এই গরমে কেন খাবেন তরমুজ? তরমুজ কি রাতে খাওয়া যায়?
তরমুজের অহংকার এর রক্তলাল দানা বা রসের ভিতরে বিদ্যমান লাইকোপেন। আপনি ওজন হ্রাস করতে চাইলে বা গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির জন্য তরমুজকে আপনার স্নরণ করতেই হবে। কিন্তু তরমুজের বিস্ময়কর উপকারীতার পাশাপাশি আমাদের আজকের পোস্টের আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হলো তরমুজ রাতে খাওয়া নিরাপদ কিনা?
হাট-বাজার থেকে শহরের অলি গলি ফুটপাথ সর্বত্র এখন তরমুজের বেচাকেনা। লাল টুকটুকে রসালো এ ফলটি এই গরমে আপনাকে খেতেই হবে কারণ এটি আপনাকে হিট স্ট্রোক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাহায্য করবে। ফলটি হার্ট কেয়ার, স্বাস্থ্যকর কিডনি এবং রক্তচাপকেও স্বাভাবিক করতে সহায়তা করে।
ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ পদার্থ সবই থাকে তরমুজে। এতে আছে পটাশিয়াম ও লাইকোপিনের মতো শক্তিশালী সব খনিজ উপাদান।
বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদেরকে তরুমুজ খাওয়ার জন্য বিশেষভাবে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কারণ এতে রয়েছে অনেকে পানি। যা গর্ভাবস্থায় ফোলা ভাব ও বিভিন্ন অসুস্থতা থেকে মুক্তি দেয়। এমনকি তরমুজের বীজেও আছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা।
তরমুজ (ইংরেজি: Watermelon) বৈজ্ঞানিক নাম (Citrullus lanatus), একটি গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফল। এতে প্রচুর পরিমাণ জল(৯২% )থাকে। পরিবার Cucurbitaceae .
হৃদরোগীদের জন্য এটি বেশ উপকারী। টাইফয়েড রোগীরা যদি আধাপাকা তরমুজের রস ২ চা চামচ প্রতিদিন খায় তাহলে উপকার পাবে।
কেন খাবেন তরমুজ বা তরমুজের স্বাস্থ্যসুবিধা:
হিট স্ট্রোক ও পানিশুন্যতা থেকে মুক্তি দেয়:
তরমুজে প্রচুর পরিমানে পানি (৯২%) থাকে। প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। তাই এই গরমে তরমুজ খেলে শরীরের পানিশুন্যতা দূর হয় এবং শরীর সুস্থ্য ও সতেজ থাকে, হিটস্ট্রোকে থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ওজন কমায়:
কারণ একটি তরমুজের ওজনের ৯০ শতাংশ জল হল, আপনি যদি ওজন হ্রাস করার চেষ্টা করছেন তবে এটি খাওয়া সেরা ফলগুলির মধ্যে একটি। ১০০-গ্রাম পরিবেশনায় কেবল ৩০ ক্যালোরি থাকে। এটি আর্জিনাইন নামক অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা দ্রুত ফ্যাট পোড়াতে সহায়তা করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো :
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। তরমুজ যখন পরিমিতভাবে খাওয়া হয় তবে এটি কেবল নিরাপদই নয় তবে গর্ভবতী মহিলা এবং তার শিশুর জন্যও খুব দরকারী।
পুষ্টি সফল গর্ভাবস্থার একটি অপরিহার্য অঙ্গ – গর্ভবতী মহিলারা তাদের নিজের জন্য এবং শিশুর জন্য কী খাচ্ছেন তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত। ফল সবসময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সুপারিশ করা হয় কারণ তারা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনন্য সুবিধা নিয়ে আসে। তরমুজ কেবল নিরাপদই নয় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য চরম উপকারী।
গর্ভবতী মহিলারা বিশেষত গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বমি বমি ভাব থাকে এবং অনেকে বার বার বমি করে থাকেন। যদিও এটিকে সকালের অসুস্থতা বলা হয়, এই সমস্যা দিনের যে কোনও সময় ঘটতে পারে। সকালে এক গ্লাস তরমুজের রস এই ব্যাধি মোকাবেলায় খুব কার্যকর। সকালের অসুস্থতা থেকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি সকালে এক গ্লাস তরমুজের রস সতেজ করে এবং শক্তি যোগায়।
হার্ট ভালো রাখে:
আমরা স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও জীবনধারার মাধ্যমে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারি। তরমুজের বেশ কয়েকটি পুষ্টিউপাদান রয়েছে যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তার মধ্যে লাইকোপেন অন্যতম। গবেষণায় দেখা যায় যে, লাইকোপেন কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। তরমুজে পটাশিয়াম আছে, এটিও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
ক্যান্সার রোধ করে:
তরমুজে বিদ্যমান লাইকোপেন এবং অন্যান্য প্লান্ট কম্পাউন্ড ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। এই ফলটি নিয়মিত খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে:
তরমুজে থাকা পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
চোখ ভালো রাখতে:
তরমুজে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড। প্লান্ট কম্পাউন্ডস ক্যারোটিনয়েড অন্তর্ভুক্ত করে- আলফা ক্যারোটিন এবং বিটা ক্যারোটিন, যেটা আমাদের শরীর ভিটামিন “এ” হিসাবে গ্রহণ করে। তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে চোখ ভালো থাকে। চোখের নানারকম সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তরমুজ প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা হতে পারে বলে জানিয়েছেন এক গবেষক। এর কারণ জনপ্রিয় গ্রীষ্মের ফল সিট্রুলাইন নামক অ্যামিনো অ্যাসিডে সবথেকে বেশি সমৃদ্ধ, যা ভায়াগ্রা এবং অন্যান্য ওষুধের মতো যৌনাঙ্গে রক্ত সঞ্চালিত করে ও রক্তনালীকে উদ্দীপিত করে যার ফলে ইরেক্টাইল ডিসফাঙ্কশনের মতো সমস্যা দূর হয়।
তরমুজ কি রাতে খাওয়া যায়?
