কালমেঘ পাতা জ্বর নিরাময় করে, অ্যালার্জি কমায় ও কৃমি দূর করতে সাহায্য করে।

কালমেঘ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। দীর্ঘদিন ধরে এটি চীন ও ভারতীয় আয়ুর্বেদিক চিকিত্‍সায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। Lamiales বর্গের অন্তর্ভুক্ত Acanthaceae পরিবারের এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Andrographis paniculata।

ইংরেজিতে green chiretta হিসাবে বেশি পরিচিত। এটি সবুজ চিরতা নামেও পরিচিত।

সাধারণ জ্বরের প্রাকৃতিক প্রতিকারে কালমেঘ পাতার উপকারিতা অনেক।

এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, প্রদাহ কমাতে ও পেটের সমস্যার জন্য কালমেঘের পাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই পাতার স্বাদ তিক্ত। কালমেঘ গাছের প্রত্যেকটি অংশই খুব তিক্ত হয় যার কারণে কালমেঘকে তিক্ততার রাজাও বলা হয়। এটি আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক বিভিন্ন ধরণের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

কালমেঘের পাতার উপকারিতা

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, কালমেঘ পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী-

লিভারের সমস্যা নিরাময়ে:

যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য অবর্থ ওষুধ কালমেঘ পাতার রস। এই পাতা লিভারের কোষের ক্ষয়ক্ষতি রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

এটি দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি ভাইরাল সংক্রমণের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লিভার সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যার সমাধানে প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে এটি।

জ্বর, সর্দি, কাশি নিরাময়ে:

কালমেঘ পাতা জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথা, গলা বসে যাওয়া, টন্সিলাইটিস ইত্যাদি ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কালমেঘ পাতা ভালো করে ধুয়ে হালকা গরম পানি মিশিয়ে ছেকে নিতে হবে।

এই কালমেঘ পাতার রস যেকোনো রকম ঠান্ডা লাগা জনিত রোগ খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে এর স্বাদ অতন্ত্য তিত্‍কুতে, তাই রস খাওয়ার সাথে সাথে এক চামচ মধু খেয়ে নিলে ভালো।

কৃমি দূর করতে:

কৃমি সাধারণত দূষিত পানি বা খাবার থেকে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। কালমেঘ পাতা বেটে ছোট্ট মটরশুঁটির দানার মত বল বানিয়ে নিন। এবার রোদে শুকিয়ে একটি পাত্রে রেখে দিন।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পানির সঙ্গে ট্যাবলেটের মত গিলে খেলেও কিন্তু খুব উপকার পাওয়া যাবে। এটা তেতো রস খাওয়ার থেকে অনেক বেশী সহজ।

ডায়াবেটিস নিরাময়ে:

কালমেঘ পাতা ডায়াবেটিস এর অব্যর্থ ওষুধ। এই পাতা ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে।

এক্ষেত্রে কালমেঘ পাতার বড়ি করে খেতে পারেন। টাইপ-১ ডায়াবেটিস বা টাইপ-২ ডায়াবেটিস যে কোন ধরণের ডায়াবেটিস রোগে কালমেঘ পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধক:

শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির কারণে কালমেঘ ক্যান্সার নিরাময়ের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উপকারী।

এর ঔষধি গুন আমাদের শরীরে ক্যান্সার এর কোষগুলিকে সক্রিয় হতে দেয় না বা ক্যান্সারের কোষগুলিকে বাড়তে দেয় না। এটি ক্যান্সার রোগীদের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

রক্তশূন্যতা দূর করে:

কালমেঘ পাতা সেবনে রক্তশূন্যতা কমে যায়। এমনকি ঋতুস্রাব বা মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তাও কমাতে পারে।

কোথাও কেটে গেলে সে কাটা স্থানে কালমেঘ পাতার রস লাগিয়ে দিলে দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়। অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরণ, নাক দিয়ে রক্তপড়া এসবও কালমেঘ পাতা বন্ধ করতে পারে।

অ্যালার্জি নিরাময়ে:

অ্যালার্জির কারণে শরীর চুলকায়, ফুলে লাল হয়ে যায়, ত্বক থাকা থাকা হয়ে ওঠে। তাদের জন্য কালমেঘ পাতা দারুণ কার্যকরী।

কালমেঘ পাতা রস করে বা পেস্ট করে ছোট ছোট বল করে রোদে শুকিয়ে খেতে হবে।

অনেকেরই মারাত্মক অ্যালার্জির সমস্যা থাকে। এছাড়াও ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও নিয়ন্ত্রণ করে।

সংক্রামক অসুখ-বিসুখে:

অনেকেরই বছরভর ঠাণ্ডা লাগার ধাত থাকে। গরমে ঘাম জমে সর্দি লেগে যায়। এই সমস্যার সমাধানেও কালমেঘ পাতার প্রচুর উপকারিতা রয়েছে।

কালমেঘ পাতা নানা রকম সংক্রামক অসুখ-বিসুখের হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। কারণ কালমেঘ পাতায় রয়েছে এমন কিছু উপাদান, যা সাধারণ সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করে।

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এটি। সেই সাথে কাটা-ছেঁড়া ও ক্ষতস্থান দ্রুত সারাতে সাহায্য করে এই উপাদান।

আর্থ্রাইটিস নিরাময়ে:

আর্থ্রাইটিসের ব্যথায় যাঁরা কাবু, তাঁদের ক্ষেত্রে কালমেঘ পাতার রস উপকারী হতে পারে। এটি একটি অটোইমিউন ডিসঅর্ডার। এটি শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট অর্থাৎ গাঁটে গাঁটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

কালমেঘের অ্যান্ড্রোগ্রাফোলাইডে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যানালজেসিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর ফলে জয়েন্টগুলির ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।

ত্বকের সমস্যা দূর করে:

কালমেঘ ত্বকের রোগ নিরাময়ে উপকারী। এটিতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি রক্ত পরিশোধনকারী ওষুধের মতো করে।

একই সঙ্গে কালমেঘ ত্বকের ফোঁড়া এবং চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর। এটি রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি সরিয়ে দেয় এবং ত্বকের যেকোনো রোগ সারাতে সহায়তা করে।

রেফারেন্স: