কাঁঠাল শক্তির উৎস, হার্ট, চোখ ভালো রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

আপনি কি পরিশ্রম করতে করতে ক্লান্ত? আপনি কি দ্রুত হারানো শক্তি ফিরে পেতে চান? তাহলে হাতে তুলে নিন কয়েক রোয়া পাকা কাঁঠাল।

এটি শুধু শক্তির যোগান নয়, দেহের ভিতরের ফাংশন উন্নতির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

গ্রীষ্মকাল মানেই ফলের মৌসুম। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গি ইত্যাদি রসালো ফল সহজলভ্য এই মৌসুমে। একেক ফলের রয়েছে একেক পুষ্টিগুণ।

প্রতিটি মৌসুমি ফলই শরীরের নানা রকম ভিটামিন ও খনিজের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে।

Nature is the ultimate provider of health solutions. প্রকৃতি আরোগ্যকর্তা হিসাবে যে সমস্ত miracle আমাদের উপহার দিয়েছে- সুস্বাদু, মিষ্টি ও মোহনীয় ঘ্রাণের কাঁঠাল তাদের মধ্যে একটি।

কাঁঠাল বিভিন্ন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা যেমনঃ ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ওজন কমানো, রক্তচাপ, নার্ভ সিস্টেম সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিরাময়ে কাজ করে। উপরন্তু এটি ত্বককে সুন্দর ও লাবণ্যময় করে তোলে।

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। কাঁঠালের প্রতিটি রোঁয়া যেন অমৃতের সমান। সাধারণত কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসাবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসাবে খেয়ে থাকি। কাঁঠাল শুধু সুস্বাদু, রসালো ও সুমিষ্ট ফলই নয়, এর অনেক পুষ্টি উপাদানও রয়েছে।

কাঁঠালের ইংরেজি নাম Jackfruit যা jack ট্রি নামেও পরিচিত। কাঁঠাল এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus.

কাঁঠাল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষত বাংলাদেশ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে কাঁঠালের উৎপত্তি স্থান হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়, এবং পাবর্ত্য এলাকায় কাঁঠালের চাষ বেশী।
বাংলাদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ ভারত, বিহার, মায়ানমার, মালয়, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপকসংখ্যায় কাঁঠালের চাষ করা হয়।

তবে ব্রাজিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জামাইকা প্রভৃতি দেশে সীমিত আকারে কাঁঠাল জন্মায়। ২-৩ রোঁয়া কাঁঠাল আমাদের এক দিনের ভিটামিন “এ” এর চাহিদা পূরণ করে।

ডায়াবেটিস রোগী কি পাকা কাঁঠাল খেতে পারবেন?

হাঁ, ডায়াবেটিস রোগী পরিমাণমতো পাকা কাঁঠাল খেতে পারে। কাঁঠালের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা রক্তে শর্করার পরিচালনায় সহায়তা করতে পারে। কাঁঠালের একটি মধ্যবর্তী জিআই (GI) স্কোর রয়েছে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রাপ্তবয়স্করা যারা অধিক আঁশ সমৃদ্ধ পাকা কাঁঠাল গ্রহণ করেছেন তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।

পুষ্টিগুণ:

কাঁঠালে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। উল্লেখযোগ্য কিছু উপাদান নিচে দেওয়া হলো:

  • ক্যালরি:১৫৫
  • ফাইবার:৩ গ্রাম
  • প্রোটিন:৩ গ্রাম
  • ভিটামিন “এ”:১০%(RDI)
  • ভিটামিন “সি”:১৮%(RDI)
  • ম্যাগলেসিয়াম:১৫%(RDI)
  • পটাশিয়াম:১৪%(RDI)
  • কপার:১৫%(RDI)
  • ম্যাঙ্গানিজ:১৬%(RDI)

কাঁঠালের উপকারিতা

কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারি। নিচে কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

শক্তির উৎস কাঁঠাল:

কাঁঠালের ৪-৫ রোঁয়া থেকে ১০০ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া শর্করা, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ রয়েছে, যা আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি বাড়ায়।

একই সঙ্গে কাঁঠালে কোন কোলেস্টেরোল জাতীয় উপাদান নেই। কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ নিতান্ত কম, ফলে ওজন বৃদ্ধির আশংকা কম।

এটি আঁশ বা ফাইবার যুক্ত তাই এটা কোষ্ঠকাঠিণ্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

চোখ ভাল রাখে:

কাঁঠালে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন “এ”, যা আমাদের চোখের জন্য অপরিহার্য একটি পুষ্টি উপাদান।

আপনারা হয়ত অনেকেই জানেন না যে, কাঁঠাল খাওয়ার অভ্যাসে দৃষ্টিশক্তি ভালো হয় এবং এটি আমাদের ত্বকের বলিরেখা বা ভাঁজ প্রতিহত করতে সক্ষম।

যেহেতু, রসালো ফল কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, তাই এটি চোখের রেটিনা বা অক্ষিপটের ক্ষতি প্রতিহত করে থাকে।

হাড় মজবুত ও শক্ত করে:

আমরা জানি কাঁঠালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। এটি হাড়ের গঠন সুদৃঢ় ও মজবুত করে।

এটি অস্টেওপরোসিস (osteoporosis) নামে হাড়ের ক্ষতিকর রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রনে:

রসালো ফল কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।

স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে:

পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস কাঁঠাল। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। যা আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

এছাড়া কাঁঠালে থাকা বিপুল পরিমাণে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

গর্ভবতী মায়ের খাবার:

চিকিৎসা শাস্ত্র মতে, প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাঁকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর প্রায় সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়।

গর্ভবতী মহিলারা নিয়মিত প্রতিদিন নিদিষ্ট পরিমাণে কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভস্থসন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়।

দুগ্ধদানকারী মা যদি পাঁকা কাঁঠাল খায় তাহলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

কাঁঠালের অন্যতম উপযোগিতা হল ভিটামিন “সি”। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন “সি” তৈরি হয় না।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে ভিটামিন “সি”।

পাশাপাশি সর্দি-কাশি,মতো সাধারণ নানা রোগকে প্রতিহত করে এই রসালো কাঁঠাল।

রক্তস্বল্পতা দূর করে:

কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “এ”, “সি”,”ই”, “কে”, ফলেট, এবং ভিটামিন বি-৬। এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধরণের মিনারেল সমৃদ্ধ উপাদান যেমনঃ কপার, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম যা রক্ত তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

তাই এটি রক্তস্বল্পতা রোধে দারুণ কাজ করে থাকে। তাই যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্যে এই রসালো ফল কাঁঠাল উপকারি হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

কাঁঠালের প্রতিটি রোয়া যেমনঃ অমৃত, পুষ্টির ভান্ডার তেমনি এর ভিতরকার বীজও পুষ্টিকর সবজি হিসাবে সমাদৃত।

তাই যারা কাঁঠাল পছন্দ করেন না বা এতদিন যারা কাঁঠাল খেয়ে দেখেননি তারা বড় ভুলই করলেন।

কাঁঠাল অনেক কারণে আমাদের জন্য খুবই ভাল। তাই কাঁঠালের মৌসুমে খাদ্য তালিকায় কাঁঠাল থাকা উচিত। ভালো খাবার খান ভালো থাকুন। -এটাই কাম্য।

সতর্কতা

সবকিছু পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।