সঠিক সময়ে ও পরিমানে তরমুজ না খেলে ঘটতে পারে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা। তরমুজ রাতে না খাওয়াই ভালো। সন্ধ্যা ৭ টার পর তরমুজ কেনো অন্য যেকোনো ফল না খাওয়াই ভালো।
রাতের বেলা তরমুজ খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক এর পক্ষে কিছু পরীক্ষালব্ধ ফলাফল তো রয়েছে। তবে আয়ুর্বেদের মতে, রাতে তরমুজ খেলে খিটখিটে আন্ত্রিক সিন্ড্রোম/পেটের মধ্যে অস্বস্থি এবং অন্যান্য হজমে সমস্যা হতে পারে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বাথরুম সেরে আমরা ফ্রেশ হয়ে সকালের খাবার খেয়ে থাকি। এই সময় আমাদের হজমশক্তি সর্বাধিক সক্রিয় থাকে। এর পর ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং সন্ধ্যার পর থেকে শরীরের হজমব্যবস্থা কমে যায়। এজন্যই ডিনারে হালকা খাবার রাখতে বলা হয়। তরমুজে অনেক পানি এবং প্রাকৃতিক অ্যাসিড থাকে, যা হজমের ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণ হতে পারে।
তরমুজে অনেক প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে। যদিও শরীরের জন্য এটি ভালো, তবে রাতে মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। এতে ওজন বাড়তে পারে।
তরমুজে ৯২ শতাংশ পর্যন্ত পানি থাকে। তাই রাতে তরমুজ খেলে, বারবার টয়লেটে যেতে হতে পারে আপনাকে। এ ছাড়াও পেটে ফোলা ভাব হতে পারে।
বিরক্তিকর ঘুম কেউ চাইনা। রাতে তরমুজ খেলে এবং উপরোক্ত সমস্যাগুলো দেখা দিলে রাতে আপনি ঠিকমতো ঘুমাতে পারবেন না।
তাহলে তরমুজ খাবেন কখন?
দিনের যেকোনো সময় আপনি তরমুজ খেতে পারেন। তবে একসঙ্গে বেশি না খেয়ে বরং অল্প অল্প করে কয়েকবার কয়েক টুকরো তরমুজ খাওয়া ভালো।সবচেয়ে ভালো হয় সকালের ব্রেকফাস্টে/নাস্তায় যদি আপনি তরমুজ খেতে পারেন। তাহলে শরীর অ্যানার্জিও পাবে, আর আপনিও থাকবেন ফুরফুরে।
সন্দেহ নেই যে, তরমুজ আপনার স্বাস্থ্যকর ফলগুলির মধ্যে একটি এবং এমন লোক পাওয়া কঠিন যিনি তরমুজ খেতে পছন্দ করে না। যাইহোক, সর্বাধিক সুবিধা অর্জনের জন্য, এটি দিনের বেলা খাওয়া ভালো। প্রকৃতপক্ষে, আপনার প্রাতঃরাশের জন্য এটি সেরা জিনিসগুলির মধ্যে একটি হতে পারে।
ফলটি খাওয়ার পরে কমপক্ষে ৩০-৪৫ মিনিটের জন্য পানি বা জল পান করা এড়িয়ে চলুন।
সতর্কতাঃ
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত পরিমানে তরমুজ খাবেন না।
সবসময় সদ্য কাটা তরমুজ খাবেন। তরমুজ কেটে বেশিক্ষণ রেখে দিলে সেটা বুঝে খাবেন। কারণ তরমুজ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে তরমুজে বিদ্যমান চিনি উচ্চ মাত্রায় রক্তে গ্লুকোজ ধারণ করে এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
তরমুজের মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যগুলির ফলে আপনার অবস্থা বুঝে খাবেন।
সূত্রঃ
healthline, indiatimes.com