে কিছু ছোট করে কাটা পুদিনার পাতা, ছোট করে কাটা ফল এবং সবজি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে খেতে পারেন। এইটা দুপুরের খাবার পর খেলে শরীর ভালো থাকবে আর তার সাথে একটা সুস্বাদু খাবার খাওয়ারও সুযোগ পেয়ে যাবেন।
সতর্কতাঃ
পাস্তুরাইজড দুধ থেকে প্রস্তুত দই আপনার খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত করা উপকারী যেহেতু এটি প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে।
কম ফ্যাটের দই সেবন করা সর্বোত্তম কারণ এটি অহেতুক ওজন বৃদ্ধি হ্রাস করে।অতিরিক্ত মিষ্টিযুক্ত দই গ্রহণ করা এড়িয়ে চলাই হল বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনার গর্ভদশায় দুই ধরণের দই খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। প্রথমত যেটি পাস্তুরাইজড নয় এমন কাঁচা দুধ থেকে প্রস্তুত দই। যেহেতু এই ধরণের দই থেকে লিস্টেরিয়া জাতীয় অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।অবশ্যই এটাকে বর্জন করা উচিত।আর দ্বিতীয়টি হল অতি ফ্যাটযুক্ত দই যা আপনার অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি করবে
পুষ্টির দিকে দৃষ্টি রাখতে হলে টক দই নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কারণ টক দইয়ের উপকারীতা এত রকমের যে, নিয়মিত টক দই একটু না খেলে প্রকৃতপক্ষে একটি সুলভ অথচ পুষ্টি মূল্যবান খাদ্য থেকে নিজেদের বঞ্চিত করা হবে।