কোনো স্থান কেটে গেলে প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে রক্ত পড়া বন্ধ করবেন?
ছোট বেলায় খেলতে খেলতে পড়ে গিয়ে হাত-পা কেটে গেলে বা ছিলে গেলে সাথে সাথে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকরণ কাঁটা স্থানে লাগিয়ে নেওয়া। এসব প্রাকৃতিক উপকরণেই ক্ষত স্থান অনেক ক্ষেত্রে ভালো হয়ে যেত। এটা আমরা অনেকেই করতাম বা এখনও কেউ কেউ হয়তো করি। কিন্তু এখন আমরা এসব প্রাকৃতিক উপকরণের থেকে বেশী ঔষধ নির্ভর হয়ে পড়ছি।
ছোটখাট হাত পা কাঁটা এটা অনেকের সাথে ঘটে। কেটে যাওয়ার পর মূল করণীয় হলো রক্তপাত বন্ধ করা এবং সংক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। সব সময় আমাদের কাছে সব ধরণের ঔষধ বা মলম থাকেনা। তাই আমাদের জেনে রাখা উচিৎ কোনো স্থান কেটে গেলে প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে রক্ত পড়া বন্ধ করা যায়। নিচে এরকম কয়েকটি প্রাকৃতিক উপকরণ দেওয়া হলো-
গাঁদা ফুলের পাতা:
রক্ত পড়া বন্ধ করতে এটা সবথেকে কার্যকরী। গাঁদা ফুল গাছের ভেষজ গুণাবলি রয়েছে। কাঁটা স্থানে গাঁদা ফুলের পাতা পিষে রস লাগালে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত পরা বন্ধ হয়। গ্রামে এখনও এটি ক্ষতের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
দূর্বা ঘাস:
দূর্বা ঘাসের বৈজ্ঞানিক নাম: Cynodon dactylon. এটি একটি ঔষধি উদ্ভিদ। প্রাচীনকাল থেকে কোনও স্থান কেটে গেলে রক্ত বন্ধ করতে দূর্বা ঘাস ব্যবহার করা হয়। কয়েকটি দূর্বা ঘাস হাতের তালুতে পিষে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। কাটা স্থান জোড়া লাগে এবং শুকিয়ে যায়। তবে দূর্বার শিকড় ব্যবহার করলে বেশী উপকার পাওয়া যায়।
চাপ প্রয়োগ করুন:
একটা পরিষ্কার কাপড় বা গজ কাপড় দিয়ে কাটা স্থানটি চেপে ধরে রাখুন। টানা ২০ থেকে ৩০ মিনিট চাপ দিয়ে ধরে রাখলে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তপাত বন্ধ করে দেবে। তারপরও যদি রক্ত পড়া বন্ধ না হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বরফ:
কাঁটা স্থানে বরফ দেওয়া, রক্ত পাত বন্ধ করার জন্য একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া উপায়। কেটে যাওয়া স্থানে বরফের টুকরো চেপে ধরে রাখুন। কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পাবেন রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি এটি ফোলাভাব কমাতেও সহায়তা করে।
টি ব্যাগ:
রক্তপাত বন্ধ করার একটি জনপ্রিয় প্রতিকার হল কাটা স্থানে টি ব্যাগ প্রয়োগ করা। কারণ চায়ে থাকা ট্যানিন রক্ত জমাট বাঁধাতে সাহায্য করে। হঠাৎ করে হাত বা পা কেটে গেলে সেই জায়গায় ব্যবহৃত টি ব্যাগ অথবা নতুন টি ব্যাগ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে।
রসুন:
রসুনে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্যে রয়েছে। অর্থাৎ এটি তাৎক্ষণিকভাবে রক্তপাত বন্ধ করতে, ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। আসলে, রসুন সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধকেও বাড়িয়ে তোলে।
অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরার বেদনানাশক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্ষত নিরাময় করে। কারণ অ্যালোভেরা জেলটিতে ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা ব্যথা এবং জ্বলন হ্রাস করতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরার পাতা কেটে জেল বের করুন। ক্ষত স্থানে জেল লাগিয়ে রাখুন। এতে রক্তপাত বন্ধ হবে এবং কষ্ট স্থানে ইনফেকশন হওয়ার ভয় কম থাকবে।
কাঁচা হলুদ:
কাঁচা হলুদ দিয়ে খুব সহজে রক্ত পাত বন্ধ করা যায়। হলুদ হল প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। কাটা স্থানে কিছু পরিমাণ হলুদ লাগিয়ে নিন। দেখবেন রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া তুলসী পাতা পিষে লাগলেও রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
ধাতব বস্তু, নোংরা বস্তু কিংবা কাঁচে কেটে ইত্যাদি থেকে ক্ষত তৈরি হলে বা কেটে গেলে ইনজেকশন নিতে হতে পারে। নোংরা বস্তু দিয়ে কাটলে দেরি না করে অনতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।